Tips for Handling Selfish People: স্বার্থপর মানুষের সাথে মোকাবিলা করা অনেক সময়ই চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে। তারা নিজেদের স্বার্থকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয় এবং অন্যদের প্রয়োজন বা অনুভূতির প্রতি সাধারণত কোনো গুরুত্ব দেয় না। এর ফলে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা বা কাজ করা অনেক সময়ই কষ্টকর হয়ে ওঠে। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করে আপনি এই ধরনের মানুষদের সাথে সহজেই মোকাবিলা করতে পারেন।
স্বার্থপর মানুষের বৈশিষ্ট্য
স্বার্থপর মানুষদের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাদের চিনতে সাহায্য করে:
– তারা সবসময় নিজেদের প্রয়োজনকেই প্রাধান্য দেয়
– অন্যদের অনুভূতির প্রতি সহানুভূতিশীল নয়
– নিজেদের ভুল স্বীকার করতে চায় না
– সবসময় নিজেদেরকে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে
– অন্যদের সাহায্য করতে অনিচ্ছুক
– নিজেদের সুবিধার জন্য অন্যদের ব্যবহার করে
এই ধরনের মানুষদের সাথে মোকাবিলা করার জন্য নিম্নলিখিত কৌশলগুলি কার্যকর হতে পারে:
স্বার্থপর মানুষদের সাথে মোকাবিলা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল স্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করা। আপনি কতটুকু সহ্য করতে পারবেন তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি বলতে পারেন:
“আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই, কিন্তু আমার নিজের কাজও রয়েছে। তাই আমি এই বিষয়ে আর বেশি সময় দিতে পারব না।”
সীমারেখা নির্ধারণ করলে স্বার্থপর ব্যক্তি বুঝতে পারবে যে আপনাকে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া যাবে না।
স্বার্থপর মানুষরা প্রায়শই নিজেদের আচরণের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন নয়। তাই তাদের আচরণের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ:
“আপনি যখন এভাবে কথা বলেন, তখন আমি খুব অসহায় বোধ করি। আমি চাই আপনি আমার অনুভূতিগুলোও বিবেচনা করুন।”
এভাবে তাদের আচরণের প্রভাব বুঝিয়ে দিলে তারা নিজেদের আচরণ পরিবর্তন করতে পারে।
স্বার্থপর মানুষরা প্রায়শই অন্যদের চাহিদা উপেক্ষা করে। তাই নিজের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। উদাহরণস্বরূপ:
“আমি বুঝতে পারছি আপনার সাহায্যের প্রয়োজন, কিন্তু এই মুহূর্তে আমার নিজের কাজটি শেষ করা জরুরি। পরে আপনাকে সাহায্য করব।”
এভাবে নিজের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাধিকার দিলে আপনি নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।
যদিও স্বার্থপর মানুষরা অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়, তবুও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের আচরণ পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:
“আমি বুঝতে পারছি আপনি এই পরিস্থিতিতে খুব চাপে আছেন। আসুন একসাথে কাজ করে এর সমাধান বের করি।”
সহানুভূতি দেখালে তারা আপনার সাথে সহযোগিতা করতে আগ্রহী হতে পারে।
যদি কোনো স্বার্থপর ব্যক্তি আপনার জীবনে অত্যধিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাহলে তার সাথে সম্পর্ক ছেদ করাই শ্রেয়। এটি কঠিন সিদ্ধান্ত হতে পারে, কিন্তু আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে।
মনোবিজ্ঞানী ড. সুজান ফরওয়ার্ড বলেন, “কখনও কখনও একজন স্বার্থপর ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ছেদ করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। এটি আপনার নিজের সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে।”
স্বার্থপরতার কারণ
স্বার্থপরতার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে:
– শৈশবে যত্নের অভাব
– অতিরিক্ত লালন-পালন
– আত্মবিশ্বাসের অভাব
– নার্সিসিস্টিক ব্যক্তিত্ব বিকার
– সামাজিক দক্ষতার অভাব
মনোবিজ্ঞানী ড. কার্ল পিকহার্ডট বলেন, “অনেক সময় স্বার্থপরতা একটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। এটি ব্যক্তিকে তার নিজের অসুরক্ষিত অনুভূতি থেকে রক্ষা করে।”
স্বার্থপর আচরণের প্রভাব
স্বার্থপর মানুষদের আচরণ অন্যদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে:
– সম্পর্কে অসন্তোষ বৃদ্ধি
– আত্মসম্মান হ্রাস
– মানসিক চাপ বৃদ্ধি
– নৈতিক মূল্যবোধের অবনতি
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্বার্থপর সঙ্গীর সাথে সম্পর্কে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় হতাশা ও অবসাদ দেখা যায়।
স্বার্থপর মানুষদের সাথে মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অসম্ভব নয়। সীমারেখা নির্ধারণ, সহানুভূতি প্রদর্শন এবং নিজের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে আপনি এই ধরনের মানুষদের সাথে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, আপনার নিজের মানসিক সুস্থতা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে একজন পেশাদার কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে পারেন।
মনোবিজ্ঞানী ড. রবার্ট হেয়ার বলেন, “স্বার্থপর মানুষদের সাথে মোকাবিলা করার সেরা উপায় হল নিজেকে শক্তিশালী করা এবং নিজের সীমারেখা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা।”
সুতরাং, স্বার্থপর মানুষদের সাথে মোকাবিলা করার সময় ধৈর্য ধরুন, নিজের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাধিকার দিন এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিন। এভাবেই আপনি এই ধরনের মানুষদের সাথে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন।
মন্তব্য করুন