Tomato for Skincare? Hidden Risks You Must Know: সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হাজারো বিউটি হ্যাকস। তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি টিপস হলো ত্বকের জেল্লা ফেরাতে মুখে টমেটো ঘষা। কম খরচে উজ্জ্বল, দাগহীন ত্বক পাওয়ার এই ঘরোয়া টোটকা অনেকেই অনুসরণ করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, ভালোর বদলে এই অভ্যাস আপনার ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে? হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা মুখে টমেটো লাগানোর অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনার ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। তাই স্কিনকেয়ার রুটিনে টমেটো যোগ করার আগে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়া আবশ্যক।
কেন টমেটো ত্বকের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়?
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে, চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই কেন টমেটোকে ত্বকের বন্ধু ভাবা হয়। টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, লাইকোপিন (Lycopene) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলো ত্বককে উজ্জ্বল করতে, ট্যান দূর করতে এবং ত্বকের ছিদ্র (pores) সংকুচিত করতে সাহায্য করে বলে প্রচলিত ধারণা রয়েছে। কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠও রয়েছে, যা অনেকেই উপেক্ষা করে যান।
মুখে টমেটো লাগানোর অপকারিতা: যে ৫টি বিপদ আপনি নিজেই ডেকে আনছেন
প্রাকৃতিক উপাদান মানেই যে সেটি ত্বকের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ, এই ধারণাটি একেবারেই ভুল। প্রত্যেকের ত্বকের ধরন আলাদা, তাই কোনো উপাদান একজনের জন্য উপকারী হলেও আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আসুন, মুখে টমেটো লাগানোর অপকারিতা গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
১. ত্বকের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে (অ্যাসিডিটি)
টমেটো একটি অ্যাসিডিক বা অম্লীয় প্রকৃতির সবজি। এর pH লেভেল সাধারণত ৪ থেকে ৪.৫ এর মধ্যে থাকে। অন্যদিকে, আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক pH লেভেল ৪.৭ থেকে ৫.৭৫ এর মধ্যে থাকে, যা সামান্য অম্লীয়।
- সমস্যাটা কোথায়? আপনি যখন সরাসরি টমেটো মুখে লাগান, এর অতিরিক্ত অ্যাসিড ত্বকের প্রাকৃতিক অ্যাসিডিক স্তর (acid mantle) নষ্ট করে দেয়। এই স্তরটি ত্বককে বাইরের ব্যাকটেরিয়া এবং দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে। এটি নষ্ট হয়ে গেলে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ এবং খসখসে হয়ে যেতে পারে।
২. অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন এবং চুলকানি
অনেকেরই টমেটোতে অ্যালার্জি থাকে। একে বলা হয় কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস (Contact Dermatitis)। টমেটোর মধ্যে হিস্টামিন (Histamine) নামক একটি যৌগ থাকে, যা ত্বকে লাগানোর পর চুলকানি, লালচে ভাব, র্যাশ বা ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে।
- কীভাবে বুঝবেন? যদি টমেটো লাগানোর পর আপনার ত্বক সামান্য জ্বালা করে বা চুলকায়, তবে তৎক্ষণাৎ তা ধুয়ে ফেলুন। এটি অ্যালার্জির প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
টমেটো, বেগুন, ক্যাপসিকাম, কড়াইশুঁটি: শাকসবজি নাকি ফল? জানুন বিস্তারিত
৩. ফটোসেনসিটিভিটি বা সূর্যের আলোতে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি
এটি মুখে টমেটো লাগানোর অপকারিতা-গুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুতর একটি দিক। টমেটোতে থাকা অ্যাসিডিক উপাদান ত্বককে ফটোসেনসিটিভ করে তুলতে পারে। এর অর্থ হলো, টমেটো ব্যবহারের পর রোদে গেলে আপনার ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- এর ফলে কী হতে পারে?
- খুব সহজেই সানবার্ন বা ত্বক পুড়ে যেতে পারে।
- ত্বকে কালচে ছোপ বা হাইপারপিগমেন্টেশন দেখা দিতে পারে।
- দীর্ঘদিন ধরে এই অভ্যাস চালালে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
৪. ত্বকের শুষ্কতা এবং লালচে ভাব
যাঁদের ত্বক স্বাভাবিকভাবেই শুষ্ক, তাঁদের জন্য টমেটো ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়। টমেটোর অ্যাসিডিক প্রকৃতি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল (sebum) শুষে নেয়, যার ফলে ত্বক আরও বেশি শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। এর ফলে ত্বকে টানটান ভাব, চামড়া ওঠা এবং লালচে ভাব দেখা দিতে পারে।
৫. সবার জন্য উপযুক্ত নয়
ব্রণর সমস্যায় অনেকেই টমেটো ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। কিন্তু সংবেদনশীল বা অ্যাকনে-প্রোন ত্বকে টমেটোর অ্যাসিড উল্টো প্রতিক্রিয়া করতে পারে। এটি ব্রণর জায়গায় জ্বালাভাব তৈরি করতে পারে এবং প্রদাহ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ফলে ব্রণ কমার বদলে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাহলে কাদের জন্য মুখে টমেটো ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ?
যদিও প্রত্যেকেরই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, তবে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি:
- সংবেদনশীল ত্বক (Sensitive Skin): যাঁদের ত্বক খুব সংবেদনশীল, তাঁদের ত্বকে র্যাশ বা জ্বালা হওয়ার প্রবণতা বেশি।
- শুষ্ক ত্বক (Dry Skin): শুষ্ক ত্বকে টমেটো ব্যবহার করলে ত্বক আরও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।
- একজিমা বা রোজেশিয়ার সমস্যা: আপনার যদি একজিমা (Eczema) বা রোজেশিয়া (Rosacea) এর মতো ত্বকের সমস্যা থাকে, তবে টমেটো ব্যবহার করলে তা আরও বেড়ে যেতে পারে।
ঝুঁকি এড়াতে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করবেন?
যদি আপনি টমেটো ব্যবহার করতেই চান, তবে কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলুন:
- প্যাচ টেস্ট (Patch Test) করুন: মুখে লাগানোর আগে কানের পেছনে বা হাতের ছোট্ট অংশে টমেটোর রস লাগিয়ে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। যদি কোনো চুলকানি বা লালচে ভাব না দেখা যায়, তবেই ব্যবহার করতে পারেন।
- সরাসরি ব্যবহার নয়: টমেটোর রসের সাথে শসার রস, মধু বা দই মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটি এর অ্যাসিডিক প্রভাবকে কিছুটা কমাতে সাহায্য করবে।
- কম সময় রাখুন: মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিটের বেশি রাখবেন না। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- রোদ এড়িয়ে চলুন: টমেটোর ফেস প্যাক ব্যবহারের পর অন্তত কয়েক ঘণ্টা সরাসরি রোদে যাবেন না এবং বাইরে বের হলে অবশ্যই ভালো মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই রান্নাঘরের উপাদান সরাসরি মুখে লাগানোর বিষয়ে সতর্ক করেন। তাঁদের মতে, বাজারজাত স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টগুলো ল্যাবরেটরিতে ত্বকের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়, যেখানে উপাদানগুলোর পরিমাণ এবং pH লেভেল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক উপাদানের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না, যা মুখে টমেটো লাগানোর অপকারিতা-র ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
সামগ্রিকভাবে, টমেটো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও, ত্বকের ওপর এর সরাসরি প্রয়োগ সবার জন্য নিরাপদ নয়। বিশেষ করে সংবেদনশীল এবং শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে মুখে টমেটো লাগানোর অপকারিতা লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। তাই পরেরবার রূপচর্চার নামে মুখে টমেটো ঘষার আগে দু’বার ভাবুন। আপনার ত্বক মূল্যবান, এর যত্ন নিন জেনে, শুনে এবং বুঝে। সবচেয়ে ভালো হয়, যেকোনো নতুন জিনিস ত্বকে প্রয়োগ করার আগে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।আপনার কি টমেটো ব্যবহার করে কোনো বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে? কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করুন।