Unsung heroes of Operation Sindoor: পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে ভারতের শক্তিশালী সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুধু একটি সফল মিশনই ছিল না, বরং এটি হয়ে উঠেছিল ভারতের দৃঢ় সংকল্প ও ন্যায়বিচারের প্রতীক। এই অভিযানের লোগো ডিজাইনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন দুই বীর জওয়ান – লেফটেন্যান্ট কর্নেল হর্ষ গুপ্তা এবং হবিলদার সুরিন্দর সিং। তাদের তৈরি এই সহজ অথচ অর্থবহ লোগোটি কোটি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে এবং ভারতের পরিবর্তিত চেহারার প্রতিফলন হিসেবে বিবেচিত হয়।
অপারেশন সিঁদুরের পটভূমি
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পাহালগামের বৈসারান উপত্যকায় ঘটে যাওয়া নৃশংস সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক প্রাণ হারান। এই দুঃখজনক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার ৭ মে ভোরে শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত নয়টি সন্ত্রাসী ক্যাম্পে নির্ভুল আঘাত হানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী।
এই অভিযানের নাম ‘সিঁদুর’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুমোদনে নির্বাচিত হয়েছিল। সিঁদুর হিন্দু নারীদের বিবাহিত জীবনের প্রতীক, যা পাহালগাম হামলায় স্বামী হারানো বিধবাদের বেদনার কথা মনে করিয়ে দেয়।
লোগো ডিজাইনের অপারেশন সিঁদুরের লোগো ডিজাইন করে গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন এই দুই বীর জওয়ান গল্প
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত কৌশলগত যোগাযোগ অধিদপ্তরের সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের দুই কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হর্ষ গুপ্তা এবং হবিলদার সুরিন্দর সিং এই ঐতিহাসিক লোগোটি ডিজাইন করেন। তাদের সৃষ্টিকর্মটি শুধু একটি গ্রাফিক ডিজাইন ছিল না, বরং এটি ছিল আবেগ, ত্যাগ ও প্রতিশোধের এক অনন্য প্রতীক।
লোগোটির নকশায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ শব্দগুচ্ছ বোল্ড অক্ষরে লেখা হয়েছে। বিশেষত্ব হলো, ‘সিঁদুর’ শব্দের প্রথম ‘ও’ অক্ষরটি একটি সিঁদুরের বাটির আকারে ডিজাইন করা হয়েছে, যার চারপাশে লাল রঙের সিঁদুর ছড়িয়ে রয়েছে। এই নকশা হিন্দু ঐতিহ্যে বিবাহিত নারীদের সিঁদুর ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত এবং পাহালগাম হামলায় স্বামী হারানো নারীদের বেদনাকে তুলে ধরে।
লোগোর প্রতীকী অর্থ ও গভীরতা
অপারেশন সিঁদুরের লোগো ডিজাইন করে গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন এই দুই বীর জওয়ান তাদের অসাধারণ সৃজনশীলতার মাধ্যমে। লোগোর প্রতিটি উপাদান গভীর অর্থ বহন করে। সিঁদুরের বাটি থেকে ছিটকে পড়া লাল পাউডার শুধু সিঁদুরই নয়, এটি নিরীহ মানুষের রক্তের প্রতীকও বটে।
ঐতিহ্যগতভাবে সিঁদুর হিন্দু নারীদের সৌভাগ্যের চিহ্ন। কিন্তু এই লোগোতে ছিটকে পড়া সিঁদুর বিধবাদের হাহাকার, তাদের স্বামী হারানোর বেদনা এবং ন্যায়বিচারের জন্য তাদের আকুতিকে প্রকাশ করে। পাহালগাম হামলায় নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নববিবাহিত, যাদের স্ত্রীরা একদিনেই হয়ে গেছেন বিধবা।
ভাইরাল হওয়ার যাত্রা
অপারেশন সিঁদুরের সফল সমাপনির পর ৭ মে ভোর ১টা ৫১ মিনিটে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে এই লোগোসহ একটি পোস্ট প্রকাশ করে। “#পাহালগামটেররঅ্যাটাক জাস্টিস ইজ সার্ভড। জয় হিন্দ!” এই বার্তার সাথে প্রকাশিত পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
ইনস্টাগ্রাম, এক্স (পূর্বে টুইটার) এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লাখো মানুষ এই লোগো শেয়ার করেন। এর প্রভাব এতটাই ব্যাপক ছিল যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ সংস্করণ ‘বাতচিত’ ম্যাগাজিনে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি
অপারেশন সিঁদুরের লোগো ডিজাইন করে গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন এই দুই বীর জওয়ান, তাদের এই অবদানের স্বীকৃতি এসেছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গে বলেন, “অপারেশন সিঁদুর শুধু একটি সামরিক মিশন ছিল না, এটি ছিল পরিবর্তিত ভারতের চেহারা। এটি দেশের সংকল্প, সাহস এবং বিশ্বমঞ্চে ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রতিফলন।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে অপারেশন সিঁদুর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ের একটি টার্নিং পয়েন্ট এবং ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও উদ্দেশ্যের স্পষ্টতার প্রতীক।
দুই বীর জওয়ানের পরিচয়
লেফটেন্যান্ট কর্নেল হর্ষ গুপ্তা
লেফটেন্যান্ট কর্নেল হর্ষ গুপ্তা ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা। তার সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং দেশপ্রেমের মিশ্রণে জন্ম নেয় এই অসাধারণ লোগো। তিনি কৌশলগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটিয়েছেন।
হবিলদার সুরিন্দর সিং
হবিলদার সুরিন্দর সিং একজন দক্ষ সৈনিক যিনি তার শিল্পবোধ ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে এই লোগো ডিজাইনে অবদান রেখেছেন। তার কাজ প্রমাণ করে যে প্রতিটি সৈনিক শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, সৃজনশীলতার ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারেন।
অপারেশন সিঁদুরের সামরিক সাফল্য
অপারেশন সিঁদুরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি বড় সন্ত্রাসী ক্যাম্পে আঘাত হানে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- বাহাওয়ালপুরের মারকাজ সুবহান ক্যাম্প (জইশ-এ-মহম্মদের সদর দপ্তর)
- মুরিদকের মারকাজ তৈয়বা ক্যাম্প (লস্কর-এ-তৈয়বার সদর দপ্তর)
- কোটলির গুলপুর ও আব্বাস ক্যাম্প
- মুজাফফরাবাদের সাওয়াই নালা ক্যাম্প
এই অভিযানে ১০০+ সন্ত্রাসী নিহত হয় এবং উল্লেখযোগ্য সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস হয়।
আন্তর্জাতিক প্রভাব ও স্বদেশি প্রযুক্তির প্রদর্শনী
অপারেশন সিঁদুরে ভারত তার স্বদেশি অস্ত্রশস্ত্রের কার্যকারিতা প্রমাণ করে। ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল, আকাশ বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং D4 এন্টি-ড্রোন সিস্টেমের মতো স্বদেশি প্রযুক্তি সফলভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নীতির একটি বড় সাফল্য।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের এই দৃঢ় পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির পরিচায়ক হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
ইতিহাসে অপারেশন সিঁদুর ও এর লোগোর স্থান
অপারেশন সিঁদুরের লোগো ডিজাইন করে গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন এই দুই বীর জওয়ান, তাদের এই কৃতিত্ব শুধু শিল্পের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভারতের সামরিক ইতিহাসে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পূর্বে ভারতের সামরিক অভিযানগুলোর নাম সাধারণত প্রচলিত সামরিক শব্দাবলী থেকে নেওয়া হতো, কিন্তু অপারেশন সিঁদুর প্রথমবারের মতো আবেগ ও সাংস্কৃতিক প্রতীকের সাথে সামরিক শক্তির সমন্বয় ঘটিয়েছে।
এই লোগো এখন জাতীয় চেতনার একটি অংশ হয়ে উঠেছে। এটি প্রমাণ করে যে যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয়ের পাশাপাশি মানুষের হৃদয় জয় করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
অপারেশন সিঁদুর ও এর লোগো ভারতের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল হর্ষ গুপ্তা এবং হবিলদার সুরিন্দর সিং তাদের সৃজনশীলতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে সৈনিকরা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, শিল্প ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারেন। তাদের ডিজাইন করা এই লোগো শুধু একটি গ্রাফিক নয়, এটি ন্যায়বিচার, প্রতিশোধ এবং জাতীয় সংহতির এক অমর প্রতীক।