সিলেট, বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই শহরের পরিচিতি শুধু হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার, জাফলংয়ের স্বচ্ছ পানি বা রাতারগুলের সোয়াম্প ফরেস্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সিলেটের আসল প্রাণ লুকিয়ে আছে তার অলিগলিতে, যেখানে প্রতিদিন তৈরি হয় হাজারো স্বাদের গল্প। এখানকার স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবার শুধু ক্ষুধা মেটানোর উপায় নয়, বরং এটি সিলেটের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঝাল, মিষ্টি, টক মিশ্রণে এখানকার প্রতিটি খাবার আপনাকে এক নতুন স্বাদের জগতে নিয়ে যাবে। এই প্রতিবেদনে আমরা সিলেটের সেরা ১০টি স্ট্রিট ফুডের সন্ধানে বের হব, যা আপনার সিলেট ভ্রমণকে আরও স্মরণীয় করে তুলবে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর মতে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন রাস্তার খাবার খায়, যা স্থানীয় অর্থনীতি ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সিলেটের স্ট্রিট ফুড: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
সিলেটের রাস্তার খাবার মানেই এক বিশাল বৈচিত্র্য। একদিকে যেমন আছে মুচমুচে ফুচকা আর চটপটি, তেমনই আছে সাতকরা দিয়ে তৈরি বিশেষ আচারের স্বাদ। এখানকার খাবারে স্থানীয় মশলার ব্যবহার এটিকে অন্য সব অঞ্চলের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সিলেটের সেই বিখ্যাত ১০টি স্ট্রি-ফুড সম্পর্কে, যা না খেলে আপনার সিলেট ভ্রমণই অপূর্ণ থেকে যাবে।
১. ফুচকা ও চটপটি: সিলেটের আত্মার স্বাদ
বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তের মতো সিলেটেও ফুচকা ও চটপটি তুমুল জনপ্রিয়। তবে সিলেটের ফুচকার বিশেষত্ব হলো এর টক পানি এবং পুরের বৈচিত্র্য। এখানকার ফুচকা বিক্রেতারা তেঁতুলের টকের সাথে পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, লেবুর রস এবং সিলেটের বিখ্যাত ‘সাতকরা’র মিশ্রণ ঘটান, যা এর স্বাদকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।
ফুচকা কেন খাবেন?
ডাল, আলু, পেঁয়াজ, মরিচ আর মশলার মিশ্রণে তৈরি পুর যখন গোলগাল মুচমুচে ফুচকার ভেতরে প্রবেশ করে এবং তারপর টক পানিতে ডুবিয়ে মুখে দেওয়া হয়, তখন এক স্বর্গীয় অনুভূতি হয়। ঝাল-টক-মিষ্টির এই অপূর্ব সমন্বয় যে কারও মন ভালো করে দিতে পারে।
কোথায় পাবেন?
সিলেটের প্রায় সব জায়গায় ফুচকার দোকান পাওয়া গেলেও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) গেট, জিন্দাবাজার, এবং এমসি কলেজের সামনের ফুচকা বিশেষভাবে বিখ্যাত। এখানকার বিক্রেতারা পরিচ্ছন্নতার দিকেও বিশেষ নজর রাখেন।
বিশেষত্ব:
সিলেটের কিছু দোকানে ডিমের কুচি দিয়ে সাজানো চটপটি পাওয়া যায়, যা এর পুষ্টিগুণ এবং স্বাদ দুটোই বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন-এর বিভিন্ন প্রচারণায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি এই স্ট্রিট ফুডগুলোকেও তুলে ধরা হয়, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
২. আখনি ও খিচুড়ি: সিলেটের ঐতিহ্যবাহী নাস্তা
আখনি মূলত সুগন্ধি চাল ও মাংসের মিশ্রণে তৈরি এক ধরনের পোলাও, যা খিচুড়ির কাছাকাছি। তবে এর রান্নার প্রক্রিয়া এবং মশলার ব্যবহার সম্পূর্ণ ভিন্ন। সিলেটে সকালের নাস্তা বা বিকালের আড্ডায় আখনির জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। এটি সাধারণত গরুর মাংস বা মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়।
আখনির স্বাদ:
আখনি খেতে অনেকটা বিরিয়ানির মতো হলেও এটি বেশ হালকা। সুগন্ধি কালিজিরা বা চিনিগুঁড়া চালের সাথে মাংসের নরম টুকরো, গরম মশলার ঘ্রাণ এবং পেঁয়াজ বেরেস্তার মিষ্টি স্বাদ একসাথে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা দেয়। এর সাথে বেগুন ভাজা বা সালাদ পরিবেশন করা হয়।
জনপ্রিয়তা ও অর্থনীতি:
সিলেটের অর্থনীতিতে স্ট্রিট ফুড বিক্রেতাদের একটি বড় অবদান রয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে রাস্তার খাবার বিক্রেতারা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (GDP) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আখনি বিক্রেতারা এই অর্থনীতিরই একটি অংশ। দ্য ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতির অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
কোথায় সেরা আখনি পাওয়া যায়?
জিন্দাবাজারের ‘পানসী রেস্টুরেন্ট’ বা ‘পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট’ এর মতো বড় রেস্তোরাঁগুলোতে যেমন ভালো আখনি পাওয়া যায়, তেমনি শহরের অলিগলিতে অনেক ছোট দোকানেও অসাধারণ স্বাদের আখনি তৈরি হয়। বিশেষ করে দরগাহ গেট এলাকার সকালের নাস্তার দোকানগুলো আখনির জন্য বিখ্যাত।
৩. চিকেন বা বিফ চাপ: মাংসপ্রেমীদের জন্য স্বর্গ
সিলেটের স্ট্রিট ফুডের তালিকায় চাপ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। নরম তুলতুলে পরোটার সাথে মশলায় মাখানো, ভাজা মাংসের পাতলা টুকরো—এই হলো সিলেটের বিখ্যাত চাপ। এটি সাধারণত মুরগি বা গরুর মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়।
প্রস্তুত প্রণালী:
মাংসের পাতলা স্লাইসকে বিভিন্ন মশলা, যেমন—আদা, রসুন, জিরা, গরম মশলা, এবং টক দই দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ম্যারিনেট করে রাখা হয়। এরপর গরম তাওয়ায় তেল দিয়ে ভাজা হয়। এর ফলে মাংসের বাইরের অংশটা মুচমুচে আর ভেতরের অংশটা রসালো থাকে।
কেন এত জনপ্রিয়?
পরোটার সাথে গরম গরম চাপের স্বাদ এক কথায় অসাধারণ। এটি যেমন পেট ভরা রাখে, তেমনি স্বাদেও অতুলনীয়। সন্ধ্যার পর সিলেটের বিভিন্ন ফুড কোর্ট এবং রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে চাপ খাওয়ার জন্য মানুষের ভিড় জমে ওঠে।
সেরা ঠিকানা:
সিলেট শহরের নাইওরপুল এবং কুমারপাড়া এলাকায় বেশ কিছু বিখ্যাত চাপের দোকান রয়েছে। এখানকার দোকানগুলোতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে চাপ তৈরি করা হয়।
৪. সাতকরার আচার: সিলেটের নিজস্ব স্বাদ
সাতকরা হলো লেবু জাতীয় একটি ফল, যা কেবল সিলেট অঞ্চলেই পাওয়া যায়। এর তীব্র সুগন্ধ এবং টক-তেতো স্বাদের জন্য এটি বিখ্যাত। সাতকরা দিয়ে মাংস রান্না সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হলেও, এর আচার স্ট্রিট ফুড হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আচারের বৈচিত্র্য:
সাতকরার আচার বিভিন্ন প্রকারের হয়—তেলের আচার, ঝাল আচার, মিষ্টি আচার ইত্যাদি। এই আচার দিয়ে ঝালমুড়ি মাখানো হয় বা চটপটির সাথেও খাওয়া হয়। এর স্বতন্ত্র গন্ধ যেকোনো সাধারণ খাবারের স্বাদকেও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা:
সাতকরা ভিটামিন সি-তে ভরপুর এবং এর অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। বিবিসি নিউজ বাংলা-এর একটি প্রতিবেদনে সিলেটের এই ঐতিহ্যবাহী ফলের গুণাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তাই, এই আচার শুধু মুখরোচকই নয়, স্বাস্থ্যকরও বটে।
কোথায় কিনবেন?
সিলেটের বন্দর বাজার এবং জিন্দাবাজারের বিভিন্ন দোকানে হাতে তৈরি সাতকরার আচার পাওয়া যায়। পর্যটকরা প্রায়ই এখান থেকে প্রিয়জনদের জন্য আচার কিনে নিয়ে যান।
৫. ঝালমুড়ি: চিরচেনা স্বাদের নতুন রূপ
ঝালমুড়ি বাংলাদেশের সব জায়গাতেই পাওয়া যায়, কিন্তু সিলেটের ঝালমুড়ির বিশেষত্ব হলো এর মশলা এবং বিভিন্ন উপকরণের ব্যবহার। এখানে শুধু পেঁয়াজ, মরিচ, চানাচুর দিয়েই ঝালমুড়ি শেষ হয় না, এর সাথে যোগ হয় সেদ্ধ ছোলা, মটর, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, এবং অবশ্যই সাতকরার আচার বা জলপাইয়ের তেল।
স্বাদের ভিন্নতা:
এই সমস্ত উপকরণের মিশ্রণের ফলে সিলেটের ঝালমুড়ির স্বাদ অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে আলাদা হয়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে এবং পার্কের পাশে ঝালমুড়ি বিক্রেতাদের দেখা যায়, যাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু গোপন মশলা থাকে।
টেবিলের মাধ্যমে ঝালমুড়ির উপকরণ:
উপকরণ | পরিমাণ (আনুমানিক) | বৈশিষ্ট্য |
মুড়ি | ১ কাপ | মুচমুচে ও টাটকা |
চানাচুর | আধা কাপ | ঝাল ও নোনতা |
পেঁয়াজ কুচি | ২ চামচ | মিষ্টি ও ঝাঁঝালো |
কাঁচা মরিচ | স্বাদমতো | ঝালের উৎস |
সেদ্ধ ছোলা/মটর | ২ চামচ | পুষ্টিকর ও নরম |
সাতকরার আচার | ১ চামচ | টক ও সুগন্ধি |
সরিষার তেল | ১ চামচ | ঝাঁঝালো গন্ধ |
৬. ডিম টোস্ট ও স্যুপ: শীতের সন্ধ্যার সঙ্গী
শীতের সন্ধ্যায় বা বৃষ্টির দিনে গরম গরম ডিম টোস্ট আর চিকেন স্যুপের চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। সিলেটের রাস্তার পাশের ছোট ছোট দোকানগুলোতে এই খাবার দুটি ব্যাপক জনপ্রিয়।
ডিম টোস্ট:
ডিমের গোলায় পাউরুটির টুকরো ডুবিয়ে তেলে ভেজে তৈরি করা হয় এই খাবার। তবে সিলেটের বিক্রেতারা এর সাথে যোগ করেন পেঁয়াজ, মরিচ এবং বিশেষ ধরনের চাট মশলা, যা এর স্বাদকে দ্বিগুণ করে তোলে।
স্যুপ:
এখানে সাধারণত চিকেন বা ভেজিটেবল কর্ন স্যুপ পাওয়া যায়। ছোট ছোট বাটিতে করে গরম স্যুপ পরিবেশন করা হয়, যা ঠান্ডায় শরীরকে উষ্ণ রাখে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, গরম স্যুপ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে, যা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO)-এর স্বাস্থ্য নির্দেশিকাগুলোর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
জনপ্রিয় স্থান:
রিকাবিবাজার এবং চৌহাট্টা এলাকার দোকানগুলোতে খুব সুস্বাদু ডিম টোস্ট ও স্যুপ পাওয়া যায়।
৭. চনার ডালের বড়া: মুচমুচে বিকালের নাস্তা
ডাল বড়া বা পেঁয়াজু বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত নাস্তা। তবে সিলেটে চনার ডাল দিয়ে তৈরি বড়ার একটি আলাদা কদর রয়েছে। এটি আকারে কিছুটা বড় এবং অনেক বেশি মুচমুচে হয়।
কেন খাবেন?
বিকেলে চায়ের সাথে গরম গরম ডাল বড়ার কোনো তুলনা হয় না। চনার ডাল বেটে তার সাথে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা এবং বিভিন্ন মশলা মিশিয়ে ডুবো তেলে ভাজা হয়। এর বাইরের অংশটা হয় সোনালি এবং মুচমুচে, আর ভেতরটা থাকে নরম।
সাশ্রয়ী ও পুষ্টিকর:
এই খাবারটি দামে খুবই সস্তা এবং ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকায় এটি একটি পুষ্টিকর নাস্তাও বটে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্ট্রিট ফুড প্রায়শই সাশ্রয়ী মূল্যে পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে, যেমনটি বিশ্বব্যাংক (World Bank)-এর বিভিন্ন প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কোথায় পাবেন?
সিলেটের রাস্তার মোড়ে এবং বাজারের পাশে এই ডাল বড়ার দোকান দেখতে পাওয়া যায়। আম্বরখানা এবং শিবগঞ্জ এলাকায় সুস্বাদু বড়া পাওয়া যায়।
৮. পুরি (ডাল ও আলু): সকালের সেরা আয়োজন
সিলেটের মানুষের সকালটা শুরু হয় গরম গরম পুরি আর ভাজি দিয়ে। এখানকার পুরিগুলো আকারে ছোট এবং পাতলা হয়। ভেতরে ডাল বা আলুর পুর দেওয়া থাকে।
স্বাদের জাদু:
গরম তেলে ভাজা ফুলকো পুরির সাথে যখন ছোলার ডালের তরকারি বা আলুর দম পরিবেশন করা হয়, তখন এক অসাধারণ স্বাদের সৃষ্টি হয়। এর সাথে প্রায়ই এক কাপ গরম দুধ চা থাকে। এই নাস্তাটি কেবল সুস্বাদুই নয়, সারাদিনের জন্য শক্তিও জোগায়।
ঐতিহ্যের অংশ:
পুরি-ভাজি সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী সকালের নাস্তা। শত শত বছর ধরে এই খাবারটি এখানকার মানুষের জীবনের অংশ হয়ে আছে। বড় বড় রেস্তোরাঁর পাশাপাশি রাস্তার ধারের ছোট দোকানগুলোতেও এর জনপ্রিয়তা কম নয়।
বিখ্যাত দোকান:
দরগাহ গেটের আশেপাশের দোকানগুলোতে এবং বন্দর বাজারের ভেতরের গলিগুলোতে খুব ভালো মানের পুরি পাওয়া যায়।
৯. জিলাপি ও মিষ্টি: মিষ্টিপ্রেমীদের আনন্দ
সিলেট অঞ্চল মিষ্টির জন্যও বিখ্যাত। রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে গরম গরম, মুচমুচে জিলাপি ভাজা হয়, যা দেখলেই জিভে জল চলে আসে।
জিলাপির বিশেষত্ব:
সিলেটের জিলাপিগুলো প্যাঁচানো এবং রসে টইটম্বুর থাকে। গরম অবস্থায় এর স্বাদ সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায়। চিনির শিরার মিষ্টি আর জিলাপির মুচমুচে ভাব এক চমৎকার অনুভূতি তৈরি করে।
অন্যান্য মিষ্টি:
জিলাপি ছাড়াও রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে বালুশাহী, চমচম, এবং বিভিন্ন ধরনের পিঠাও পাওয়া যায়। উৎসবের সময়, যেমন—ঈদের আগে, এই দোকানগুলোতে ভিড় উপচে পড়ে।
মিষ্টির বাজার:
বাংলাদেশের মিষ্টি শিল্প একটি বড় অর্থনৈতিক খাত। ফোর্বস (Forbes) বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনে প্রায়ই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের প্রশংসা করা হয়, যার মধ্যে মিষ্টি অন্যতম।
কোথায় খাবেন?
জিন্দাবাজার এবং এর আশেপাশের এলাকায় অনেক পুরোনো এবং বিখ্যাত মিষ্টির দোকান রয়েছে যেখানে আপনি গরম জিলাপির স্বাদ নিতে পারবেন।
১০. লেবুর শরবত ও চা: সিলেটের প্রাণবন্ত পানীয়
সিলেটকে বলা হয় চায়ের দেশ। এখানকার রাস্তার পাশের টং দোকানগুলোর চায়ের কোনো তুলনা হয় না। দুধ চা, রং চা, লেবু চা, আদা চা—কত রকমের চায়ের যে সম্ভার!
সিলেটি চায়ের বিশেষত্ব:
সিলেটের চায়ের লিকার হয় খুব কড়া এবং এর একটি নিজস্ব গন্ধ রয়েছে। এখানকার চায়ের সাথে প্রায়ই ‘সিলেটি কমলা’ বা লেবুর রস যোগ করা হয়, যা এক সতেজকারক অনুভূতি দেয়।
স্বাস্থ্যকর পানীয়:
গরম চায়ের পাশাপাশি, এখানকার লেবুর শরবতও খুব জনপ্রিয়। গরমে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত মুহূর্তেই ক্লান্তি দূর করে দেয়। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
চা বাগানের প্রভাব:
শ্রীমঙ্গল ও সিলেটের চা বাগানগুলো শুধু পর্যটনকেই আকর্ষণ করে না, বরং এটি এ অঞ্চলের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করেছে। রাস্তার ধারের এই চায়ের দোকানগুলো স্থানীয় মানুষের আড্ডা ও সামাজিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু।
স্বাদের এক রঙিন ক্যানভাস
সিলেটের স্ট্রিট ফুড শুধু খাবারের তালিকা নয়, এটি একটি জীবন্ত সংস্কৃতি। প্রতিটি খাবারের পেছনে লুকিয়ে আছে ঐতিহ্য, মানুষের আবেগ এবং স্থানীয় অর্থনীতির গল্প। এই খাবারগুলো সিলেটের মাটির গন্ধের মতোই খাঁটি। তাই পরেরবার যখন সিলেটে যাবেন, তখন শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেই ফিরে আসবেন না, বরং শহরের অলিগলিতে হারিয়ে গিয়ে এই অসাধারণ স্বাদের জগতেরও সন্ধান নেবেন। কারণ এই স্বাদগুলোই আপনার ভ্রমণকে চিরকাল মনে রাখার মতো এক অভিজ্ঞতায় পরিণত করবে।