India Canada Issue: কানাডা ইস্যুতে মোদির পাশে CPIM

India Canada Issue: ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান কূটনৈতিক সংকট নিয়ে বিরোধী দলগুলির মধ্যে মতভেদ দেখা গেছে। CPIM যেখানে মোদী সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেখানে TMC সাংসদ কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন…

Avatar

 

India Canada Issue: ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান কূটনৈতিক সংকট নিয়ে বিরোধী দলগুলির মধ্যে মতভেদ দেখা গেছে। CPIM যেখানে মোদী সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেখানে TMC সাংসদ কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

CPIM এর বক্তব্য অনুযায়ী, কানাডায় সক্রিয় ভারত-বিরোধী খালিস্তানি গোষ্ঠীগুলি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলটি মনে করে, এই পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সরকারের দায়িত্ব পালনে সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকা উচিত।

CPIM এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারত সরকারের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা কর্তব্য, যার জন্য ভারতের সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন রয়েছে।” দলটি আরও জানিয়েছে, হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কানাডার অভিযোগ স্বচ্ছতার সাথে মোকাবেলা করা উচিত।

অন্যদিকে, TMC সাংসদ সাগরিকা ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদী সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন কেন কানাডার অভিযোগগুলির স্বচ্ছ জবাব দেওয়া হচ্ছে না।

Narendra Modi Russia Visit Details 2024: মোদি-পুতিনের গোপন চুক্তি,বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মোড়?

সাগরিকা ঘোষ X (পূর্বতন Twitter) প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “অন্য একটি দেশের সরকার প্রধান ও পুলিশ প্রকাশ্যে মোদী নেতৃত্বাধীন সরকারকে তাদের মাটিতে চমকপ্রদ অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ করছে, এবং কেউ নন-বায়োলজিক্যাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে জবাব চাইতে পারবে না?”

এই বিতর্কের সূত্রপাত হয় গত জুন মাসে, যখন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যা করা হয়। ভারত ২০২০ সালে নিজ্জরকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দাবি করেছেন যে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারতীয় এজেন্টদের যোগসাজশ রয়েছে। তবে ভারত এই অভিযোগ জোরালোভাবে খারিজ করে দিয়েছে।

সম্প্রতি Royal Canadian Mounted Police (RCMP) অভিযোগ করেছে যে ভারতীয় এজেন্টরা কানাডায় অপরাধীদের ব্যবহার করে দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়, বিশেষত “প্রো-খালিস্তানি উপাদান” লক্ষ্য করে। ভারত এই অভিযোগগুলিকেও “অর্থহীন” বলে বর্ণনা করেছে, যুক্তি দিয়ে যে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ দেওয়া হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে, দুই দেশই পরস্পরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে এবং ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে। ভারত ৬ জন কানাডিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন অ্যাক্টিং হাই কমিশনার। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে কানাডাও ৬ জন ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই কূটনৈতিক সংকট নিয়ে বিরোধী নেতাদের সাথে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি X প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস অবশ্যই আশা করে এবং প্রত্যাশা করে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদের উভয় কক্ষে বিরোধী দলের নেতাদের এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের এই অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ ভারত-কানাডা সম্পর্কের বিষয়ে আস্থায় নেবেন।”

কংগ্রেসের আরেক নেতা রশিদ আলভি ANI-কে বলেছেন, “এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। যখন এমন কিছু ঘটে, তা দেখায় যে সেই দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো নয়… আগে এমন কখনও হত না। এটা BJP সরকারের আমলে শুরু হয়েছে।”

ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ফারুক আবদুল্লাহ ভারতকে কানাডার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক না ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে উভয় দেশেরই শান্তিপূর্ণ আলোচনার জন্য প্রয়াস করা উচিত। তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

CPIM Manifesto: আমাদের ভূমি, আমাদের অধিকার”: কাশ্মীরের জন্য CPI(M)-এর নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ

আবদুল্লাহ বলেছেন, “আমি এই পরিস্থিতি দুঃখজনক মনে করি; আমাদের বন্ধুত্ব স্থাপন করা উচিত… আমাদের কূটনীতির পথ থেকে সরে যাওয়া উচিত নয়।” তিনি আরও যোগ করেন যে স্পষ্ট প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করা উচিত।

এই পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট। CPIM যেখানে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেখানে TMC ও কংগ্রেসের মতো দলগুলি সরকারের কাছ থেকে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দাবি করছে।

এই সংকট ভারত ও কানাডার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯.৩৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারতের রপ্তানি ছিল ৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার এবং কানাডার রপ্তানি ছিল ৩.৮০ বিলিয়ন ডলার।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে, কানাডার মোট ৯৯.০৪ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের ০.৭৪% (০.৭৪ বিলিয়ন ডলার) ছিল ভারতের সাথে। অন্যদিকে, ভারতের মোট ৯০.১৪ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের ০.৮২% ছিল কানাডার সাথে।

এছাড়াও, কানাডায় প্রায় ১.৬ মিলিয়ন ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোক বসবাস করেন, যা সেদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩%। এই বৃহৎ প্রবাসী সম্প্রদায়ের উপর এই সংকটের প্রভাব পড়তে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংলাপ ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আরও গঠনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার বিশ্বনাথ মুখার্জি বলেছেন, “এই মুহূর্তে, উভয় পক্ষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল উত্তেজনা কমানো এবং কূটনৈতিক চ্যানেলগুলি খোলা রাখা। আমরা আশা করি যে শীঘ্রই একটি সমাধান পাওয়া যাবে যা উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে।”

এই জটিল পরিস্থিতিতে, ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে তারা একটি সমন্বিত ও কূটনৈতিক পদ্ধতি গ্রহণ করবেন। বিরোধী দলগুলির সাথে আলোচনা এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি।

পরিশেষে বলা যায়, ভারত-কানাডা সম্পর্কের এই সংকট উভয় দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কূটনৈতিক দক্ষতা, ধৈর্য এবং পারস্পরিক সম্মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই ইস্যু নিয়ে যে মতভেদ দেখা যাচ্ছে, তা স্বাভাবিক। তবে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সকল দলের ঐক্যমত্য থাকা প্রয়োজন। CPIM এর অবস্থান যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি TMC সাংসদের প্রশ্নও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে একটি সর্বসম্মত পন্থা নির্ধারণ করা।

কানাডার অভিযোগগুলি যদি সত্যি হয়, তাহলে তা অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। তবে ভারত সরকার যেভাবে এই অভিযোগগুলি খারিজ করেছে, তা থেকে মনে হয় এর পিছনে কোনো যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নেই। যাই হোক, এই বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।

এই সংকটের ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ২০২৩ সালে যে ৯.৩৬ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয়েছিল, তা হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া কানাডায় বসবাসরত ১.৬ মিলিয়ন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষের জীবনযাত্রাও প্রভাবিত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:

১. উভয় দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করা।
২. বিতর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে একটি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা।
৩. দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিনিময় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।
৪. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
৫. প্রবাসী ভারতীয়দের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কানাডা সরকারের সাথে সহযোগিতা করা।

ভারতের প্রাক্তন বিদেশ সচিব কন্ঠস্বর সিংহ বলেছেন, “এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ধৈর্য ও প্রজ্ঞার প্রয়োজন। উভয় দেশের নেতৃত্বের উচিত শান্ত থাকা এবং কূটনৈতিক মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।”

অন্যদিকে, কানাডার ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাংসদ চন্দ্র আর্য বলেছেন, “আমরা আশা করি এই সংকট দ্রুত মিটবে। উভয় দেশের মধ্যে যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব রয়েছে, তা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

এই পরিস্থিতিতে, ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে তারা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গুরুত্বও বিবেচনা করবেন। CPIM এর মতো দলগুলির সমর্থন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি TMC ও কংগ্রেসের মতো দলগুলির প্রশ্ন ও উদ্বেগও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে তিনি এই বিষয়ে একটি জাতীয় ঐক্যমত্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবেন। বিরোধী দলগুলির সাথে আলোচনা করে একটি সমন্বিত কৌশল তৈরি করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি।

পরিশেষে বলা যায়, ভারত-কানাডা সম্পর্কের এই সংকট উভয় দেশের জন্য একটি পরীক্ষা। এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে উত্তরণ করা হয়, তা দুই দেশের কূটনৈতিক দক্ষতা ও পরিপক্কতার প্রমাণ দেবে। আশা করা যায়, শীঘ্রই এই সংকটের একটি শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক সমাধান পাওয়া যাবে, যা উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।

 

About Author
Avatar

আন্তর্জাতিক খবরের সর্বশেষ আপডেট, গভীর বিশ্লেষণ এবং বিশ্বের প্রভাবশালী ঘটনাবলীর বিস্তারিত প্রতিবেদন পেতে আমাদের International Desk-এ আসুন। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ, রাজনৈতিক গতিবিধি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাংস্কৃতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে জানতে এই পাতাটি আপনার একমাত্র গন্তব্য।