Why asthma worsens in winter: শীতকাল এলেই হাঁপানি রোগীদের জন্য নেমে আসে এক কঠিন সময়। ঠান্ডা আবহাওয়া, শুষ্ক বাতাস এবং ঘরের ভিতরে বেশি সময় কাটানোর কারণে এই সময় হাঁপানির লক্ষণগুলি আরও বেড়ে যায়। তবে সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আসুন জেনে নেই কেন শীতে হাঁপানি বেড়ে যায় এবং কীভাবে এই সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।
শীতে কেন হাঁপানি বেড়ে যায়?
শীতকালে হাঁপানির লক্ষণগুলি বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ:
ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস
শীতকালে বাতাস অত্যন্ত ঠান্ডা ও শুষ্ক হয়ে যায়। এই ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস শ্বাসনালীকে উত্তেজিত করে এবং সংকুচিত করে ফেলে। ফলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয় এবং হাঁপানির লক্ষণগুলি বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শীতকালে হাসপাতালে হাঁপানি রোগীদের ভর্তির সংখ্যা ২০-২৫% বেড়ে যায়।
হাঁপানি আক্রমণ প্রতিরোধ: ১৫টি টিপস যা আপনাকে সহজে শ্বাস নিতে সাহায্য করবে
ঘরের ভিতরে বেশি সময় কাটানো
ঠান্ডার কারণে মানুষ ঘরের ভিতরে বেশি সময় কাটায়। কিন্তু ঘরের ভিতরে থাকলে ধুলোবালি, মাইট, ছত্রাক ইত্যাদি অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এগুলি হাঁপানির লক্ষণগুলিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ
শীতকালে সর্দি-কাশি, ফ্লু ইত্যাদি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের প্রকোপ বেড়ে যায়। এই সংক্রমণগুলি হাঁপানির লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, শীতকালে ভাইরাল সংক্রমণের কারণে ৬০-৭০% হাঁপানির অ্যাটাক হয়।
শরীরের প্রতিক্রিয়া
ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এলে শরীর হিস্টামিন নামক একটি পদার্থ তৈরি করে। এই হিস্টামিন শ্বাসনালীকে সংকুচিত করে এবং হাঁপানির লক্ষণগুলি বাড়িয়ে দেয়।
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে ৫টি কার্যকর টিপস
শীতকালে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিতে পারেন:
১. ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলুন
যতটা সম্ভব ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। বাইরে বেরোনোর সময় মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন। স্কার্ফ বা মাস্ক ব্যবহার করুন যাতে আপনি যে বাতাস শ্বাস নিচ্ছেন তা কিছুটা গরম হয়ে যায়।
২. ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখুন
শীতকালে ঘরের ভিতরের বাতাস শুকিয়ে যায়। হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে ঘরের আর্দ্রতা ৩০-৫০% এর মধ্যে রাখুন। এতে শ্বাসনালী শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
৩. নিয়মিত ওষুধ খান
আপনার ডাক্তারের পরামর্শ মতো নিয়মিত হাঁপানির ওষুধ খান। বিশেষ করে প্রতিরোধমূলক ইনহেলার নিয়মিত ব্যবহার করুন। এটি শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৪. সংক্রমণ এড়িয়ে চলুন
হাত নিয়মিত সাবান দিয়ে ধুয়ে রাখুন। সর্দি-কাশি বা ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। ফ্লু টিকা নিন। এতে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এড়ানো যাবে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য দায়ী ৫টি ভিটামিনের অভাব – আপনার ত্বক কি শুকনো ও নিষ্প্রভ?
৫. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাইরে ব্যায়াম করার পরিবর্তে ঘরের ভিতরে ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
শীতকাল হাঁপানি রোগীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হলেও সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, ঠান্ডা বাতাস এড়ানো এবং সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার মাধ্যমে আপনি শীতকালেও হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। তবে যদি লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সঠিক যত্ন ও সতর্কতার মাধ্যমে আপনি শীতকালেও স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন।