Natural remedies for dandruff: খুশকি একটি সাধারণ মাথার ত্বকের সমস্যা যা প্রায় ৫০% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে প্রভাবিত করে। এটি চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং মাথার ত্বকে শুষ্ক স্কেল তৈরি করে যা অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর হতে পারে। তবে চিন্তার কিছু নেই, কারণ প্রাকৃতিক উপায়ে খুশকি দূর করা সম্ভব। এই নিবন্ধে আমরা ১১টি কার্যকরী ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করব যা আপনাকে খুশকি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।
১. নারিকেল তেল ও লেবুর রস
নারিকেল তেল ও লেবুর রসের মিশ্রণ খুশকি দূর করার একটি দারুণ প্রাকৃতিক উপায়। নারিকেল তেলের আর্দ্রতাদায়ক ধর্ম মাথার ত্বককে পুষ্ট করে, আর লেবুর অ্যাসিডিক প্রকৃতি ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- সমপরিমাণ নারিকেল তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন
- এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে লাগান
- ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন
- মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
নিয়মিত ব্যবহারে এটি খুশকি কমাতে এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করবে।
মাথার সামনের চুল গজানোর ১০টি অব্যর্থ উপায় – বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
২. চা গাছের তেল
চা গাছের তেল তার শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল ধর্মের জন্য পরিচিত, যা খুশকির জন্য দায়ী ছত্রাকের বিরুদ্ধে কার্যকর।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- কয়েক ফোঁটা চা গাছের তেল নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে নিন
- এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করুন
- ১ ঘণ্টা রেখে দিন
- মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
বিকল্পভাবে, আপনি আপনার নিয়মিত শ্যাম্পুতে কয়েক ফোঁটা চা গাছের তেল যোগ করতে পারেন।
৩. অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মাথার ত্বকের pH ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে, যা খুশকির কারণে ইস্টের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- সমান পরিমাণ পানি ও অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন
- শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণটি মাথায় ঢেলে দিন
- কয়েক মিনিট রেখে দিন
- পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
এই প্রক্রিয়া চুলকানি ও স্কেল কমাতে সাহায্য করবে।
৪. অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায় এবং খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- তাজা অ্যালোভেরা জেল সরাসরি মাথার ত্বকে লাগান
- ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রেখে দিন
- পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
এটি মাথার ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবে।
৫. দই
দইয়ের প্রোবায়োটিক ধর্ম মাথার ত্বকের স্বাভাবিক মাইক্রোবায়োম পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে, যা খুশকি কমাতে সহায়ক।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- তাজা দই সরাসরি মাথার ত্বক ও চুলে লাগান
- ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন
- হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
আপনি দইয়ের সাথে কালো গোলমরিচ মিশিয়ে নিতে পারেন, যেহেতু এটিও অ্যান্টিফাঙ্গাল ধর্ম সম্পন্ন।
৬. নিম পাতা
নিম পাতার শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল ধর্ম খুশকির কারণে ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং মাথার ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায়।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- নিম পাতা পেষ্ট করে নিন
- এই পেষ্টটি মাথার ত্বকে লাগান
- ১ ঘণ্টা রেখে দিন
- পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
বিকল্পভাবে, আপনি নিম পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে চুল ধুতে পারেন।
৭. বেকিং সোডা
বেকিং সোডা একটি হালকা এক্সফোলিয়েন্ট হিসেবে কাজ করে, যা মৃত ত্বক কোষ অপসারণ করে এবং অতিরিক্ত তেল শোষণ করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- বেকিং সোডা ও পানি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন
- এই পেস্টটি মাথার ত্বকে লাগান
- আলতো করে ম্যাসাজ করুন
- কয়েক মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন
বেকিং সোডার অ্যান্টিফাঙ্গাল ধর্ম খুশকির কারণে ছত্রাক কমাতে সাহায্য করে।
আরশোলা তাড়াতে বেকিং সোডা থেকে নিম পাতা – ১০টি কার্যকর ঘরোয়া উপায়
৮. মেথি বীজ
মেথি বীজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী ধর্ম সম্পন্ন, যা জ্বালাযুক্ত মাথার ত্বককে শান্ত করে এবং খুশকি নিয়ন্ত্রণ করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- মেথি বীজ রাতভর ভিজিয়ে রাখুন
- সকালে এগুলো পেষ্ট করে নিন
- এই পেস্টটি মাথার ত্বকে লাগান
- ৩০ মিনিট রেখে দিন
- মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
মেথি বীজ সেবাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, খুশকি নিয়ন্ত্রণ করে এবং চুলের গোড়া পুষ্ট করে।
৯. অলিভ অয়েল ও ভিনেগার
অলিভ অয়েল মাথার ত্বককে আর্দ্র করে, আর ভিনেগারের অ্যাসিডিক প্রকৃতি pH ভারসাম্য বজায় রাখে এবং খুশকি নিয়ন্ত্রণ করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- সমান পরিমাণ অলিভ অয়েল ও ভিনেগার মিশিয়ে নিন
- এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে লাগান
- ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন
- মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
এই মিশ্রণটি মাথার ত্বককে পুষ্ট করে এবং শুষ্কতা ও স্কেল প্রতিরোধ করে।
১০. লবণ স্ক্রাব
লবণ একটি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েন্ট হিসেবে কাজ করে, যা মৃত ত্বক কোষ ও স্কেল অপসারণ করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- ২-৩ চামচ লবণের সাথে কিছু অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন
- এই মিশ্রণটি দিয়ে মাথার ত্বক আলতো করে ঘষুন
- কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করুন
- মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
লবণ মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা কমায়, যা খুশকির সৃষ্টি রোধ করে।
১১. তুলসী পাতা
তুলসী পাতার প্রদাহরোধী ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ধর্ম খুশকি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- তুলসী পাতা পেষ্ট করে নিন
- এই পেস্টটি মাথার ত্বকে লাগান
- ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন
- পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
তুলসী পাতা মাথার ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায়, স্কেল অপসারণ করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর মাথার ত্বক বজায় রাখতে সাহায্য করে।