বিশ্বের সেরা ৫ স্মার্ট দেশ: বুদ্ধিমত্তা, উদ্ভাবন ও শিক্ষার আলোকে ২০২৫ সালের র‍্যাঙ্কিং

কোন দেশগুলোকে বিশ্বের সবচেয়ে ‘স্মার্ট’ বা বুদ্ধিমান বলা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বেশ জটিল, কারণ ‘স্মার্টনেস’ বা বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা ব্যাপক। এটি কেবল গড় আইকিউ (IQ) স্কোরের উপর নির্ভর করে…

Srijita Chattopadhay

 

কোন দেশগুলোকে বিশ্বের সবচেয়ে ‘স্মার্ট’ বা বুদ্ধিমান বলা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বেশ জটিল, কারণ ‘স্মার্টনেস’ বা বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা ব্যাপক। এটি কেবল গড় আইকিউ (IQ) স্কোরের উপর নির্ভর করে না, বরং দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং সামগ্রিক জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির মতো একাধিক সূচকের উপর নির্ভরশীল। ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা ও সূচক বিশ্লেষণ করে আমরা বিশ্বের শীর্ষ ৫টি স্মার্ট দেশের একটি তালিকা তৈরি করেছি, যারা বিভিন্ন মানদণ্ডে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করে চলেছে।

এই দেশগুলো শুধুমাত্র তাদের নাগরিকদের উচ্চ বুদ্ধিমত্তার জন্য পরিচিত নয়, বরং তারা ভবিষ্যতমুখী শিক্ষা, যুগান্তকারী প্রযুক্তি এবং একটি শক্তিশালী উদ্ভাবনী পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক সেই দেশগুলো সম্পর্কে।

১. জাপান: বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তির নিখুঁত সমন্বয়

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের অন্যতম স্মার্ট দেশ হিসেবে জাপান তার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। দেশটির এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু শক্তিশালী কারণ।

উচ্চ গড় আইকিউ (High Average IQ): জাপান consistently বিশ্বের সর্বোচ্চ গড় আইকিউ ધરાকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ২০২৫ (World Population Review 2025) এর তথ্যমতে, জাপানের নাগরিকদের গড় আইকিউ প্রায় ১০৬.৪৮, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। এই উচ্চ আইকিউ স্কোর দেশটির উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা এবং সামাজিক শৃঙ্খলার প্রতিফলন।

শিক্ষাব্যবস্থায় শ্রেষ্ঠত্ব: জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বমানের। এখানকার শিক্ষার্থীরা গণিত, বিজ্ঞান এবং সমস্যা সমাধানে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করে। শৈশব থেকেই তাদের মধ্যে কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করা হয়। জাপানের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলে, যা তাদের উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার জন্য প্রস্তুত করে।

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব: প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে জাপান বিশ্বসেরা। রোবোটিক্স, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স এবং উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি তৈরিতে দেশটির জুড়ি মেলা ভার। সনি (Sony), টয়োটা (Toyota), এবং প্যানাসনিক (Panasonic)-এর মতো বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো জাপানের প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রমাণ। দেশটি গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) প্রচুর বিনিয়োগ করে, যার ফলস্বরূপ তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি বিশ্বকে উপহার দিয়ে চলেছে।

২. সিঙ্গাপুর: ক্ষুদ্রায়তন, বৃহৎ পরিকল্পনা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ছোট দ্বীপরাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এবং স্মার্ট দেশ হিসেবে পরিচিত। এর পেছনে রয়েছে দেশটির সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি।

বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা: সিঙ্গাপুরের শিক্ষাব্যবস্থা তার কার্যকারিতা এবং শ্রেষ্ঠত্বের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। এখানকার পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা (critical thinking) এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতার উপর জোর দেয়। এখানকার শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক গণিত ও বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থান অর্জন করে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (UNESCO) বিভিন্ন সময়ে সিঙ্গাপুরের শিক্ষানীতির প্রশংসা করেছে।

অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত কেন্দ্র: সিঙ্গাপুর আজ বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। এর কৌশলগত অবস্থান, ব্যবসাবান্ধব নীতি এবং দক্ষ কর্মশক্তি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে। দেশটি একটি ‘স্মার্ট নেশন’ (Smart Nation) হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে, যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা হয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) এবং ডেটা সায়েন্সের মতো ক্ষেত্রগুলোতে দেশটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।

গড় আইকিউ: ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ-এর তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের গড় আইকিউ ১০৫.৮৯, যা জাপান ও তাইওয়ানের পরেই বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ।

৩. সুইজারল্যান্ড: উদ্ভাবন ও জীবনযাত্রার মানে শীর্ষে

ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সুইজারল্যান্ড তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি উদ্ভাবন, গবেষণা এবং উচ্চ জীবনযাত্রার মানের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত।

গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্সে শীর্ষস্থান (Top Position in Global Innovation Index): বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থা (WIPO) দ্বারা প্রকাশিত গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স ২০২৩ অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ড টানা ১৩তম বারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। দেশটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত খাতের মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতার জন্য পরিচিত। ফার্মাসিউটিক্যালস, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজির মতো ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ড বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

উচ্চমানের শিক্ষা ও গবেষণা: সুইজারল্যান্ডে রয়েছে বিশ্বের সেরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন ETH Zurich এবং EPFL। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশটি তার জিডিপির একটি বড় অংশ গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করে, যা নতুন জ্ঞান এবং প্রযুক্তি তৈরির ভিত্তি স্থাপন করে।

বহুভাষিক ও দক্ষ জনশক্তি: সুইজারল্যান্ডের বহুভাষিক (জার্মান, ফরাসি, ইতালীয়) এবং উচ্চশিক্ষিত জনশক্তি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি। এখানকার কর্মপরিবেশ অত্যন্ত পেশাদার এবং উৎপাদনশীল।

৪. দক্ষিণ কোরিয়া: শিক্ষার শক্তিতে বলীয়ান

পূর্ব এশিয়ার আরেকটি powerhouse হলো দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি তার অসাধারণ অর্থনৈতিক উত্থান এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য “Han River-এর বিস্ময়” হিসেবে পরিচিত।

শিক্ষার প্রতি সামাজিক গুরুত্ব: দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষাকে সর্বোচ্চ সামাজিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা শিক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক, যা শিক্ষার্থীদের সেরাটা বের করে আনতে সাহায্য করে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (OECD)-এর বিভিন্ন সমীক্ষায়, দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা পঠন, গণিত এবং বিজ্ঞানে শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।

ডিজিটাল ও প্রযুক্তিগত পাওয়ারহাউস: স্যামসাং (Samsung), এলজি (LG) এবং হুন্দাই (Hyundai)-এর মতো ব্র্যান্ডগুলোর মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্ব প্রযুক্তির বাজারে একটি প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বের দ্রুততম ইন্টারনেট গতি এবং উচ্চ মোবাইল ফোন ব্যবহারের হার দেশটিকে একটি সত্যিকারের ডিজিটাল সমাজে পরিণত করেছে। দেশটি সেমিকন্ডাক্টর, স্মার্টফোন এবং কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে বিশ্বসেরা।

উদ্ভাবনী সংস্কৃতি: দক্ষিণ কোরিয়া উদ্ভাবন এবং স্টার্টআপ সংস্কৃতির প্রসারে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। সরকার এবং বেসরকারি খাত উভয়েই নতুন প্রযুক্তি এবং সৃজনশীল ধারণাকে উৎসাহিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

৫. তাইওয়ান: প্রযুক্তির অগ্রদূত ও উচ্চ আইকিউ

বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্রে তাইওয়ানের অবস্থান বিতর্কিত হলেও, প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং বুদ্ধিমত্তার মাপকাঠিতে দেশটি নিজেকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

অসাধারণ গড় আইকিউ (Exceptional Average IQ): ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ-এর র‍্যাঙ্কিং অনুসারে, তাইওয়ানের নাগরিকদের গড় আইকিউ ১০৬.৪৭, যা জাপানের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই পরিসংখ্যান দেশটির জনগণের জ্ঞানীয় ক্ষমতা এবং শিক্ষাগত সাফল্যের পরিচায়ক।

সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিশ্বের কেন্দ্র: তাইওয়ানকে বিশ্বের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের রাজধানী বলা হয়। TSMC (Taiwan Semiconductor Manufacturing Company)-এর মতো কোম্পানিগুলো বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মাইক্রোচিপ তৈরি করে, যা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সুপার কম্পিউটার পর্যন্ত সবকিছুতে ব্যবহৃত হয়। এই প্রযুক্তিগত আধিপত্য তাইওয়ানকে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি অপরিহার্য অংশ করে তুলেছে।

মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণা: তাইওয়ানের শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত এবং গবেষণাভিত্তিক। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি এবং ফলিত বিজ্ঞানে উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান করে। দেশটি তার নাগরিকদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি দেশকে ‘স্মার্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শুধুমাত্র উচ্চ আইকিউ যথেষ্ট নয়। বরং শিক্ষাব্যবস্থায় বিনিয়োগ, একটি শক্তিশালী উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেম তৈরি করা এবং প্রযুক্তিকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করার ক্ষমতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উপরের দেশগুলো প্রমাণ করেছে যে, প্রাকৃতিক সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মানব সম্পদ এবং জ্ঞানের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে শীর্ষে পৌঁছানো যায়।

ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), মেশিন লার্নিং এবং বায়োটেকনোলজির মতো ক্ষেত্রগুলো ‘স্মার্টনেস’-এর সংজ্ঞাকে আরও প্রসারিত করবে। যে দেশগুলো এই নতুন প্রযুক্তিগুলোকে দ্রুত গ্রহণ করতে এবং তাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এর সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে, তারাই আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে।

সাধারণ জিজ্ঞাস্য (FAQ)

১. একটি দেশকে ‘স্মার্ট’ হিসেবে কোন মানদণ্ডে বিচার করা হয়? একটি দেশকে ‘স্মার্ট’ হিসেবে বিচার করার জন্য একাধিক মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে প্রধান হলো: নাগরিকদের গড় আইকিউ, শিক্ষাব্যবস্থার মান (যেমন PISA স্কোর), প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন (যেমন গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স র‍্যাঙ্কিং), নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর সংখ্যা এবং গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগের পরিমাণ।

২. তালিকায় এশিয়ার দেশগুলোর প্রাধান্য বেশি কেন? তালিকায় জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ানের মতো এশীয় দেশগুলোর প্রাধান্যের কারণ হলো তাদের অত্যন্ত কঠোর এবং মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষার প্রতি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বারোপ, এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে ব্যাপক সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ।

৩. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো শীর্ষ পাঁচে নেই কেন? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় (যেমন, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে) এগিয়ে থাকলেও, গড় আইকিউ এবং মাধ্যমিক শিক্ষার মানের মতো কিছু সূচকে তারা শীর্ষ ৫টি দেশের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে। তবে তারা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যেই রয়েছে।

৪. বুদ্ধিমত্তা কি কেবল আইকিউ দ্বারা পরিমাপযোগ্য? না, বুদ্ধিমত্তা একটি বহুমাত্রিক ধারণা। আইকিউ শুধুমাত্র জ্ঞানীয় এবং যৌক্তিক ক্ষমতা পরিমাপ করে। সৃজনশীলতা, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (emotional intelligence), এবং সামাজিক বুদ্ধিমত্তার মতো বিষয়গুলোও স্মার্টনেসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আইকিউ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাপ করা কঠিন।

৫. বাংলাদেশ এই তালিকায় কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? বিভিন্ন সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশকে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ-এর আইকিউ র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে। তবে, দেশটি শিক্ষা ও প্রযুক্তির প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত হতে পারে।

উপসংহার (Conclusion)

বিশ্বের সেরা ৫ স্মার্ট দেশের (Top 5 Smartest Countries in the World) এই তালিকা প্রমাণ করে যে, একটি দেশের প্রকৃত সম্পদ তার নাগরিক এবং তাদের জ্ঞান। জাপান, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ান—এই দেশগুলো শিক্ষা, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির উপর দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের মাধ্যমে নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিতে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের সাফল্য বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে।

About Author
Srijita Chattopadhay

সৃজিতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক। তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি তার লেখা দ্বারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি তুলে ধরতে সদা উদ্যমী। সৃজিতার লেখার ধারা মূলত সাহিত্য, সমাজ এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন দিককে ঘিরে আবর্তিত হয়, যেখানে তিনি তার গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বিশ্লেষণী দক্ষতার পরিচয় দেন। তাঁর নিবন্ধ ও প্রতিবেদনগুলি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যা তার বস্তুনিষ্ঠতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় বহন করে। সৃজিতা তার কর্মজীবনে ক্রমাগত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে বদ্ধপরিকর, যা তাকে বাংলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।