Tirupati Laddu cultural importance: তিরুপতি লাড্ডু – এই নামটি শুনলেই ভক্তদের মুখে জল এসে যায়। অন্ধ্র প্রদেশের তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানমের এই বিখ্যাত প্রসাদ শুধু স্বাদেই নয়, তার ইতিহাস এবং ঐতিহ্যেও অনন্য। কিন্তু সম্প্রতি এই পবিত্র লাড্ডু নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক। আসুন জেনে নেওয়া যাক তিরুপতি লাড্ডুর গল্প – তার শুরু থেকে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যন্ত।
তিরুপতি লাড্ডুর ইতিহাস ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো। ১৭১৫ সালের ২ আগস্ট প্রথম এই লাড্ডু তৈরি করা হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে প্রাচীন শিলালিপিতে ১৪৮০ সালেই এই লাড্ডুর উল্লেখ পাওয়া যায়, যেখানে এটিকে “মনোহরম” বলা হয়েছে। বর্তমানে যে রূপে আমরা তিরুপতি লাড্ডু দেখি, তা ১৯৪০ সালে মাদ্রাজ সরকারের আমলে চূড়ান্ত হয়েছিল। এর আগে এই লাড্ডুর রেসিপি ৬ বার পরিবর্তন করা হয়েছিল।তিরুপতি লাড্ডুর জনপ্রিয়তার পিছনে রয়েছে তার অনন্য স্বাদ ও গুণমান। প্রতিদিন গড়ে ৩ লক্ষ লাড্ডু তৈরি করা হয় তিরুমালা মন্দিরে। এর জন্য প্রায় ৬২০ জন কর্মী নিযুক্ত আছেন।
Expensive Clothes in the World: বিশ্বের ৫ টি রাজকীয় পোশাকের মহাকাব্য
লাড্ডু তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয় বেসন, চিনি, ঘি, কাজু বাদাম, কিসমিস, এলাচ সহ বিভিন্ন উপাদান। প্রতিটি লাড্ডুর ওজন হয় ঠিক ১৭৫ গ্রাম।তিরুপতি লাড্ডুর তিনটি প্রকারভেদ রয়েছে – অস্থানম, কল্যাণোৎসবম এবং প্রোক্থম। অস্থানম লাড্ডু বিশেষ অনুষ্ঠানে তৈরি করা হয় এবং এতে কেশর, কাজু ও বাদাম থাকে। কল্যাণোৎসবম লাড্ডু আকারে বড় হয়। আর প্রোক্থম লাড্ডু সাধারণ তীর্থযাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।২০০৮ সালে তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম তিরুপতি লাড্ডুর জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) ট্যাগ নিবন্ধন করে। এর ফলে অন্য কেউ এই নামে লাড্ডু তৈরি বা বিক্রি করতে পারে না।
২০১৭ সালে ভারতীয় ডাক বিভাগ তিরুপতি লাড্ডুর স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশ করেছে।কিন্তু সম্প্রতি এই পবিত্র লাড্ডু নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। অভিযোগ উঠেছে যে লাড্ডু তৈরিতে ব্যবহৃত ঘিতে প্রাণিজ চর্বি মেশানো হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু দাবি করেছেন, পূর্ববর্তী সরকার মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করেছে। তিনি বলেছেন, “আগের YSRCP সরকার তিরুমালার পবিত্রতা নষ্ট করেছিল, কিন্তু এখন শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”গুজরাটের একটি ল্যাবরেটরির রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে তিরুপতি লাড্ডুতে “বিফ ট্যালো”, “লার্ড” এবং মাছের তেল পাওয়া গেছে। এই অভিযোগ ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। কারণ হিন্দু ধর্মে গোমাংস ও অন্যান্য মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।তবে মন্দির কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তারা বলেছে, লাড্ডু তৈরির প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠোর নিয়ম মেনে করা হয়। প্রতিটি ব্যাচের লাড্ডু পরীক্ষা করা হয় নিজস্ব ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে।এই বিতর্কের মধ্যে জুন মাসে তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানমের নতুন নির্বাহী আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন বরিষ্ঠ আইএএস অফিসার জে. শ্যামলা রাও। লাড্ডুর গুণমান নিয়ে অভিযোগের পর তিনি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিফ ট্যালো বা মাছের তেল খাদ্য শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শেফ সুবীর সরণ জানিয়েছেন, “সেরা কাবাব তৈরি করতে গেলে আপনি প্রায় ৩০% বিফ ট্যালো, মাটন ট্যালো বা এই জাতীয় পণ্য ব্যবহার করেন। এগুলো বাণিজ্যিকভাবেও বড় আকারে ব্যবহৃত হয় অনেক পণ্যে – মেকআপ শিল্প থেকে শুরু করে অন্যান্য ক্ষেত্রে।”
তিনি আরও বলেন, “বিফ ট্যালো দিয়ে লাড্ডু তৈরি করলে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে সেই স্বাদ যা আপনি চান – তা এলাচ হোক বা কেশর বা অন্য কোনো মশলা – বিফ ট্যালো তার নিজস্ব কোনো স্বাদ দেবে না। ঘি-এর সাথে তুলনা করলে, ঘি-এর একটা বাদামি স্বাদ থাকে যা নির্ভর করে তা গরুর না মহিষের, কখন তৈরি করা হয়েছে, বাড়িতে তৈরি না বাজারের ইত্যাদি।” মাছের তেল সম্পর্কে তিনি বলেন, “এর অল্প পরিমাণ ব্যবহার করলে তা খাবারে উমামি স্বাদ যোগ করে। তবে বেশি ব্যবহার করলে তা পচা মাছের গন্ধ দেয়।”
এই বিতর্কের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশের রাজনীতিতেও এই ইস্যু তুমুল আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। তেলুগু দেশম পার্টি (TDP) এবং YSR কংগ্রেস পার্টি (YSRCP) পরস্পরকে দোষারোপ করছে।তবে এই বিতর্কের মধ্যেও তিরুপতি লাড্ডুর জনপ্রিয়তা কমেনি। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই লাড্ডু কিনছেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিরুপতি লাড্ডু বিক্রি থেকে বার্ষিক আয় হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।তিরুপতি লাড্ডু শুধু একটি মিষ্টি নয়, এটি লক্ষ লক্ষ হিন্দু ভক্তের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাই এর পবিত্রতা ও গুণমান নিয়ে কোনো আপস করা হবে না বলে জানিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।
মুম্বাইয়ের রাজপথে বিশ্বজয়ীদের উন্মাদনা: রোহিত-কোহলির নাচে মেতে উঠলো
তারা আশ্বাস দিয়েছেন যে লাড্ডুর গুণমান বজায় রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।৩০০ বছরের ঐতিহ্য বহন করে আসা তিরুপতি লাড্ডু আজ এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। তবে ভক্তদের আস্থা ও বিশ্বাস এবং কর্তৃপক্ষের সতর্কতার কারণে এই সংকট কাটিয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। কারণ তিরুপতি লাড্ডু শুধু একটি মিষ্টি নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।