এসির ঠান্ডায় লুকিয়ে আছে মৃত্যুর ছোঁয়া! জানুন কীভাবে বাঁচবেন

By
প্রকাশিত:

ভারতের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং অসহনীয় গরমে এয়ার কন্ডিশনার বা এসি ব্যবহার এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই আরামদায়ক শীতল বাতাসের পিছনে লুকিয়ে আছে অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি, যা আমরা প্রায়শই উপেক্ষা করি। আসুন জেনে নেই কীভাবে নিরাপদে এসি ব্যবহার করা যায় এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।

ভারতে এসি ব্যবহারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা:

ভারতীয় এয়ার কন্ডিশনার বাজার 2023 সালে 3.8 বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ছিল এবং 2028 সাল নাগাদ 8.2 বিলিয়ন মার্কিন ডলার পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই সময়কালে বাজারের বার্ষিক বৃদ্ধির হার (CAGR) 16.5% হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে ভারতে এসির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।

2022 সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতের শহরাঞ্চলে প্রায় 8% বাড়িতে এসি রয়েছে। এই সংখ্যা 2027 সাল নাগাদ 40% এ পৌঁছাতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসির চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

এসির অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রভাব:

দীর্ঘ সময় ধরে এসিতে থাকলে ত্বকের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ভারতীয় ডার্মাটোলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এসি ব্যবহারকারীদের মধ্যে 80% এরও বেশি লোক ত্বকের শুষ্কতা, খসখসে ভাব এবং চুলকানির সমস্যায় ভুগছেন।

ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিকেল রিসার্চের একটি অধ্যয়নে দেখা গেছে, এসির ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস শ্বাসনালীর শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে শুকিয়ে ফেলে, যা শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমার উপসর্গ বাড়িয়ে দেয়। এই গবেষণায় অংশ নেওয়া 65% অ্যাজমা রোগী জানিয়েছেন যে এসি ব্যবহারের পর তাদের লক্ষণগুলি বেড়ে গেছে।

ভারতীয় জলবায়ুর প্রভাব:

ভারতের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু এসির ক্ষতিকর প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ইন্ডিয়ান মেটিওরোলজিকাল ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে আপেক্ষিক আর্দ্রতা 70-80% পর্যন্ত পৌঁছায়। এই উচ্চ আর্দ্রতায় এসির শীতল বাতাস ত্বক থেকে দ্রুত আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়, যা ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে তোলে।

2023 সালে ভারতীয় পরিবেশ মন্ত্রণालয়ের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, শহরাঞ্চলে বায়ু দूষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এসির ফিল্টার দ্রুত ময়লা হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ঘরের ভিতরে ধূলিকণা ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

স্বাস্থ্য সমস্যা:

অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (AIIMS) এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত এসি ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাইনাস সংক্রমণের ঘটনা 30% বেশি। এসির ঠান্ডা বাতাস নাকের ভিতরের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়, যা সাইনাসের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।

ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় এসিযুক্ত পরিবেশে থাকলে চোখের শুষ্কতা ও জ্বালাপোড়া বেড়ে যায়। এই সমস্যা বিশেষ করে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা:

ভারতীয় চিকিৎসক সংস্থা (IMA) সুপারিশ করেছে যে প্রতি ঘণ্টায় অন্তত 10-15 মিনিট এসি বন্ধ রেখে ঘরে তাজা বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করা উচিত। এছাড়া দিনে অন্তত 2-3 লিটার জল পান করা এবং ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এসি চালু থাকা অবস্থায় ঘরের আর্দ্রতা 40-60% এর মধ্যে রাখলে স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব কম পড়ে। এজন্য হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিকল্প পদ্ধতি:

ভারত সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় 2023 সালে একটি নির্দেশিকা জারি করেছে যেখানে এসির তাপমাত্রা 24°C বা তার বেশি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাবও কম পড়বে।

ভারতীয় গ্রীন বিল্ডিং কাউন্সিল (IGBC) সবুজ প্রযুক্তির এসি ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছে। এই ধরনের এসি পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করে এবং কম বিদ্যুৎ খরচ করে, যা পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলে।

 এসি ব্যবহার করা অপরিহার্য হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা এসির সুবিধা ভোগ করতে পারি, সেই সাথে নিজেদের স্বাস্থ্যকেও সুরক্ষিত রাখতে পারি।

close