Top Polytechnic Institutes in Bangladesh: বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। দেশের উন্নয়নে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে পলিটেকনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে দেশে ৫২টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রয়েছে, যেখানে প্রায় ১,৩০,০০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কিছু রয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করে আসছে। আজ আমরা আলোচনা করব বাংলাদেশের সেরা ১০টি সরকারি পলিটেকনিক কলেজ সম্পর্কে।
১. ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (DPI)ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তম পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অবস্থিত। এখানে ১২টি বিভাগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি রয়েছে যেখানে ২০,০০০ বই ও ১০,০০০ এর বেশি জার্নাল সংরক্ষিত আছে।ছাত্রদের জন্য হোস্টেল সুবিধাও রয়েছে।
২. বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটরাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি সুইডিশ একাডেমি নামেও পরিচিত। এখানে ৬টি বিভাগে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি ছাত্রদের জন্য হোস্টেল সুবিধা প্রদান করে থাকে।
৩. ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটশেরে বাংলা নগর, আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত। এখানে ৬টি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল সুবিধাও রয়েছে।
৪. রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এখানে ৮টি বিভিন্ন ট্রেডে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স চালু রয়েছে।
এসির ঠান্ডায় লুকিয়ে আছে মৃত্যুর ছোঁয়া! জানুন কীভাবে বাঁচবেন
৫. চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটচট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০.১ একর জমির উপর অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৩০০০ এর বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
৬. কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বা KPI বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান। কালীশংকরপুর, কুষ্টিয়ায় অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ২৩০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
৭. সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের প্রাচীনতম পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি।
১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে বর্তমানে ১২০ জনের বেশি শিক্ষক ও ৫০ জনের বেশি প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মরত আছেন।
৮. বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটফোর্ড ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ২০ একরের বেশি জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এখানে ৯টি ট্রেডে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রায় ১০০০ শিক্ষার্থীর জন্য হোস্টেল সুবিধা রয়েছে।
৯. ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দেশের মধ্যম পর্যায়ের প্রকৌশলী তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে মাসকান্দিতে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানে ৭টি ট্রেডে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
১০. খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটখুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বা KPI বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো ও বড় পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান।
এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু রয়েছে।এই প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও দেশে আরও অনেক সরকারি পলিটেকনিক কলেজ রয়েছে যেগুলো মানসম্মত কারিগরি শিক্ষা প্রদান করে আসছে। তবে সব প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক সংকট রয়েছে। দেশের ৫২টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মাত্র ৯০০ জন স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:১৪৪, যা আন্তর্জাতিক মান থেকে অনেক পিছিয়ে।পলিটেকনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পুরনো ও অকেজো যন্ত্রপাতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ঢাকার সেরা কলেজের তালিকা 2024: সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্ভরযোগ্য গাইড
এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ল্যাব ও ওয়ার্কশপের অভাব রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা যথাযথ হাতে-কলমে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।তবে সরকার এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কারিগরি শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। নতুন শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, এসব পদক্ষেপের ফলে আগামী দিনগুলোতে দেশের পলিটেকনিক শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে।পলিটেকনিক শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। বর্তমানে দেশে ও বিদেশে এ ধরনের দক্ষ জনশক্তির চাহিদা ব্যাপক।
তাই যারা এসএসসি পাস করেছেন, তারা পলিটেকনিক শিক্ষায় ভর্তির কথা ভাবতে পারেন। তবে প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করলে ভবিষ্যতে ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া যাবে।সামগ্রিকভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের পলিটেকনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই খাতকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। কারণ দেশের উন্নয়নে দক্ষ কারিগরি জনশক্তির কোনো বিকল্প নেই।
