Most popular athletes 2024:২০২৪ সালের শেষে গুগল তার বার্ষিক “ইয়ার ইন সার্চ” রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি খোঁজ করা ক্রীড়াবিদদের তালিকা রয়েছে। এই তালিকায় বিভিন্ন খেলার তারকারা স্থান পেয়েছেন, যা ২০২৪ সালে ক্রীড়াজগতের বৈচিত্র্যময় ঘটনাপ্রবাহের প্রতিফলন। আসুন জেনে নেওয়া যাক কারা রয়েছেন এই তালিকায় এবং কেন তারা এত জনপ্রিয় হয়েছেন।
১. ইমান খেলিফ: অলিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী বক্সার
তালিকার শীর্ষে রয়েছেন আলজেরিয়ান বক্সার ইমান খেলিফ। ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে ওয়েল্টারওয়েট বিভাগে স্বর্ণপদক জয়ের পর তিনি বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। তবে তার এই সাফল্যের পাশাপাশি লিঙ্গ নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। খেলিফের অসাধারণ প্রদর্শন এবং বিতর্কিত পরিস্থিতি তাকে গুগল সার্চে সবার শীর্ষে নিয়ে এসেছে।
২. মাইক টাইসন: কিংবদন্তি বক্সারের প্রত্যাবর্তন
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন হেভিওয়েট বক্সিংয়ের কিংবদন্তি মাইক টাইসন। ৫৮ বছর বয়সে পেশাদার বক্সিংয়ে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তিনি আবারও আলোচনায় এসেছেন। নভেম্বর মাসে জেক পলের বিপক্ষে তার ম্যাচটি ছিল বছরের অন্যতম বড় ক্রীড়া ইভেন্ট। টাইসনের এই প্রত্যাবর্তন তাকে আবারও জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে এসেছে।
Euro Cup Champion 2024: স্পেনের চতুর্থ ইউরো কাপ জয়, ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায়
৩. লামিনে ইয়ামাল: স্পেনের উদীয়মান ফুটবল তারকা
তৃতীয় স্থানে রয়েছেন স্পেনের ১৭ বছর বয়সী ফুটবলার লামিনে ইয়ামাল। ২০২৪ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে স্পেনের জয়ে তার অসাধারণ অবদান ছিল। বার্সেলোনা এবং স্পেনের হয়ে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। ইয়ামালের প্রতিভা এবং কম বয়সে অসাধারণ সাফল্য তাকে এই তালিকায় স্থান এনে দিয়েছে।
৪. সিমোন বাইলস: জিমন্যাস্টিকের কিংবদন্তির প্রত্যাবর্তন
চতুর্থ স্থানে রয়েছেন মার্কিন জিমন্যাস্ট সিমোন বাইলস। ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে তিনি আরও তিনটি স্বর্ণপদক জয় করেছেন। মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে বিরতি নেওয়ার পর প্রতিযোগিতামূলক জিমন্যাস্টিকে ফিরে আসায় তিনি বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বাইলসের সাহসী সিদ্ধান্ত এবং অসাধারণ প্রদর্শন তাকে এই তালিকায় স্থান দিয়েছে।
৫. জেক পল: ইউটিউবার থেকে পেশাদার বক্সার
পঞ্চম স্থানে রয়েছেন জেক পল, যিনি ইউটিউবার থেকে পেশাদার বক্সারে রূপান্তরিত হয়েছেন। মাইক টাইসনের বিপক্ষে তার ম্যাচটি ছিল বছরের সবচেয়ে আলোচিত ক্রীড়া ইভেন্টগুলোর একটি। পলের বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা তাকে এই তালিকায় স্থান দিয়েছে।
৬. নিকো উইলিয়ামস: স্পেনের উদীয়মান ফুটবল তারকা
ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন স্পেনের আরেক তরুণ ফুটবলার নিকো উইলিয়ামস। অ্যাথলেটিক বিলবাও এবং স্পেনের জাতীয় দলের হয়ে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা তরুণ ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইউরো ২০২৪-এ স্পেনের জয়ে উইলিয়ামসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।
৭. হার্দিক পান্ডিয়া: ভারতীয় ক্রিকেটের অলরাউন্ডার
সপ্তম স্থানে রয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটার হার্দিক পান্ডিয়া। ২০২৪ সালে তার ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন দুটোই ঘটেছে। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে ব্যর্থতার পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের জয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। পান্ডিয়ার এই রোলার কোস্টার ক্যারিয়ার তাকে গুগল সার্চে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
৮. স্কটি শেফলার: গলফের নতুন সুপারস্টার
অষ্টম স্থানে রয়েছেন আমেরিকান গলফার স্কটি শেফলার। ২০২৪ সালে তিনি পাঁচটি পিজিএ টুর জয়ের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো মাস্টার্স টুর্নামেন্ট জিতেছেন। শেফলারের অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে বিশ্বের সেরা গলফারদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
৯. শশাঙ্ক সিং: আইপিএলের নতুন সেনসেশন
নবম স্থানে রয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটার শশাঙ্ক সিং। ২০২৪ সালের আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে তার সেনসেশনাল পারফরম্যান্স তাকে রাতারাতি তারকা বানিয়ে দিয়েছে। ১৪টি ম্যাচে ৩৫৪ রান করে তিনি দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
১০. রদ্রি: ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ড মাস্টারমাইন্ড
দশম স্থানে রয়েছেন স্পেনের ফুটবলার রদ্রি। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ঘরোয়া এবং ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় সাফল্যের পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য। ২০২৪ সালে তিনি বালন ডি’অর পুরস্কার জিতেছেন, যা তাকে বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা
বিশ্লেষণ: ২০২৪ সালের ক্রীড়াজগতের প্রতিফলন
এই তালিকা ২০২৪ সালের ক্রীড়াজগতের বৈচিত্র্যময় চিত্র তুলে ধরেছে। এখানে রয়েছে প্রতিষ্ঠিত তারকাদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ক্রীড়াবিদরা। বক্সিং, ফুটবল, জিমন্যাস্টিকস, ক্রিকেট এবং গলফের মতো বিভিন্ন খেলার প্রতিনিধিত্ব রয়েছে এই তালিকায়। এটি প্রমাণ করে যে, বিশ্বব্যাপী ক্রীড়াপ্রেমীরা শুধু একটি নির্দিষ্ট খেলায় আগ্রহী নন, বরং বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া ইভেন্টে তাদের আগ্রহ রয়েছে।তালিকায় থাকা প্রতিটি ক্রীড়াবিদের পেছনে রয়েছে একটি অনন্য গল্প। কেউ অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন, কেউ বয়সের সীমা ছাড়িয়ে প্রত্যাবর্তন করেছেন, আবার কেউ নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এই বৈচিত্র্য প্রমাণ করে যে, ক্রীড়াজগতে সাফল্য এবং জনপ্রিয়তা অর্জনের পথ একটি নয়, বরং বহুমুখী।তেমনি নতুন প্রজন্মের ক্রীড়াবিদরাও দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন। এই তালিকা শুধু ২০২৪ সালের সেরা ক্রীড়াবিদদের প্রতিফলন নয়, এটি আগামী দিনের ক্রীড়াজগতের দিকনির্দেশনাও দেয়।
ক্রীড়াবিদদের প্রভাব: খেলার মাঠের বাইরে
এই তালিকায় থাকা অনেক ক্রীড়াবিদই শুধু তাদের খেলার জন্য নয়, সামাজিক প্রভাব এবং ব্যক্তিগত জীবনের জন্যও আলোচিত হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ:
সিমোন বাইলস: মানসিক স্বাস্থ্যের অগ্রদূত
সিমোন বাইলস শুধু জিমন্যাস্টিকসে তার দক্ষতার জন্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করার জন্যও প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি ক্রীড়াবিদদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, যা অনেক তরুণ ক্রীড়াবিদকে অনুপ্রাণিত করেছে।
জেক পল: সোশ্যাল মিডিয়া এবং ক্রীড়ার সংমিশ্রণ
জেক পল ইউটিউব থেকে পেশাদার বক্সিংয়ে আসার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে ক্রীড়াজগতকে প্রভাবিত করছে। তিনি নতুন ধরনের ক্রীড়া সেলিব্রিটির উদাহরণ, যারা খেলার পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও সমান সফল।
হার্দিক পান্ডিয়া: নেতৃত্ব এবং সহ্যশক্তির প্রতীক
পান্ডিয়ার ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন দেখিয়েছে যে, একজন ক্রীড়াবিদের জীবনে সাফল্য এবং ব্যর্থতা কীভাবে পাশাপাশি থাকে। তার সহ্যশক্তি এবং পুনরুত্থানের ক্ষমতা অনেক তরুণ ক্রীড়াবিদকে অনুপ্রাণিত করেছে।
ডিজিটাল যুগে ক্রীড়াবিদদের জনপ্রিয়তা
২০২৪ সালে গুগলে সর্বাধিক অনুসন্ধিত ক্রীড়াবিদদের তালিকা প্রমাণ করে যে, ডিজিটাল যুগে ক্রীড়াবিদদের জনপ্রিয়তা কীভাবে পরিমাপ করা হয় তা পরিবর্তিত হয়েছে। এখন শুধু খেলার মাঠে পারফরম্যান্স নয়, সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি, ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং এবং মিডিয়া কভারেজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব
অনেক ক্রীড়াবিদই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়, যেখানে তারা ফ্যানদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। এটি তাদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড তৈরি করতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, জেক পল এবং লামিনে ইয়ামাল উভয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশাল ফলোয়িং গড়ে তুলেছেন।
মিডিয়া কভারেজের ভূমিকা
ট্রেডিশনাল এবং অনলাইন মিডিয়া উভয়ই ক্রীড়াবিদদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন, ইমান খেলিফের অলিম্পিক জয় এবং পরবর্তী বিতর্ক ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ পেয়েছিল, যা তাকে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় নিয়ে এসেছিল।
ভবিষ্যতের প্রজন্মের উত্থান
২০২৪ সালের এই তালিকায় লক্ষণীয় বিষয় হল নতুন প্রজন্মের ক্রীড়াবিদদের উত্থান। লামিনে ইয়ামাল, নিকো উইলিয়ামস এবং শশাঙ্ক সিংয়ের মতো তরুণ ক্রীড়াবিদরা প্রমাণ করেছেন যে, তারা শুধু ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি নয়, বর্তমানেও বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
প্রযুক্তি এবং ডেটা বিশ্লেষণের ব্যবহার
নতুন প্রজন্মের ক্রীড়াবিদরা প্রযুক্তি এবং ডেটা বিশ্লেষণের সাহায্যে নিজেদের দক্ষতা উন্নত করছেন। উদাহরণস্বরূপ, স্কটি শেফলার গলফে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার স্বিং এবং পাটিং টেকনিক উন্নত করেছেন।
বহুমুখী দক্ষতার গুরুত্ব
আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনে বহুমুখী দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, হার্দিক পান্ডিয়া এবং রদ্রি উভয়েই তাদের নিজ নিজ খেলায় বহুমুখী দক্ষতার জন্য প্রশংসিত, যা তাদেরকে অনন্য মূল্যবান করে তুলেছে।
সামাজিক প্রভাব এবং দায়িত্ববোধ
২০২৪ সালের সর্বাধিক অনুসন্ধিত ক্রীড়াবিদদের তালিকায় থাকা অনেকেই তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সামাজিক ইস্যুতে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন। এটি প্রমাণ করে যে, আধুনিক ক্রীড়াবিদরা শুধু খেলোয়াড় নন, তারা সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বও।
সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সমতার জন্য লড়াই
অনেক ক্রীড়াবিদ তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সমতার জন্য আওয়াজ তুলছেন। উদাহরণস্বরূপ, সিমোন বাইলস মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং নারী ক্রীড়াবিদদের অধিকারের জন্য কাজ করছেন।
পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা
কিছু ক্রীড়াবিদ পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যও কাজ করছেন। যেমন, স্কটি শেফলার গলফ কোর্সগুলোতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন।
২০২৪ সালে গুগলে সর্বাধিক অনুসন্ধিত ১০ ক্রীড়াবিদের তালিকা শুধু বর্তমান ক্রীড়াজগতের চিত্র তুলে ধরে না, এটি ভবিষ্যতের দিকেও ইঙ্গিত দেয়। এই তালিকা প্রমাণ করে যে, আগামী দিনে সফল ক্রীড়াবিদদের শুধু খেলার দক্ষতা নয়, সামাজিক দায়িত্ববোধ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংয়েও দক্ষ হতে হবে।ক্রীড়াজগত ক্রমাগত পরিবর্তনশীল এবং এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারা ক্রীড়াবিদদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালের এই তালিকা দেখিয়েছে যে, প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম এবং সামাজিক প্রভাবের সমন্বয়ই একজন ক্রীড়াবিদকে জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী করে তোলে।