Popular biryani restaurants Kolkata: কলকাতার বিরিয়ানি শুধু একটি খাবার নয়, এটি একটি আবেগ। এই শহরের প্রতিটি গলিতে বিরিয়ানির সুগন্ধ ছড়িয়ে আছে। কলকাতার বিরিয়ানি অন্য কোনও শহরের বিরিয়ানির থেকে আলাদা – এখানে আলু এবং ডিম দেওয়া হয় যা এর স্বাদকে অনন্য করে তোলে। আজ আমরা আপনাদের জানাবো কলকাতার সেরা ৫টি বিরিয়ানির কথা, যেগুলো খেলে আপনার জিভে লেগে থাকবে।কলকাতার বিরিয়ানির ইতিহাস বেশ পুরনো।
১৮৫৬ সালে অযোধ্যার নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ যখন কলকাতায় নির্বাসিত হয়ে আসেন, তখন তিনি নিজের সাথে করে নিয়ে আসেন লক্ষ্ণৌয়ের বিখ্যাত আওয়াধি বিরিয়ানি। কিন্তু সেই সময় অর্থাভাবে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে তাতে আলু যোগ করা হয়। এভাবেই জন্ম নেয় কলকাতার বিখ্যাত আলু-ডিম বিরিয়ানি।
কলকাতার বিরিয়ানি বলতে প্রথমেই যে নামটি মনে আসে তা হল আরসালান। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই রেস্তোরাঁটি আজও কলকাতার বিরিয়ানি প্রেমীদের প্রথম পছন্দ। এখানকার বিরিয়ানিতে ব্যবহৃত চালের দানা লম্বা ও সরু, যা বিরিয়ানিকে আরও স্বাদযুক্ত করে তোলে। মাংসের টুকরোগুলি নরম ও রসালো। আলুটি সিদ্ধ করা হয় ঘি-এর মধ্যে, যা এর স্বাদকে আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০০ প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি হয় আরসালানে।
১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আমিনিয়া কলকাতার আরেকটি ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানির দোকান। এখানকার বিরিয়ানিতে ব্যবহৃত মশলার অনুপাত একটু বেশি, যা এর স্বাদকে আরও তীব্র করে তোলে। মাংসের টুকরোগুলি বড় আকারের এবং খুব নরম। আলুটি সিদ্ধ করা হয় কেশর মিশ্রিত তেলে, যা এর রঙকে সোনালি করে তোলে। প্রতিদিন গড়ে ৩০০০-৩৫০০ প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি হয় আমিনিয়ায়।
কলকাতার ট্রাম কোচগুলি হতে চলেছে রেস্তোরাঁ, বইয়ের দোকান ও জাদুঘর!
১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত শিরাজ কলকাতার আরেকটি বিখ্যাত বিরিয়ানির দোকান। এখানকার বিরিয়ানির বৈশিষ্ট্য হল এর হালকা সুগন্ধ। মশলার ব্যবহার কম থাকায় চালের স্বাদ বেশি পাওয়া যায়। মাংসের টুকরোগুলি মাঝারি আকারের এবং রসালো। আলুটি সিদ্ধ করা হয় দুধে, যা এর স্বাদকে মৃদু মিষ্টি করে তোলে। প্রতিদিন গড়ে ২৫০০-৩০০০ প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি হয় শিরাজে।
১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রয়্যাল কলকাতার সবচেয়ে পুরনো বিরিয়ানির দোকান। এখানকার বিরিয়ানির বৈশিষ্ট্য হল এর পুরনো ঢঙের স্বাদ। মশলার ব্যবহার মাঝারি, কিন্তু গোলাপজল ও কেওড়ার ব্যবহার বেশি থাকে। মাংসের টুকরোগুলি ছোট আকারের কিন্তু খুব নরম। আলুটি সিদ্ধ করা হয় পেঁয়াজের রসে, যা এর স্বাদকে আরও গভীর করে তোলে। প্রতিদিন গড়ে ২০০০-২৫০০ প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি হয় রয়্যালে।
১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত নিজাম কলকাতার আরেকটি জনপ্রিয় বিরিয়ানির দোকান। এখানকার বিরিয়ানির বৈশিষ্ট্য হল এর তেলতেলে ভাব। মশলার ব্যবহার বেশি থাকে, যা এর স্বাদকে তীব্র করে তোলে। মাংসের টুকরোগুলি বড় আকারের এবং রসালো। আলুটি সিদ্ধ করা হয় মাংসের রসে, যা এর স্বাদকে আরও সমৃদ্ধ করে। প্রতিদিন গড়ে ২০০০-২৫০০ প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি হয় নিজামে।কলকাতার এই ৫টি বিরিয়ানির দোকান শুধু তাদের স্বাদের জন্যই নয়, তাদের ঐতিহ্যের জন্যও বিখ্যাত। প্রতিটি দোকানের নিজস্ব রেসিপি আছে যা তারা বংশ পরম্পরায় বজায় রেখেছে।
এই দোকানগুলোতে শুধু বিরিয়ানি নয়, অন্যান্য মুঘলাই খাবারও পাওয়া যায় যেমন – রেজালা, চাপ, কাবাব ইত্যাদি।কলকাতার বিরিয়ানির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এর দাম। অন্যান্য মেট্রো শহরের তুলনায় কলকাতার বিরিয়ানি অনেক সস্তা। একটি পূর্ণাঙ্গ বিরিয়ানির দাম সাধারণত ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে থাকে, যা অন্য শহরে ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।কলকাতার বিরিয়ানি শুধু একটি খাবার নয়, এটি শহরের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি উৎসব, বিয়ে বা পার্টিতে বিরিয়ানি একটি অপরিহার্য আইটেম। এমনকি অনেক কলকাতাবাসী আছেন যারা প্রতি শুক্রবার বা শনিবার বিরিয়ানি খাওয়ার রেওয়াজ তৈরি করেছেন।
কলকাতার সেরা ৭টি ফুলের বাজার যা আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে
বিরিয়ানির এই জনপ্রিয়তার কারণে কলকাতায় প্রতি বছর ২৩ জুলাই “বিরিয়ানি দিবস” পালন করা হয়। এই দিনে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিরিয়ানি উৎসব আয়োজন করা হয় যেখানে বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি পরিবেশন করা হয়।কলকাতার বিরিয়ানি শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। একটি পূর্ণাঙ্গ বিরিয়ানি প্লেটে প্রায় ৭০০-৮০০ ক্যালোরি থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট থাকে। তবে নিয়মিত বিরিয়ানি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়, কারণ এতে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে।
শেষ কথা হল, কলকাতার বিরিয়ানি শুধু একটি খাবার নয়, এটি একটি অনুভূতি। এর প্রতিটি গ্রাসে লুকিয়ে আছে শহরের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি। তাই যদি আপনি কখনও কলকাতায় আসেন, তাহলে অবশ্যই এই ৫টি জায়গায় বিরিয়ানি খেয়ে দেখবেন। আপনার জিভে লেগে থাকবে কলকাতার স্বাদ, মনে জেগে উঠবে এই শহরের প্রতি ভালোবাসা।
মন্তব্য করুন