Which animals sleep the least?: মানুষসহ প্রায় সমস্ত প্রাণীর জীবনে ঘুম একটি অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু প্রকৃতির অদ্ভুত বিধানে, এমন কিছু প্রাণী রয়েছে যারা খুব কম ঘুমায় বা প্রায় ঘুমায়ই না! এই অসাধারণ প্রাণীরা তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রামে এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অভিনব নিদ্রা পদ্ধতি বিকশিত করেছে। এই আর্টিকেলে আমরা এমন ৭টি বিস্ময়কর প্রাণীর সম্পর্কে জানব, যাদের নিদ্রাহীন জীবন আমাদের চমকিত করে। আসুন জেনে নেই কীভাবে এই প্রাণীরা বিনা ঘুমে বা খুব অল্প ঘুমে তাদের জীবনযাপন করে।
ঘুম না করার বিস্ময়কর বিজ্ঞান
ঘুম হল প্রাণীদের জীবনের একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ। বেশিরভাগ প্রাণীর শরীরে স্নায়ুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার, স্মৃতি সংগঠন এবং শারীরিক পুনর্নবীকরণের জন্য ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু কিছু প্রাণী এমন অভিযোজন বিকশিত করেছে যা তাদেরকে খুব কম ঘুমে বা একেবারেই না ঘুমিয়ে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এটি হয় বাস্তুসংস্থানের চাপ, শিকারি থেকে বাঁচার প্রয়োজনীয়তা, অথবা তাদের বিশেষ শারীরিক গঠনের কারণে।
প্রাণীদের ঘুম না করার বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। কিছু প্রাণী একসাথে মস্তিষ্কের অর্ধেক অংশ ঘুমিয়ে অন্য অর্ধেক সজাগ রাখে, আবার কিছু প্রাণী মাইক্রো-নিদ্রা বা অতি সংক্ষিপ্ত ঘুমের মাধ্যমে শক্তি সংরক্ষণ করে। এই অদ্ভুত নিদ্রা পদ্ধতিগুলি প্রাণীদেরকে সার্বক্ষণিক সতর্কতা এবং তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
নিদ্রাহীন জীবনের অভিযোজন
বিজ্ঞানীরা বলেন, এসব প্রাণীর এই অভিযোজন মূলত বেঁচে থাকার সংগ্রামের ফলাফল। হাজার হাজার বছর ধরে, শিকারি, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং খাদ্যের উপলব্ধতার মতো বিভিন্ন চাপ থেকে বাঁচতে তারা এই অদ্ভুত নিদ্রা পদ্ধতি বিকশিত করেছে।
ডলফিন: মস্তিষ্কের অর্ধেক ঘুমিয়ে অর্ধেক সজাগ
ডলফিন হল সেই অদ্ভুত সামুদ্রিক প্রাণী যারা কখনোই সম্পূর্ণরূপে ঘুমায় না। এরা “unihemispheric slow-wave sleep” নামক একটি অসাধারণ পদ্ধতি অবলম্বন করে, যেখানে মস্তিষ্কের একটি অর্ধাংশ বিশ্রাম করে অন্য অর্ধাংশ সক্রিয় থাকে। এই অসাধারণ অভিযোজন তাদেরকে সমুদ্রে সার্বক্ষণিক সাঁতার কাটতে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য পানির উপরে উঠতে সাহায্য করে।
ডলফিনের এই ঘুমের পদ্ধতি সমুদ্রে বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ:
-
সার্বক্ষণিক গতিশীলতা শিকারিদের এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে
-
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে
-
নিয়মিত শ্বাস নেওয়ার জন্য পানির উপরে উঠতে হয়
ডলফিনরা প্রতি ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা এই প্রক্রিয়ায় বিশ্রাম নেয়, তবে কখনোই সম্পূর্ণ অচেতন হয় না। এটি তাদের মস্তিষ্কের পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করে অথচ সার্বক্ষণিক সতর্কতা বজায় রাখে। এই অদ্ভুত সামর্থ্য তাদেরকে খোলা সমুদ্রে সবচেয়ে সফল প্রাণীদের একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জিরাফ: দিনে মাত্র ৩০ মিনিট ঘুমের চ্যাম্পিয়ন
পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা স্তন্যপায়ী প্রাণী জিরাফ, সবচেয়ে কম ঘুমের জন্যও বিখ্যাত। গবেষণা অনুযায়ী, জিরাফ প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট ঘুমায়, তাও কয়েক মিনিটের ছোট ঘুমের মাধ্যমে। ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ভাবতেন যে জিরাফ মোটেই ঘুমায় না।
জিরাফের এই স্বল্প নিদ্রার কারণগুলি হল:
-
তাদের লম্বা গলার কারণে ঘুমানো কঠিন
-
শুয়ে পড়লে পুনরায় উঠতে অনেক সময় লাগে, যা তাদেরকে শিকারিদের (যেমন সিংহ এবং কুমির) সামনে অসহায় করে তোলে
-
দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তারা ছোট ছোট ঝিমুনি নেয়
-
কখনো কখনো তারা তাদের লম্বা গলা বেঁকিয়ে পিঠের উপর মাথা রেখে ঘুমায়
এই বিশেষ নিদ্রা পদ্ধতি তাদেরকে অ্যাফ্রিকার গ্রাসল্যান্ডে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। তাদের লম্বা দেহ এবং গলার কারণে, তারা অনেক দূর থেকে শিকারিদের দেখতে পায়, কিন্তু একই কারণে শুয়ে থাকা অবস্থায় তারা অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়ে। তাই, প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তারা এই অল্প ঘুমের অভিযোজন বিকশিত করেছে।
বুলফ্রগ: মাসের পর মাস ঘুম ছাড়াই
বুলফ্রগ সেই সব প্রাণীদের মধ্যে একটি যারা মাসের পর মাস ঘুম ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। যদিও তারা চোখ বন্ধ করে এবং বিশ্রাম নেয়, তবে এই সময়ে তারা সতর্ক থাকে। গবেষণা অনুযায়ী, এমনকি বিশ্রাম অবস্থায়ও, এই বড় উভচর প্রাণীরা যথেষ্ট সজাগ থাকে যাতে ব্যথাদায়ক উদ্দীপনায় প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের পরিবর্তন দেখাতে পারে।
বুলফ্রগের এই অভিযোজনের বিশেষত্ব:
-
শক্তি সংরক্ষণের জন্য বিশ্রাম নেয় কিন্তু সম্পূর্ণ অচেতন হয় না
-
তারা কেবল শীতঘুম অবস্থায় ‘গভীর ঘুম’-এ যায়, যা হিমায়িত শীতকাল থেকে বাঁচার জন্য
-
এই অভিযোজন তাদেরকে শিকারি এবং আকস্মিক পরিবেশগত পরিবর্তন থেকে সর্বদা সতর্ক থাকতে সাহায্য করে
বুলফ্রগের এই স্বল্প ঘুমের প্রবণতা তাদের জলাভূমি পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে শিকারি এবং পরিবেশগত পরিবর্তন অনিয়মিত এবং আকস্মিক হতে পারে। এই অদ্ভুত সামর্থ্য তাদেরকে এই পরিবেশে সাফল্যের সাথে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
আলপাইন সুইফট: আকাশে উড়ে মাইক্রো-স্লিপের বিশেষজ্ঞ
আলপাইন সুইফট হল সেই অসাধারণ পাখি যারা ৬ মাস পর্যন্ত অবিরাম আকাশে উড়তে পারে। সুইজারল্যান্ড থেকে পশ্চিম আফ্রিকা পর্যন্ত তাদের যাত্রায়, তারা ২০০ দিন ধরে (প্রায় ৬ মাস) নিরবচ্ছিন্নভাবে উড়তে থাকে, কখনো গাছের মাথায় বা জমিতে বিশ্রাম না নিয়ে।
আলপাইন সুইফটের ঘুমের অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য:
-
উড়ন্ত অবস্থায় ‘মাইক্রো-স্লিপ’ নেয়, যেখানে তারা ভাসমান অবস্থায় সংক্ষিপ্ত বিশ্রাম নেয়
-
গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন এই পাখিরা বেশি পাখা ঝাপটায় না, তখন ধীর হয়ে যায়
-
তাদের মস্তিষ্কের একটি অংশ বিশ্রাম নেয় অন্য অংশ সক্রিয় থাকে, ঠিক ডলফিনের মতো
এই অসাধারণ অভিযোজন তাদেরকে শিকারি এড়াতে, সতর্ক থাকতে এবং খাদ্য সন্ধানের সুযোগ সর্বাধিক করতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা সেন্সর ব্যবহার করে তাদের গতিবিধি ট্র্যাক করেছেন, যা নিশ্চিত করেছে যে তারা প্রায় অবিরাম গতিতে থাকতে পারে।
হাতি: দিনে মাত্র ২-৪ ঘণ্টা খণ্ডিত ঘুম
হাতি, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থলভাগের স্তন্যপায়ী প্রাণী, তাদের বিশাল আকারের তুলনায় খুব কম ঘুমের প্রয়োজন হয়। এরা প্রতিদিন মাত্র ২-৪ ঘণ্টা খণ্ডিত ঘুম ঘুমায়। ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত না ঘুমিয়ে, বিশেষ করে খাদ্যের সন্ধানে যাত্রাকালে বা শিকারি থেকে বাঁচার সময়, তারা জেগে থাকতে পারে।
হাতির নিদ্রা প্যাটার্নের মূল বৈশিষ্ট্য:
-
দিনের বেশিরভাগ সময় তারা খাদ্য সংগ্রহ ও খাওয়ায় ব্যয় করে। প্রতিদিন ২০০-৬০০ পাউন্ড খাবার খেতে হয়
-
বন্য হাতিরা সাধারণত দাঁড়িয়ে ঘুমায়, গাছ বা উইয়ের টিবির উপর ঝুঁকে
-
যখন তারা পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমায়, তখন ৩০ মিনিটের বেশি নয়, যাতে তাদের নিজের ওজন অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিকে চেপে না ফেলে
বন্য হাতির এই খণ্ডিত ঘুমের প্যাটার্ন তাদেরকে অপ্রত্যাশিত পরিবেশে সতর্ক থাকতে সাহায্য করে এবং নিরাপদে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ায়। এছাড়া, তাদের বিশাল শরীর এবং উচ্চ খাদ্য প্রয়োজনের কারণে, তারা দিনের বেশিরভাগ সময় খাদ্য সন্ধান ও খাওয়ায় ব্যয় করে, যা তাদের স্বল্প ঘুমের অন্যতম কারণ।
শার্ক: চলমান অবস্থায় অল্প বিশ্রাম
একটি সাধারণ মিথ রয়েছে যে শার্ক কখনোই ঘুমায় না, কারণ তাদের শ্বাস নিতে সাঁতার কাটতে হয়। বাস্তবতা অবশ্য আরও জটিল। শার্কের নিদ্রা সম্পর্কিত কিছু মূল তথ্য হল:
-
কিছু প্রজাতি, যেমন গ্রেট হোয়াইট শার্ক, ‘র্যাম ভেন্টিলেশন’ নামক একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে
-
এই প্রক্রিয়া তাদেরকে সাঁতার কাটার সময় ফুলকার উপর পানি প্রবাহিত করতে এবং অক্সিজেন গ্রহণ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে
-
অন্যদিকে, নার্স শার্কের মতো তলদেশে বাস করা প্রজাতিগুলি ‘বাকাল পাম্পিং’ ব্যবহার করে, যা তাদেরকে স্থির থাকা অবস্থায় ফুলকার উপর পানি ঠেলে দিতে সক্ষম করে
তাহলে শার্ক কি ঘুমায়? কিছু প্রজাতির জন্য উত্তরটি হাঁ, কিন্তু তারা সক্রিয় এবং নিষ্ক্রিয় বিশ্রামের সময়ের মধ্যে পর্যায়ক্রমে যায়। ১৯৬০ সালে, বিজ্ঞানীরা একটি ফিশট্যাঙ্কে শার্কের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছিলেন যে, তারা ট্যাঙ্কের তলদেশে দীর্ঘ সময় ধরে অনড় হয়ে থাকতে পারে, যা সম্ভবত একধরনের নিদ্রাবস্থা।
ওয়ালরাস: ৮৪ ঘণ্টা ধরে জেগে থাকার চ্যাম্পিয়ন
ওয়ালরাস এমন একটি প্রাণী যারা ঘুমের ক্ষেত্রে প্রতিভাশালী। তারা প্রায় যেকোনো জায়গায় এবং যেকোনো অবস্থায় ঘুমাতে পারে – পানিতে ভেসে, সমুদ্রের তলদেশে, দাঁড়িয়ে, হেলান দিয়ে বা জমিতে শুয়ে। কিন্তু এই চর্বিবহুল, ঘুম-প্রেমী স্তন্যপায়ী প্রাণীরা দীর্ঘ সময় ধরে সম্পূর্ণ ঘুম ছাড়া থাকার ক্ষমতাও রাখে।
ওয়ালরাসের ঘুমের বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য:
-
তারা শরীরের নির্দিষ্ট অংশে বায়ু ভরে (‘ফ্যারিঞ্জিয়াল পাউচ’ নামক) পানিতে ভেসে ঘুমাতে পারে, যা তাদেরকে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করে
-
কখনো কখনো তারা পানিতে থাকার সময় তাদের দাঁত দিয়ে বরফের চাদর ধরে ঘুমায়
-
বিজ্ঞানীদের মতে, ওয়ালরাস ৮৪ ঘণ্টা ধরে অবিরাম সাঁতার কাটতে এবং জেগে থাকতে পারে
-
এই তীব্র নিরবচ্ছিন্ন কার্যকলাপের জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে তারা সম্ভবত যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেয়
ওয়ালরাসের এই অদ্ভুত ঘুমের প্যাটার্ন তাদেরকে আর্কটিক অঞ্চলের কঠিন পরিবেশে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী দীর্ঘ সময় জেগে থাকতে পারে বা গভীর ঘুমে যেতে পারে, যা তাদেরকে সবচেয়ে অভিযোজিত প্রাণীদের একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
নিদ্রাহীন জীবনের অন্যান্য চমকপ্রদ উদাহরণ
উপরের ৭টি প্রাণী ছাড়াও, আরও কিছু প্রাণী রয়েছে যারা অদ্ভুত নিদ্রা পদ্ধতি বিকশিত করেছে:
পিপড়া: পিপড়ারা দিনে অল্প অল্প করে ঘুমায়, যা মোট প্রায় ২৫০ মিনিট হয়। রানি পিপড়ারা সংক্ষিপ্ত ঝিমুনি নেয় এবং কর্মী পিপড়ারা উপনিবেশের অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে দীর্ঘ সময় জেগে থাকে।
গ্রেট ফ্রিগেটবার্ড: আলপাইন সুইফটের মতো, গ্রেট ফ্রিগেটবার্ড উড়ন্ত অবস্থায় ঘুমানোর ক্ষমতা রাখে। তারা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে উড়তে থাকে এবং মাঝপথে সংক্ষিপ্ত unihemispheric ঝিমুনি নেয়, যেখানে তাদের মস্তিষ্কের কেবল একটি অর্ধাংশ ঘুমায় অন্যটি জেগে থাকে।
জেলিফিশ: জেলিফিশের মস্তিষ্ক বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র না থাকায়, তারা আমাদের ধারণা অনুযায়ী ঘুমায় না। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে তারা রাতে স্পন্দন হার কমিয়ে বিশ্রাম-জাতীয় অবস্থায় যায়। বিশ্রামরত অবস্থায় তারা উদ্দীপনায় আরও ধীরে প্রতিক্রিয়া দেখায়, যা ঘুমের একটি প্রাথমিক রূপের ইঙ্গিত দেয়।
কেন কিছু প্রাণী কম ঘুমায়? বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ
প্রাণীদের এই অদ্ভুত নিদ্রা পদ্ধতি সহস্র বছরের বিবর্তনীয় অভিযোজনের ফলাফল। নিদ্রাহীন বা স্বল্প নিদ্রার মূল কারণগুলি হল:
শিকারি থেকে বাঁচা: জিরাফ, হাতি, ডলফিন ইত্যাদি প্রাণীদের স্বল্প নিদ্রা তাদেরকে শিকারিদের থেকে সতর্ক থাকতে সাহায্য করে। দীর্ঘক্ষণ গভীর ঘুমে যাওয়া মানেই শিকারির শিকারে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানো।
শারীরিক সীমাবদ্ধতা: কিছু প্রাণী, যেমন শার্ক, তাদের শারীরিক গঠনের কারণে অবিরাম গতিশীল থাকতে বাধ্য। কিছু শার্ক প্রজাতির শ্বাস নিতে সাঁতার কাটা প্রয়োজন, যা তাদের গভীর ঘুমে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
খাদ্য সংগ্রহের চাহিদা: হাতির মতো বিশাল প্রাণীদের বিশাল পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এই প্রাণীরা তাদের সময়ের বেশিরভাগ খাদ্য সন্ধান ও খাওয়ায় ব্যয় করে, যার ফলে ঘুমের জন্য কম সময় থাকে।
গতিশীলতার প্রয়োজন: আলপাইন সুইফট এবং গ্রেট ফ্রিগেটবার্ডের মতো কিছু পাখি দীর্ঘ অভিবাসন করে। তাদের এই যাত্রাপথে গভীর ঘুমের জন্য থামা সম্ভব নয়, তাই তারা উড়ন্ত অবস্থায় মাইক্রো-স্লিপ নেওয়ার ক্ষমতা বিকশিত করেছে।
মানবজাতি ও নিদ্রাহীন প্রাণীদের থেকে শিক্ষা
প্রাণীদের এই অদ্ভুত নিদ্রা পদ্ধতি থেকে মানুষ অনেক কিছু শিখতে পারে। বিশেষ করে, মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে বা দীর্ঘমেয়াদী জাগরণের প্রয়োজন হয় এমন কাজে, বিজ্ঞানীরা এই প্রাণীদের নিদ্রা পদ্ধতি থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন।
বিজ্ঞান ও গবেষণায় প্রভাব
-
নিদ্রাজনিত ব্যাধি নিয়ে গবেষণায় এই প্রাণীদের অধ্যয়ন সাহায্য করতে পারে
-
মহাকাশচারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ অভিযানে উপযুক্ত ঘুম পদ্ধতি বিকাশে সাহায্য করতে পারে
-
সামরিক বাহিনী এবং জরুরি পরিষেবাদি যেখানে দীর্ঘ সময় সতর্কতা প্রয়োজন, সেখানে এই জ্ঞান কাজে লাগতে পারে
প্রাণীদের এই অদ্ভুত অভিযোজন প্রকৃতির সবচেয়ে আশ্চর্যজনক সৃষ্টিগুলির মধ্যে একটি। যে প্রাণীরা সহস্র বছর ধরে বিবর্তিত হয়ে একটি অসাধারণ জীবন পদ্ধতি অর্জন করেছে, তাদের থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু রয়েছে।
প্রাণীজগতের এই নিদ্রাহীন বা স্বল্প নিদ্রার বিস্ময়কর অভিযোজন প্রকৃতির বিচিত্রতা ও সৃজনশীলতার একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। এই ৭টি প্রাণী – ডলফিন, জিরাফ, বুলফ্রগ, আলপাইন সুইফট, হাতি, শার্ক এবং ওয়ালরাস – তাদের অনন্য পরিবেশ এবং জীবনযাপনের চাহিদা মেটাতে বিশেষ নিদ্রা পদ্ধতি বিকশিত করেছে।
যখন আমরা মানুষেরা প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন অনুভব করি, তখন এই প্রাণীরা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মাত্র কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা ঘুমেই সন্তুষ্ট থাকে। এটি প্রকৃতির অদ্ভুত সামর্থ্য এবং বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ার শক্তি প্রমাণ করে।
এই অদ্ভুত প্রাণীদের জীবনযাপন পদ্ধতি অধ্যয়ন করে আমরা না শুধু প্রকৃতির বিষয়ে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি, বরং মানবজাতির নিজের সমস্যা সমাধানের জন্যও নতুন ধারণা পেতে পারি। মহাকাশ, সামরিক, মেডিকেল এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে যেখানে দীর্ঘ সময় জাগরণের প্রয়োজন হয়, সেখানে এই প্রাণীদের জীবনধারা থেকে মূল্যবান শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে।