সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলার: সেরার সেরা কে? পরিসংখ্যান ও ইতিহাসের আলোকে বিশ্লেষণ

ফুটবল, যাকে বলা হয় 'দ্য বিউটিফুল গেম', তার ইতিহাসে এমন কিছু খেলোয়াড়ের আগমন ঘটেছে যারা নিজেদের শৈল্পিক ক্রীড়ানৈপুণ্যে বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, মাঠের সবুজ ক্যানভাসে তারা এঁকেছেন অবিস্মরণীয়…

Ani Roy

 

ফুটবল, যাকে বলা হয় ‘দ্য বিউটিফুল গেম’, তার ইতিহাসে এমন কিছু খেলোয়াড়ের আগমন ঘটেছে যারা নিজেদের শৈল্পিক ক্রীড়ানৈপুণ্যে বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, মাঠের সবুজ ক্যানভাসে তারা এঁকেছেন অবিস্মরণীয় সব সাফল্যের ছবি। কিন্তু কে সর্বকালের সেরা? এই বিতর্ক অনন্তকালের। পেলে, ম্যারাডোনা, মেসি নাকি রোনালদো? নাকি তাদের ছাড়াও অন্য কেউ আছেন এই তালিকায়?

এই প্রশ্নটির কোনো একক, বাঁধাধরা উত্তর নেই। বিভিন্ন প্রজন্ম, খেলার ধরণ এবং ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা পরিবর্তিত হতে পারে। তবে পরিসংখ্যান, অর্জন, প্রভাব এবং বিভিন্ন সময়ের ফুটবল বিশেষজ্ঞ ও প্রকাশনার মতামতের ওপর ভিত্তি করে একটি তালিকা তৈরি করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক ফুটবল ইতিহাস ও পরিসংখ্যান ফেডারেশন (IFFHS) এবং ফোরফোরটু (FourFourTwo) এর মতো খ্যাতনামা সংস্থার সাম্প্রতিক তালিকাগুলোও এই আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই প্রবন্ধে আমরা তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে সর্বকালের সেরা দশজন ফুটবলারের এক অনবদ্য তালিকা তুলে ধরব।

১. লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)

তর্কসাপেক্ষে অনেকেই তাকে সর্বকালের সেরা হিসেবে মেনে নিয়েছেন, বিশেষ করে ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ জয়ের পর। লিওনেল মেসি শুধু একজন গোলদাতা নন, তিনি একজন অসাধারণ প্লেমেকার, ড্রিবলার এবং নেতা। তার অর্জনের খাতা ঈর্ষণীয়। রেকর্ড আটবার ব্যালন ডি’অর জয়, ছয়টি ইউরোপীয় গোল্ডেন শু এবং বার্সেলোনার হয়ে অসংখ্য ট্রফি তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয়। ক্লাব ফুটবলে তার মোট শিরোপা সংখ্যা ৪৪, যা ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

অর্জন ও প্রভাব:

  • ক্লাব ক্যারিয়ার: বার্সেলোনার হয়ে ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল, যা এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ। জিতেছেন ১০টি লা লিগা এবং ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।
  • আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: আর্জেন্টিনার হয়ে ১৮০টির বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জয় করেছেন ২০২১ কোপা আমেরিকা এবং বহু প্রতীক্ষিত ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে তিনি দুইবার গোল্ডেন বল জিতেছেন, যা ইতিহাসে একমাত্র।
  • পরিসংখ্যান: ক্যারিয়ারে ৮৫০ এর অধিক গোল এবং ৩৫০ এর বেশি অ্যাসিস্ট তাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

মেসির খেলার ধরণ, বলের ওপর অবিশ্বাস্য নিয়ন্ত্রণ এবং সংকীর্ণ জায়গায় একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটানোর ক্ষমতা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। তার প্রভাব শুধু মাঠেই সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্তের কাছে তিনি এক অনুপ্রেরণার নাম।

২. পেলে (ব্রাজিল)

এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো, যিনি পেলে নামেই বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ফুটবল বিশ্বে তাকে ‘রাজা’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি তিনবার ফিফা বিশ্বকাপ (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০) জিতেছেন। তার গোল করার ক্ষমতা ছিল কিংবদন্তিতুল্য। যদিও তার ক্যারিয়ারের মোট গোলের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস স্বীকৃত তথ্য অনুযায়ী তিনি ১,৩৬৩ ম্যাচে ১,২৮১টি গোল করেছেন।

অর্জন ও প্রভাব:

  • আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ব্রাজিলের হয়ে ৯২ ম্যাচে ৭৭টি গোল করেছেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জয়ে মূল ভূমিকা পালন করেন।
  • ক্লাব ক্যারিয়ার: সান্তোসের হয়ে তিনি দুটি কোপা লিবের্তাদোরেস এবং দুটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জিতেছেন।
  • বিংশ শতাব্দীর সেরা: ফিফা তাকে ডিয়েগো ম্যারাডোনার সাথে যৌথভাবে ‘বিংশ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়’ হিসেবে ঘোষণা করে।

পেলে ফুটবলকে একটি বৈশ্বিক খেলায় পরিণত করতে বিশাল ভূমিকা রেখেছিলেন। তার ক্রীড়াশৈলী এবং গোল করার সহজাত ক্ষমতা আজও ফুটবলারদের জন্য এক পাঠ্যপুস্তক।

৩. ডিয়েগো ম্যারাডোনা (আর্জেন্টিনা)

ফুটবলের ‘ঈশ্বর’ খ্যাত ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা ছিলেন এক জাদুকর। তার পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছিল গোটা বিশ্ব। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে কার্যত একাই আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তার করা দুটি গোল—’হ্যান্ড অফ গড’ এবং ‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’—ফুটবল ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে আছে।

অর্জন ও প্রভাব:

  • ১৯৮৬ বিশ্বকাপ: সেই টুর্নামেন্টে তিনি ৫টি গোল করেন এবং ৫টি অ্যাসিস্ট করেন, যা আর্জেন্টিনার মোট ১৪টি গোলের প্রায় ৭১% এর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল।
  • ক্লাব ক্যারিয়ার: ইতালির অখ্যাত ক্লাব নাপোলিকে তিনি দুটি সিরি ‘আ’ শিরোপা জিতিয়েছিলেন, যা আজও ক্লাবের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।
  • নেতৃত্ব ও ড্রিবলিং: তার অবিশ্বাস্য ড্রিবলিং, নেতৃত্ব এবং খেলার গতিপথ এক মুহূর্তে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল তুলনাহীন।

মাঠের বাইরের বিতর্ক তার ক্যারিয়ারকে কিছুটা ম্লান করলেও, মাঠের ভেতরে তার প্রতিভা ছিল প্রশ্নাতীত। ম্যারাডোনার প্রভাব এতটাই গভীর যে, আজও আর্জেন্টিনার অনেক তরুণ ফুটবলারের কাছে তিনিই অনুপ্রেরণার শেষ কথা।

৪. ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)

আধুনিক ফুটবলের অন্যতম সেরা গোলমেশিন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তার শারীরিক সক্ষমতা, গতি, এবং গোল করার অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা তাকে সেরাদের তালিকায় জায়গা করে দিয়েছে। ইতিহাসের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলদাতা (১৩০ এর বেশি) এবং ক্লাব ও দেশ মিলিয়ে ৯০০ এর বেশি অফিসিয়াল গোলের মালিক তিনি।

অর্জন ও প্রভাব:

  • ব্যক্তিগত পুরস্কার: পাঁচবার ব্যালন ডি’অর এবং চারটি ইউরোপীয় গোল্ডেন শু জিতেছেন।
  • ক্লাব সাফল্য: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ এবং জুভেন্টাসের হয়ে লিগ শিরোপা জিতেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৪৩৮ ম্যাচে করেছেন ৪৫০ গোল এবং জিতেছেন রেকর্ড ৫টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।
  • আন্তর্জাতিক সাফল্য: পর্তুগালকে ২০১৬ সালের উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১৯ সালের উয়েফা নেশনস লিগ জিতিয়েছেন।

তার কঠোর পরিশ্রম এবং নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতা তাকে এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদে পরিণত করেছে।

৫. ইয়োহান ক্রুইফ (নেদারল্যান্ডস)

ফুটবলের ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক চরিত্রের নাম ইয়োহান ক্রুইফ। তিনি শুধু একজন মহান খেলোয়াড়ই ছিলেন না, একজন যুগান্তকারী চিন্তাবিদও ছিলেন। সত্তরের দশকে নেদারল্যান্ডস এবং আয়াক্সের ‘টোটাল ফুটবল’ দর্শনের প্রবক্তা ছিলেন তিনি। ‘ক্রুইফ টার্ন’ নামে তার একটি বিশেষ মুভ ফুটবল বিশ্বে আজও সমাদৃত।

অর্জন ও প্রভাব:

  • ক্লাব ক্যারিয়ার: আয়াক্সের হয়ে টানা তিনটি ইউরোপিয়ান কাপ (চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পূর্বসূরি) জিতেছেন। পরে বার্সেলোনায় যোগ দিয়ে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে ক্লাবের ডিএনএ বদলে দেন।
  • আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসকে ফাইনালে তোলেন এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জেতেন।
  • দর্শন: খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে তার ফুটবল দর্শন বার্সেলোনার ‘লা মাসিয়া’ একাডেমি এবং পরবর্তীতে পেপ গার্দিওলার ‘তিকি-তাকা’ কৌশলের ভিত্তি স্থাপন করে।

ক্রুইফ তিনবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। শিরোপার চেয়েও ফুটবলে তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব তাকে অমর করে রেখেছে।

৬. ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার (জার্মানি)

‘ডার কাইজার’ বা ‘সম্রাট’ নামে পরিচিত ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার ডিফেন্ডারদের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছিলেন। তিনিই ‘সুইপার’ বা ‘লিবেরো’ পজিশনটিকে জনপ্রিয় করেন, যেখানে একজন ডিফেন্ডার রক্ষণভাগ থেকে আক্রমণে উঠে আসতে পারেন।

অর্জন ও প্রভাব:

  • বিশ্বকাপ সাফল্য: খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৭৪ সালে এবং কোচ হিসেবে ১৯৯০ সালে পশ্চিম জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ জেতেন। এই কৃতিত্ব মারিও জাগালোর পর তারই রয়েছে।
  • ক্লাব ক্যারিয়ার: বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে টানা তিনটি ইউরোপিয়ান কাপ জেতেন।
  • ব্যক্তিগত পুরস্কার: ডিফেন্ডার হওয়া সত্ত্বেও তিনি দুবার ব্যালন ডি’অর (১৯৭২, ১৯৭৬) জেতেন।

তার নেতৃত্ব, খেলার বুঝ এবং কৌশলগত দক্ষতা তাকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার এবং পরিপূর্ণ ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

৭. আলফ্রেডো ডি স্টেফানো (আর্জেন্টিনা/স্পেন)

রিয়াল মাদ্রিদের স্বর্ণযুগের স্থপতি ছিলেন আলফ্রেডো ডি স্টেফানো। তাকে ইতিহাসের সবচেয়ে পরিপূর্ণ ফুটবলারদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি মাঠের যেকোনো পজিশনে খেলতে পারতেন এবং সমানভাবে কার্যকর ছিলেন।

অর্জন ও প্রভাব:

  • ক্লাব সাফল্য: রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে টানা পাঁচটি ইউরোপিয়ান কাপ (১৯৫৬-১৯৬০) জেতেন এবং প্রত্যেকটি ফাইনালে গোল করার বিরল কৃতিত্ব দেখান।
  • ব্যক্তিগত পুরস্কার: ১৯৫৭ এবং ১৯৫৯ সালে ব্যালন ডি’অর জেতেন।
  • গোল স্কোরিং: রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৩৯৬ ম্যাচে ৩০৮ গোল করেন এবং দীর্ঘদিন ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন।

পেলে এবং ম্যারাডোনার পূর্ববর্তী যুগে তিনিই ছিলেন বিশ্বের অবিসংবাদিত সেরা খেলোয়াড়।

৮. রোনালদো নাজারিও (ব্রাজিল)

‘এল ফেনোমেনো’ বা ‘দ্য ফেনোমেনন’ নামে পরিচিত রোনালদো ছিলেন গতি, শক্তি এবং ফিনিশিং-এর এক অবিশ্বাস্য মিশ্রণ। যদি মারাত্মক চোট তার ক্যারিয়ারকে বারবার বাধাগ্রস্ত না করত, তবে তিনি হয়তো এই তালিকার আরও উপরে থাকতেন।

অর্জন ও প্রভাব:

  • বিশ্বকাপ সাফল্য: ১৯৯৪ এবং ২০০২ সালে ব্রাজিল দলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতেন। ২০০২ বিশ্বকাপে ৮ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতেন এবং দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে মূল ভূমিকা পালন করেন।
  • ক্লাব ক্যারিয়ার: পিএসভি, বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান এবং রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। বার্সেলোনার হয়ে এক মৌসুমে (১৯৯৬-৯৭) ৪৯ ম্যাচে ৪৭ গোল করার অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়েন।
  • ব্যক্তিগত পুরস্কার: তিনবার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় এবং দুবার ব্যালন ডি’অর জেতেন।

চোটের সাথে লড়াই করেও তিনি যা অর্জন করেছেন, তা তাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

৯. জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স)

মাঠের ‘শিল্পী’ হিসেবে পরিচিত জিনেদিন জিদান ছিলেন তার প্রজন্মের সেরা মিডফিল্ডার। তার বল কন্ট্রোল, ভিশন এবং বড় ম্যাচের পারফর্মার হিসেবে খ্যাতি ছিল কিংবদন্তিতুল্য। তার খেলার মধ্যে এক ধরনের শৈল্পিক সৌন্দর্য ছিল।

অর্জন ও প্রভাব:

  • আন্তর্জাতিক সাফল্য: ফ্রান্সকে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ এবং ২০০০ সালের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাতে মূল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে দুটি গোল করেন।
  • ক্লাব সাফল্য: জুভেন্টাস এবং রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লিগ শিরোপা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন। ২০০২ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে তার করা ভলি গোলটি ইতিহাসের অন্যতম সেরা হিসেবে গণ্য হয়।
  • ব্যক্তিগত পুরস্কার: তিনবার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় এবং ১৯৯৮ সালে ব্যালন ডি’অর জেতেন।

১০. মিশেল প্লাতিনি (ফ্রান্স)

জিদানের পূর্বসূরি এবং ফরাসি ফুটবলের আরেক কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনি ছিলেন একজন অসাধারণ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তার গোল করার ক্ষমতা, ফ্রি-কিক এবং পাসিং ছিল বিশ্বমানের।

অর্জন ও প্রভাব:

  • ব্যক্তিগত সাফল্য: প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিনবার (১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৫) ব্যালন ডি’অর জেতেন।
  • আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ১৯৮৪ সালে ফ্রান্সকে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জেতান। সেই টুর্নামেন্টে তিনি রেকর্ড ৯টি গোল করেন।
  • ক্লাব ক্যারিয়ার: জুভেন্টাসের হয়ে ইউরোপিয়ান কাপ এবং একাধিক সিরি ‘আ’ শিরোপা জেতেন।

তার বুদ্ধিমত্তা এবং কৌশলগত দক্ষতা তাকে আশির দশকের সেরা খেলোয়াড়দের একজনে পরিণত করেছিল।

উপসংহার

সর্বকালের সেরা ফুটবলারের বিতর্কটি হয়তো কখনোই শেষ হবে না। প্রতিটি প্রজন্মের নিজস্ব নায়ক থাকে এবং তুলনা করা প্রায়শই কঠিন। পেলে ও ম্যারাডোনা তাদের সময়ে ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, অন্যদিকে মেসি ও রোনালদো পরিসংখ্যান এবং ধারাবাহিকতার এক নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছেন। ক্রুইফ এবং বেকেনবাওয়ারের মতো খেলোয়াড়রা খেলার কৌশলগত দিকে বিপ্লব এনেছেন। এই Top 10 Footballers of All Time -এর তালিকাটি তাদের অর্জন এবং খেলার ওপর তাদের গভীর প্রভাবের একটি স্বীকৃতি মাত্র। দিনের শেষে, সেরা কে, সেই সিদ্ধান্তটি ভক্তদের ব্যক্তিগত ভালো লাগার উপরেই ছেড়ে দেওয়া ভালো।

সাধারণ জিজ্ঞাস্য (FAQ)

১. ফিফার মতে সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে?

ফিফা ২০০০ সালে একটি অনলাইন ভোটের আয়োজন করে, যেখানে ডিয়েগো ম্যারাডোনা সবচেয়ে বেশি ভোট পান। তবে ফিফা একটি ‘ফুটবল ফ্যামিলি’ কমিটি এবং সাংবাদিকদের ভোটের মাধ্যমে পেলেকে যৌথভাবে ‘বিংশ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়’ হিসেবে ঘোষণা করে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে দুজনের নামই আসে।

২. লিওনেল মেসি এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মধ্যে কে সেরা?

এটি আধুনিক ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিতর্ক। পরিসংখ্যানের দিক থেকে দুজনেই অবিশ্বাস্য। মেসির রেকর্ড ৮টি ব্যালন ডি’অর এবং বিশ্বকাপ শিরোপা রয়েছে। অন্যদিকে, রোনালদোর রয়েছে ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। দুজনের খেলার ধরণ ভিন্ন এবং সেরা কে, তা নিয়ে ভক্ত ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

৩. পেলে কয়টি বিশ্বকাপ জিতেছেন?

পেলে ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি ফিফা বিশ্বকাপ জিতেছেন। তিনি ১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালে ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে এই শিরোপা জয় করেন।

৪. ‘টোটাল ফুটবল’ কী?

‘টোটাল ফুটবল’ (Total Football) একটি কৌশলগত দর্শন যেখানে মাঠের খেলোয়াড়রা কোনো নির্দিষ্ট পজিশনে সীমাবদ্ধ থাকেন না। যেকোনো খেলোয়াড় (গোলকিপার ছাড়া) প্রয়োজন অনুযায়ী দলের জন্য আক্রমণ, মধ্যমাঠ বা রক্ষণে খেলতে পারে। ১৯৭০-এর দশকে নেদারল্যান্ডস জাতীয় দল এবং আয়াক্স ক্লাব এই দর্শনকে জনপ্রিয় করে তোলে, যার প্রধান কারিগর ছিলেন কোচ রাইনাস মিশেলস এবং খেলোয়াড় ইয়োহান ক্রুইফ।

৫. সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডার কে?

এই প্রশ্নের উত্তরে একাধিক নাম উঠে আসে। তবে অনেকেই জার্মানির ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ারকে সেরা হিসেবে মানেন, কারণ তিনি ‘লিবেরো’ পজিশন তৈরি করে ডিফেন্সের ধারণাই বদলে দিয়েছিলেন। ইতালির পাওলো মালদিনি এবং ফ্রাঙ্কো বারেসির নামও এই তালিকায় ভাবে উচ্চারিত হয়।

About Author
Ani Roy

অনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশনে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগ এবং আজীবন শেখার প্রতি প্রতিশ্রুতি নিয়ে অনি নতুন শিক্ষামূলক পদ্ধতি ও প্র্যাকটিসগুলি অন্বেষণ করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার একাডেমিক যাত্রা তাকে শিক্ষার তত্ত্ব এবং ব্যবহারিক শিক্ষণ কৌশলগুলিতে দৃঢ় ভিত্তি প্রদান করেছে। অনি অন্তর্দৃষ্টি এবং দক্ষতা তার চিন্তাশীল লেখাগুলিতে প্রতিফলিত হয়, যা শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত ও তথ্যপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে লেখা। তিনি তার আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী কাজের মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে থাকেন।