স্টাফ রিপোর্টার
১৭ মার্চ ২০২৫, ১:০০ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

কারা সবচেয়ে বেশি মাংস খায়? বিশ্বের শীর্ষ ১০ মাংসভোজী দেশের গল্প

Top meat-consuming countries: মাংস – এই একটি শব্দই আমাদের মুখে জল এনে দেয়, তাই না? কাবাবের ঝাঁঝালো গন্ধ থেকে শুরু করে রোস্টের সুস্বাদু স্বাদ, মাংস আমাদের খাদ্যাভ্যাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, পৃথিবীর কোন কোন দেশের মানুষ মাংসের প্রতি এতটাই আসক্ত যে তারা প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি মাংস খেয়ে ফেলে? আজকের এই লেখায় আমরা জানবো সম্পর্কে। চলুন, একটি সুস্বাদু যাত্রায় পা বাড়াই এবং দেখি কারা এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।

কারা মাংসের রাজা-রানী?

মাংস খাওয়ার ব্যাপারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের পছন্দ ও অভ্যাস ভিন্ন। কেউ গরুর মাংসের প্রেমে পড়ে, কেউ শুয়োরের মাংস ছাড়া দিন কাটাতে পারে না, আবার কেউ মুরগির মাংসে মজে থাকে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার – কিছু দেশ আছে যারা প্রতি বছর জনপ্রতি মাংস খাওয়ার পরিমাণে সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আমরা এই শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা তৈরি করেছি। এই তালিকায় থাকা দেশগুলোর মানুষের মাংসের প্রতি ভালোবাসা শুধু তাদের খাদ্যাভ্যাসই নয়, তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রারও প্রতিফলন ঘটায়।

গর্ভাবস্থায় হাঁসের মাংস: উপকারিতা ও অপকারিতা

বিশ্বের মাংসভোজীদের গল্প: শীর্ষ ১০ দেশের বিস্তারিত

মাংস খাওয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় জনপ্রতি বার্ষিক গড় হিসেবে, যাকে আমরা per capita meat consumption বলি। এই পরিমাণ কিলোগ্রামে মাপা হয় এবং এতে গরু, শুয়োর, মুরগি, মাছ, ভেড়া – সব ধরনের মাংসই অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে এই পরিমাণ শুধু উৎপাদন বা সরবরাহের ওপর নির্ভর করে না, বরং এটি বোঝায় মানুষ আসলে কতটা মাংস খায়। চলুন, এবার দেখে নিই কোন কোন দেশ এই তালিকায় রয়েছে এবং কেন তারা এত মাংস খায়।

১. হংকং – মাংসের স্বর্গ

হংকং এই তালিকার একেবারে শীর্ষে। এখানকার মানুষ প্রতি বছর গড়ে ১৩৬.৩১ কিলোগ্রাম মাংস খান। এটা প্রায় ৩০১ পাউন্ড! হংকংয়ের খাদ্যাভ্যাসে শুয়োরের মাংস (pork) এবং মুরগির মাংস (chicken) সবচেয়ে জনপ্রিয়। ক্যান্টনিজ রান্নায় এই দুই ধরনের মাংসের ব্যবহার এতটাই বেশি যে এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। তবে এই বেশি মাংস খাওয়ার পেছনে তাদের আর্থিক সমৃদ্ধি এবং শহুরে জীবনযাত্রাও একটি বড় কারণ।

২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – বার্গারের দেশ

দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আমেরিকা, যেখানে জনপ্রতি বার্ষিক মাংসের পরিমাণ ১২৪.৪৮ কিলোগ্রাম। গরুর মাংস (beef) এবং মুরগির মাংস এখানে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়। হ্যামবার্গার, স্টেক আর ফ্রায়েড চিকেন – এগুলো আমেরিকান সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে এই পরিমাণের একটি বড় অংশ নষ্টও হয়, যা পরিবেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

৩. অস্ট্রেলিয়া – গ্রিলের মাস্টার

অস্ট্রেলিয়ার মানুষ প্রতি বছর গড়ে ১২০ কিলোগ্রাম মাংস খান। এখানে গরুর মাংস এবং ভেড়ার মাংস (mutton) খুবই জনপ্রিয়। বারবিকিউ সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত এই দেশে মাংস রান্না করা একটি শিল্প। তাদের গবাদি পশুর প্রাচুর্য এবং উন্নত জীবনযাত্রা এই পরিমাণ বাড়িয়েছে।

৪. আর্জেন্টিনা – গরুর মাংসের রাজ্য

আর্জেন্টিনা চতুর্থ স্থানে রয়েছে, যেখানে জনপ্রতি ১১০.১৬ কিলোগ্রাম মাংস খাওয়া হয়। এখানে গরুর মাংসই সবচেয়ে বেশি প্রিয়। আর্জেন্টিনার স্টেক বিশ্ববিখ্যাত, এবং তাদের বিস্তীর্ণ তৃণভূমি গবাদি পশু পালনের জন্য আদর্শ। তবে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এই পরিমাণ কিছুটা কমছে।

৫. স্পেন – শুয়োরের মাংসের প্রেমিক

স্পেনে প্রতি বছর জনপ্রতি ৯৭ কিলোগ্রাম মাংস খাওয়া হয়। শুয়োরের মাংস এখানে অত্যন্ত জনপ্রিয়, বিশেষ করে ‘হ্যামন’ নামে পরিচিত একটি বিশেষ ধরনের শুকনো মাংস। স্প্যানিশ রান্নায় মাংসের ব্যবহার তাদের খাদ্য সংস্কৃতির একটি বড় অংশ।

৬. ইসরায়েল – মিশ্র স্বাদের দেশ

ইসরায়েলে জনপ্রতি ৯৬ কিলোগ্রাম মাংস খাওয়া হয়। এখানে গরুর মাংস, মুরগি এবং মাছ – সবই সমানভাবে জনপ্রিয়। তাদের খাদ্যাভ্যাসে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির মিশ্রণ দেখা যায়।

৭. কানাডা – ঠান্ডার দেশে মাংসের উৎসব

কানাডার মানুষ প্রতি বছর গড়ে ৯৪ কিলোগ্রাম মাংস খান। গরুর মাংস এবং শুয়োরের মাংস এখানে বেশি খাওয়া হয়। শীতের দেশে মাংস তাদের শক্তি জোগায় এবং খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।

৮. ইতালি – পাস্তার পাশে মাংস

ইতালিতে জনপ্রতি ৯০ কিলোগ্রাম মাংস খাওয়া হয়। শুয়োরের মাংস এবং গরুর মাংস এখানে জনপ্রিয়, বিশেষ করে সসেজ আর রোস্টে। ইতালিয়ান রান্নার স্বাদ মাংস ছাড়া অসম্পূর্ণ।

৯. জার্মানি – সসেজের জন্মভূমি

জার্মানিতে প্রতি বছর ৮৮ কিলোগ্রাম মাংস খাওয়া হয়। শুয়োরের মাংস এবং সসেজ এখানকার খাদ্যাভ্যাসের প্রাণ। জার্মানরা মাংসের সঙ্গে বিয়ার মিলিয়ে উৎসব উপভোগ করে।

১০. ফ্রান্স – স্বাদের দেশ

ফ্রান্স দশম স্থানে রয়েছে, যেখানে জনপ্রতি ৮৭ কিলোগ্রাম মাংস খাওয়া হয়। গরুর মাংস, মুরগি এবং শুয়োরের মাংস এখানে জনপ্রিয়। ফ্রেঞ্চ রান্নায় মাংসের সূক্ষ্ম ব্যবহার বিশ্ববিখ্যাত।

কেন এই দেশগুলো শীর্ষে?

এই দেশগুলো কেন এত মাংস খায়, এর পেছনে কয়েকটি স্পষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। ধনী দেশগুলোতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেশি, তাই তারা বেশি মাংস কিনতে পারে। দ্বিতীয়ত, সংস্কৃতি। আর্জেন্টিনার গরুর মাংস বা স্পেনের হ্যামন – এগুলো তাদের ঐতিহ্যের অংশ। তৃতীয়ত, উৎপাদন। যে দেশে গবাদি পশু বা মাংসের উৎপাদন বেশি, সেখানে খাওয়ার পরিমাণও বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকার মতো দেশগুলো মাংস উৎপাদনে শীর্ষে।

মাংস খাওয়ার পরিসংখ্যান: একটু গভীরে যাই

FAO-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে গড়ে জনপ্রতি মাংস খাওয়ার পরিমাণ ৩৪.১ কিলোগ্রাম। কিন্তু শীর্ষ ১০ দেশের এই পরিমাণ তার থেকে অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ:

  • হংকং: ১৩৬.৩১ কিলোগ্রাম
  • আমেরিকা: ১২৪.৪৮ কিলোগ্রাম
  • অস্ট্রেলিয়া: ১২০ কিলোগ্রাম

এই পরিসংখ্যান দেখায় যে ধনী দেশগুলোতে মাংস খাওয়ার প্রবণতা বেশি। তবে দরিদ্র দেশগুলোতে, যেমন ভারতে, এই পরিমাণ মাত্র ৪ কিলোগ্রাম। এর পেছনে অর্থনৈতিক অবস্থা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং খাদ্যাভ্যাসের পার্থক্য কাজ করে।

মুরগির মাংস কি Blood Pressure বাড়ায়? জানুন বিস্তারিত

মাংস খাওয়ার ভালো-মন্দ

মাংস আমাদের শরীরে প্রোটিন, আয়রন এবং ভিটামিন সরবরাহ করে। কিন্তু বেশি মাংস খাওয়ারও কিছু সমস্যা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত লাল মাংস (red meat) হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। আবার, মাংস উৎপাদন পরিবেশের ওপরও চাপ ফেলে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ১৪.৫% আসে পশুপালন থেকে। তাই এই শীর্ষ দেশগুলোর জন্য পরিবেশবান্ধব উপায়ে মাংস খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

এই তালিকা দেখে আমরা বুঝতে পারি যে মাংস খাওয়া শুধু খাদ্যের বিষয় নয়, এটি একটি দেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি। আমরা যদি আমাদের খাদ্যাভ্যাসে ভারসাম্য আনতে পারি, তাহলে শরীর এবং পরিবেশ – দুটোই সুস্থ থাকবে। আপনি কি মনে করেন? আপনার দেশে মাংস খাওয়ার অভ্যাস কেমন? এই গল্প শেয়ার করে আমাদের জানান!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কারা সবচেয়ে বেশি মাংস খায়? বিশ্বের শীর্ষ ১০ মাংসভোজী দেশের গল্প

শহীদলিপি: বাংলা কম্পিউটার কিবোর্ডের হারানো গল্প যা একটি যুগের সূচনা করেছিল

ফ্রান্সে ২০২৫ সালে কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং বেতন কত: আপনার স্বপ্নের গন্তব্যের পথে একটি গাইড

স্বপ্নে শাপলা ফুল দেখলে কি হয়? জানুন বিস্তারিত

১৭ মার্চ ২০২৫: আপনার রাশির ভাগ্য কী বলছে জানুন আজকের রাশিফলে

ক্রিকেটের নতুন মহারণ! ৪৫০০ কোটির টি২০ লিগে আইপিএলের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রস্তুতি

ভারতের টাকার নোটে লুকিয়ে থাকা ঐতিহ্য: ছবির গল্প ও তাৎপর্য

খাকি ২: পুলিশের ভূমিকায় সৌরভ গাঙ্গুলি, অভিনয়ে নতুন অধ্যায় শুরু?

বালোচিস্তানে বিদ্রোহের আগুন: কনভয় ও বাসে হামলায় দু’দিনে ৯৫ সেনার মৃত্যু!

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুখবর: ভারতে আসছে ইনসুলিন ইনহেলার, জানুন এর ব্যবহার

১০

চৈত্র মাসের উৎসব: নীল পুজো, চড়ক ও বাসন্তী পুজোর মাহাত্ম্য ও তারিখ

১১

হরমনপ্রীতের ঝড়ো ব্যাটিং, ফাইনালে দিল্লিকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার WPL চ্যাম্পিয়ন মুম্বই!

১২

বাংলার রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণ: মুসলিম তোষণের ছায়ায় উগ্র হিন্দুত্ববাদের জাগরণ

১৩

শাহবাগ-শাপলা দ্বন্দ্বের ছায়া আবারো বাংলাদেশের আকাশে

১৪

৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: গবেষণা ও বাস্তব প্রয়োগের গাইডলাইন

১৫

কক্সবাজার: সমুদ্রের কোলে প্রকৃতির অপরূপ দর্শন

১৬

মেষ রাশির আরাধ্য দেবতা: কে তিনি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১৭

নবজাতকের জন্ডিসে মায়ের করণীয়: লক্ষণ থেকে চিকিৎসার সম্পূর্ণ গাইডলাইন

১৮

বরিশালের দর্শনীয় স্থান: প্রকৃতি ও ঐতিহ্যের অপরূপ মেলবন্ধন

১৯

আজকের রাশিফল ১৬ মার্চ ২০২৫: আপনার ভাগ্য কী বলছে জানুন এক নজরে!

২০
close