ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরুর আগেই বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। আসন্ন ২০২৫ মৌসুমে স্টেডিয়ামে বা টিভি সম্প্রচারে তামাকজাত ও অ্যালকোহলজাত পণ্যের কোনো বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না। এই নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রক জনস্বাস্থ্য রক্ষার দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। বিসিসিআই (ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড) এবং আইপিএল কর্তৃপক্ষকে এই নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক সম্প্রতি আইপিএল চেয়ারম্যান অরুণ সিং ধুমল এবং বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট রজার বিন্নির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, ২২ মার্চ থেকে শুরু হতে চলা আইপিএল মৌসুমে তামাক ও মদের সরাসরি বা পরোক্ষ কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। এই নিষেধাজ্ঞা কেবল স্টেডিয়ামের ব্যানার বা হোর্ডিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, টিভি সম্প্রচার এবং ধারাভাষ্যকারদের মাধ্যমেও এ ধরনের পণ্যের প্রচার বন্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল অতুল গোয়েল এই চিঠিতে জানিয়েছেন, ক্রিকেট মাঠ শুধু খেলার জায়গা নয়, এটি সামাজিক বার্তা দেওয়ারও একটি শক্তিশালী মাধ্যম। তাই জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে এই নিয়ম মানা জরুরি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, ভারতের তরুণ প্রজন্মের কাছে ক্রিকেটাররা আদর্শ। আইপিএল বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়া লিগ হওয়ায় এর দর্শকদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ। তামাক বা মদের বিজ্ঞাপন এই তরুণদের মনে প্রভাব ফেলতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১৪ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যান। এই পরিসংখ্যানে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এছাড়া, অ্যালকোহলের ব্যবহারও ক্যানসার, ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই এই বিজ্ঞাপন বন্ধ করা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আইপিএলের মতো বড় প্ল্যাটফর্মে তামাক ও মদের প্রচার বন্ধ করার এই উদ্যোগ আগেও নেওয়া হয়েছিল। গত বছরও স্বাস্থ্য মন্ত্রক বিসিসিআইকে একই ধরনের নির্দেশ দিয়েছিল। তবে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অনেক সময় তামাক কোম্পানিগুলো পরোক্ষভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে, যেমন সারোগেট বিজ্ঞাপন। এবার সেই সমস্ত পথ বন্ধ করতেই কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু বিজ্ঞাপন নয়, স্টেডিয়ামে তামাক বা মদজাত পণ্য বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি খেলোয়াড় এবং ধারাভাষ্যকারদের এই পণ্যের প্রচার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
সহজ কথায় বলতে গেলে, এই নিয়মের মূল লক্ষ্য হলো তরুণদের সুস্থ জীবনযাপনের দিকে উৎসাহিত করা। আইপিএলের মতো জনপ্রিয় টুর্নামেন্টে লাখ লাখ মানুষ খেলা দেখেন। এই বিশাল দর্শক সংখ্যার মধ্যে অনেকেই ক্রিকেটারদের জীবনযাত্রা অনুসরণ করেন। তাই তামাক বা মদের বিজ্ঞাপন যদি মাঠে বা টিভিতে দেখানো হয়, তাহলে তরুণরা এই ক্ষতিকর পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই পদক্ষেপ তাই সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতার একটি বড় উদাহরণ।
বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই নির্দেশনা কার্যকর করতে বিসিসিআইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। আইপিএল শুরুর আগেই এই নিয়ম পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য তৈরি করা হচ্ছে পরিকল্পনা। তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে বিসিসিআইয়ের আয় কিছুটা কমতে পারে, কারণ তামাক ও মদ কোম্পানিগুলো প্রায়ই বড় স্পনসর হিসেবে থাকে। কিন্তু জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এই ক্ষতি মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত সরকার।
এই পদক্ষেপকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি তরুণদের মধ্যে তামাক ও মদের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করবে। আইপিএল ২০২৫ শুধু খেলার জন্য নয়, একটি সুস্থ সমাজ গড়ার বার্তা দেওয়ার জন্যও মনে রাখা হবে।
মন্তব্য করুন