Richest state in India: ভারতের অর্থনৈতিক পরিষদের (EAC-PM) একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে মহারাষ্ট্র এখনও ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য হিসেবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। তবে গত কয়েক বছরে রাজ্যটির অবদান কিছুটা কমেছে। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের মাথাপিছু আয় জাতীয় গড়ের ১৫০.৭% হয়েছে, যা ৬৩ বছর আগে ১৩৩.৭% ছিল।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উদারীকরণের পর থেকে দক্ষিণের রাজ্যগুলি দ্রুত অগ্রগতি করেছে। কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কেরালা এবং তামিলনাড়ু – এই পাঁচটি রাজ্য মিলে এখন ভারতের মোট জিডিপির ৩০% অবদান রাখছে। ১৯৯১ সালে এই রাজ্যগুলির মাথাপিছু আয় জাতীয় গড়ের নিচে ছিল, কিন্তু এখন তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।কর্ণাটক তার প্রযুক্তি খাতের কারণে দ্রুত অগ্রগতি করেছে। তামিলনাড়ুর শিল্প কেন্দ্রগুলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৪ সালে গঠিত ভারতের সবচেয়ে নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানাও অর্থনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে।অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
The Rise of Leftism in India: ভারতে বামপন্থা কেন দিন দিন বেশি জনপ্রিয় [রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
The Rise of Leftism in India: ভারতে বামপন্থা কেন দিন দিন বেশি জনপ্রিয় [রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
১৯৬০-৬১ সালে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের জিডিপিতে ১০.৫% অবদান রাখত, যা এখন কমে ৫.৬% হয়েছে। রাজ্যটির মাথাপিছু আয় একসময় জাতীয় গড়ের ১২৭.৫% ছিল, যা এখন ৮৩.৭% এ নেমে এসেছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ এখন রাজস্থান ও ওড়িশার পিছনে চলে গেছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গ গত কয়েক দশক ধরে তার আপেক্ষিক অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতায় ক্রমাগত অবনতি অনুভব করেছে।” সমুদ্র উপকূলের অধিকাংশ রাজ্য সমৃদ্ধ হলেও পশ্চিমবঙ্গ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের এই অবনতির কারণ খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
রাজ্যটির কৌশলগত অবস্থান ও ঐতিহাসিক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কেন এমন হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উদারীকরণের পর রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং শিল্পনীতি এর পেছনে কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক অবনতি একটি জটিল বিষয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিল্পায়নের অভাব এবং দক্ষ জনশক্তির পলায়ন এর পেছনে কাজ করেছে। রাজ্যের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে সুশাসন, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে হরিয়ানা ও দিল্লি ভালো করছে।
দিল্লির মাথাপিছু আয় সবসময়ই দেশের সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায়, সবুজ বিপ্লবের সুবিধাভোগী পাঞ্জাবের আপেক্ষিক মাথাপিছু আয় ২০০০ সালের পর থেকে কমেছে, অন্যদিকে হরিয়ানা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পাঞ্জাব একসময় সবুজ বিপ্লবের সুফল পেয়েছিল। ১৯৭১ সালের মধ্যে রাজ্যটির মাথাপিছু আয় জাতীয় গড়ের ১৬৯% হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর থেকে কৃষি খাতে অগ্রগতি স্থির হয়ে গেছে। তবুও পাঞ্জাবের মাথাপিছু আয় এখনও জাতীয় গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি।”অন্যদিকে হরিয়ানার মাথাপিছু আয় বেড়ে জাতীয় গড়ের ১৭৬.৮% হয়েছে। এই বৃদ্ধির বেশিরভাগই ২০০০ সালের পর থেকে হয়েছে। একসময় পাঞ্জাবের পিছনে থাকা হরিয়ানা এখন প্রধান অর্থনৈতিক সূচকগুলিতে পাঞ্জাবকে ছাড়িয়ে গেছে।
গরিব রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের অবস্থা উদ্বেগজনক। ১৯৬০-৬১ সালে উত্তরপ্রদেশ ভারতের জিডিপিতে ১৪% অবদান রাখত, যা এখন কমে ৯.৫% হয়েছে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী দেশের তৃতীয় সর্বাধিক জনসংখ্যার রাজ্য বিহার কেবল ৪.৩% অবদান রাখছে।অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ বলেছেন, “উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মতো জনবহুল রাজ্যগুলির অর্থনৈতিক অগ্রগতি না হলে ভারতের সামগ্রিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এই রাজ্যগুলিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ নজর দিতে হবে।”ওড়িশার ক্ষেত্রে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে। রাজ্যটি তার পিছিয়ে পড়া ভাবমূর্তি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে।
Earn Money Through Mobile: আপনার পকেটে থাকা ডিভাইসটি হয়ে উঠুক আয়ের উৎস
Earn Money Through Mobile: আপনার পকেটে থাকা ডিভাইসটি হয়ে উঠুক আয়ের উৎস
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক বলেছেন, “আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছি। এর ফলে রাজ্যের অর্থনীতি গতি পেয়েছে।”প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উদারীকরণের পর থেকে বিভিন্ন রাজ্য ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক পথ অনুসরণ করেছে। দক্ষিণের রাজ্যগুলি সংস্কারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে জাতীয় প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তা হয়নি।অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, “রাজ্যগুলির মধ্যে এই বৈষম্য উদ্বেগজনক। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে এই বৈষম্য কমাতে সমন্বিত প্রচেষ্টা নিতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া গতি নেই।”
সামগ্রিকভাবে, প্রতিবেদনটি দেখিয়েছে যে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে। দক্ষিণের রাজ্যগুলি এগিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পূর্বের কিছু রাজ্য পিছিয়ে পড়ছে। এই বৈষম্য কমানো এবং সমতাভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা ভারত সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।