Controversial countries ranked 2025: বিশ্বের মানচিত্রে কিছু দেশ রয়েছে যাদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি সর্বদাই ইতিবাচক থাকে, আবার কিছু দেশ আছে যাদের প্রতি বিশ্ববাসীর মনোভাব নেতিবাচক, এমনকি ঘৃণাত্মক। সম্প্রতি নিউজউইক ম্যাগাজিন ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ-এর গবেষণার ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত দেশগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে চীন শীর্ষস্থান দখল করেছে। আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবং জনমত জরিপের উপর ভিত্তি করে এই র্যাঙ্কিং করা হয়েছে, যেখানে দেশগুলোর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি বিশ্ববাসীর ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রতিফলন ঘটেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত দেশগুলির র্যাঙ্কিং
বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলি বিশ্বব্যাপী চলমান বিভিন্ন সংঘাতের কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ-এর তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত ১০টি দেশ হল:
-
চীন
-
যুক্তরাষ্ট্র
-
রাশিয়া
-
উত্তর কোরিয়া
-
ইসরায়েল
-
পাকিস্তান
-
ইরান
-
ইরাক
-
সিরিয়া
-
ভারত
এই তালিকায় চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া শীর্ষ তিন স্থান দখল করেছে। আসুন এই দেশগুলির বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাক।
২০২৫ সালে জনসংখ্যার প্রতিযোগিতায় ভারত বনাম চীন: কে হবে শীর্ষে?
চীন: বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ
চীন বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ হিসেবে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। এর পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:
স্বৈরাচারী শাসন: চীনের একনায়কতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা, বিশেষ করে জিনজিয়াং অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এর প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করেছে।
নজরদারি ব্যবস্থা: চীনের ব্যাপক নজরদারি ব্যবস্থা এবং ইন্টারনেট সেন্সরশিপের কারণে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে আগ্রাসন: চীনের আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি, বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে এবং তাইওয়ানের সাথে তার উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বিশ্বব্যাপী মনোভাব খারাপ করেছে।
হংকং, তাইওয়ান, ও মাকাউকে স্বাধীনতা না দেওয়া: চীনের এই অঞ্চলগুলির স্বায়ত্তশাসন অস্বীকার করার নীতি আন্তর্জাতিক সমালোচনার কারণ হয়েছে।
উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি আচরণ: চীনের উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি কঠোর নীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বিশ্বব্যাপী ঘৃণার কারণ হয়েছে।
পরিবেশগত সমস্যা: চীনের শিল্পায়ন নীতি বিশ্বব্যাপী দূষণে অবদান রাখার জন্য সমালোচিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, চীন তার “মেড ইন চাইনা ২০২৫” উদ্যোগের মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে মূল উপকরণগুলির চীনা-অভ্যন্তরীণ সামগ্রী ৭০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে, যা তার শিল্প খাতকে শক্তিশালী করছে।
যুক্তরাষ্ট্র: দ্বিতীয় সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। এর পিছনে কারণগুলি হল:
আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ: যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য সমালোচিত হয় এবং বহুক্ষেত্রে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য বৈদেশিক নীতিতে দ্বিমুখী আচরণের অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার: আমেরিকার বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার এবং বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেদের শক্তি প্রয়োগের প্রবণতা অনেক দেশের দ্বারা নেতিবাচকভাবে দেখা হয়।
রাজনৈতিক বিভাজন: গভীর রাজনৈতিক বিভাজন এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আমেরিকার বৈশ্বিক ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করেছে।
অস্ত্র সহিংসতা: দেশের অভ্যন্তরে বন্দুক সহিংসতা এবং অস্ত্রের প্রতি অতিমাত্রায় আসক্তি বিশ্বব্যাপী সমালোচনার কারণ হয়েছে।
সাংস্কৃতিক বৈষম্য: আমেরিকান সংস্কৃতি এবং দ্রুত খাবারের প্রতি অতিমাত্রায় আসক্তির কারণে ঘৃণার পাত্র হয়েছে।
রাশিয়া: তৃতীয় সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ
রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর কারণগুলি:
ইউক্রেন যুদ্ধ: ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ রাশিয়ার বৈশ্বিক অবস্থানকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে।
স্বৈরাচারী নেতৃত্ব: রাশিয়ার স্বৈরাচারী নেতৃত্ব, মিডিয়া দমন, এবং বিদেশে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ নেতিবাচক ধারণাকে আরও গভীর করেছে।
গণতান্ত্রিক অধিকার সীমিতকরণ: রাশিয়া সরকার ব্যক্তিগত অধিকার ও স্বাধীনতা এবং সাধারণভাবে গণতন্ত্রকে গুরুতরভাবে সীমিত করার জন্য পরিচিত।
“আগ্রাসী আচরণ”: বিশ্ব জনমতে রাশিয়াকে একটি “আগ্রাসী দেশ” হিসেবে দেখা হয়, বিশেষ করে তার প্রতিবেশী দেশগুলিতে সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে।
রাশিয়া নিজেকে বহুমেরুর বিশ্ব ব্যবস্থার প্রবক্তা হিসাবে দেখায়, যেখানে সকল “সভ্যতা” সমান, কিন্তু কেবল শক্তিশালী “সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র” সার্বভৌমত্ব ও নেতৃত্বের ভূমিকা পাওয়ার যোগ্য বলে দাবি করে।
উত্তর কোরিয়া: চতুর্থ সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ
উত্তর কোরিয়া বিশ্বের চতুর্থ সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এর কারণগুলি:
স্বৈরাচারী শাসন: কিম জং উনের নেতৃত্বে উত্তর কোরিয়া একটি নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত, যেখানে যথেচ্ছ শাস্তি, নির্যাতন, মৃত্যুদণ্ড, অন্যায় কারাদণ্ড, এবং জোরপূর্বক শ্রমের মাধ্যমে ভীতিপূর্ণ আনুগত্য বজায় রাখা হয়।
পারমাণবিক কর্মসূচি: উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন এবং মিসাইল পরীক্ষা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
ক্রমাগত আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ লঙ্ঘন: উত্তর কোরিয়া নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।
বিচ্ছিন্নতা ও স্বচ্ছতার অভাব: উত্তর কোরিয়ার বিচ্ছিন্নতা এবং স্বচ্ছতার অভাব তার বৈশ্বিক কুখ্যাতিতে অবদান রাখে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন: উত্তর কোরিয়া মৌলিক স্বাধীনতা, যেমন অভিব্যক্তি, সমাবেশ, এবং তথ্যের অ্যাক্সেসের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে।
ইসরায়েল: পঞ্চম সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ
ইসরায়েল বিশ্বের পঞ্চম সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। এর কারণগুলি:
ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত: দীর্ঘকালীন ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত ইসরায়েলের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করেছে।
বসতি বিস্তার: ইসরায়েলের বসতি বিস্তার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের জন্য সমালোচিত হয়েছে।
গাজায় সামরিক অভিযান: গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান প্রায়শই বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বন্দ্ব: ইসরায়েলের সর্বশেষ অক্টোবর ৭, ২০২৩ এর হামাসের আক্রমণের পর গাজায় যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সুরক্ষামূলক সমর্থনের কারণে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সমালোচনা সত্ত্বেও তার “কেবল আক্রমণাত্মক” কৌশল অব্যাহত রাখার সম্ভাবনা রয়েছ।
পাকিস্তান: ষষ্ঠ সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ
পাকিস্তান বিশ্বের ষষ্ঠ সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। এর কারণগুলি:
চরমপন্থী উপস্থিতি: পাকিস্তানকে চরমপন্থী উপাদান আশ্রয় দেওয়া এবং অস্থিরতার জন্য অভিযুক্ত করা হয়।
ভারতের সাথে সীমান্ত উত্তেজনা: ভারতের সাথে চলমান সীমান্ত উত্তেজনা ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমস্যাগুলি পাকিস্তানের নেতিবাচক ভাবমূর্তি গঠন করেছে।
সন্ত্রাসবাদ: সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগের কারণে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েছে।
উল্লেখ্যোগ্য যে, নাম্বেও’র ২০২৫ গ্লোবাল সেফটি ইনডেক্সে পাকিস্তান ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে উচ্চতর স্থান অর্জন করেছে, ৫৬.৩-এর নিরাপত্তা স্কোর সহ ৬৫তম স্থানে রয়েছে।
ইরান, ইরাক, সিরিয়া: ৭ম, ৮ম, এবং ৯ম সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ
ইরান, ইরাক এবং সিরিয়া যথাক্রমে বিশ্বের ৭ম, ৮ম, এবং ৯ম সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। এই দেশগুলির সম্পর্কে কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়:
ইরান:
-
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
-
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী হিসেবে অভিযোগ
-
২০২৫ সালে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং ট্রাম্পের ব্যবসা সংক্রান্ত চাপের মধ্যে রয়েছে
ইরাক:
-
দীর্ঘকালীন যুদ্ধ এবং অস্থিরতা
-
সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ
-
সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের উপস্থিতি
সিরিয়া:
-
গৃহযুদ্ধ এবং মানবতার সংকট
-
শরণার্থী সংকট
-
মানবাধিকার লঙ্ঘন
ভারত: দশম সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ
ভারত বিশ্বের দশম সবচেয়ে ঘৃণিত দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। এর কারণগুলি:
ধর্মীয় উত্তেজনা: ভারতে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় উত্তেজনা এবং সংখ্যালঘুদের চিকিত্সা সম্পর্কে উদ্বেগ।
ইন্টারনেট সেন্সরশিপ: ইন্টারনেট সেন্সরশিপের বিষয়ে উদ্বেগ ভারতের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করেছে।
সীমান্ত বিরোধ: চলমান সীমান্ত বিরোধ এবং অভ্যন্তরীণ অশান্তি ভারতের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিভাজন: অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজন এবং সামাজিক অসমতা।
নাম্বেও’র ২০২৫ গ্লোবাল সেফটি ইনডেক্সে ভারত ৫৫.৭-এর নিরাপত্তা স্কোর সহ ৬৬তম স্থানে রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত দেশগুলির তালিকা বিভিন্ন জটিল কারণের মিশ্রণের ফলাফল। এই র্যাঙ্কিংগুলি শুধুমাত্র সরকারী নীতিগুলিকেই প্রতিফলিত করে না – বরং তারা দেখায় কিভাবে একটি দেশের নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠানগুলি আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেখা হয়।
২০২৫ সালে, বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা বেশি – এবং তাই মতামতও। এই তালিকায় যে দেশগুলি রয়েছে তাদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা গড়ে উঠেছে তাদের রাজনৈতিক, সামরিক, বা সামাজিক পদক্ষেপের কারণে।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, এবং রাশিয়া – তিনটি বিশ্ব শক্তি – যে তালিকার শীর্ষে রয়েছে, এটি উল্লেখযোগ্য, কারণ এই দেশগুলি বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দেশগুলির নীতি এবং কর্মকাণ্ডগুলি সর্বদা বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলে, এবং তাদের আচরণ প্রায়শই নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং সমালোচনার অধীন থাকে।অবশেষে, এই র্যাঙ্কিংগুলি স্থির নয় এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে, কারণ দেশগুলি তাদের নীতি এবং আচরণে পরিবর্তন করে। তবে, এটি লক্ষণীয় যে, এই তালিকায় একবার স্থান পাওয়া দেশগুলির জন্য বিশ্বব্যাপী ধারণা পরিবর্তন করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।