টোরাক্স 10 হলো একটি শক্তিশালী ব্যথানাশক ওষুধ যা মূলত মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি (Square Pharmaceuticals PLC) দ্বারা উৎপাদিত একটি ট্যাবলেট আকারের ওষুধ, যার সক্রিয় উপাদান হলো কেটোরোলাক ট্রোমেথামিন (Ketorolac Tromethamine)। বিশেষ করে অপারেশন পরবর্তী ব্যথা এবং অন্যান্য উৎসের তীব্র ব্যথার স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থাপনার জন্য এই ওষুধটি চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন। নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAID) শ্রেণীর অন্তর্গত এই ওষুধটি দ্রুত এবং কার্যকরভাবে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।
Torax 10 এর ঔষধিক শ্রেণী এবং কার্যপ্রণালী
টোরাক্স 10 নন-ওপিওয়েড (Non-Opioid) শ্রেণীর অন্তর্গত একটি ব্যথানাশক। এর সক্রিয় উপাদান কেটোরোলাক ট্রোমেথামিন শরীরে প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথার সংকেত প্রেরণ রোধ করে কাজ করে। এটি প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক রাসায়নিক পদার্থের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা শরীরে ব্যথা, প্রদাহ এবং জ্বর সৃষ্টি করে থাকে।
কেটোরোলাক ট্রোমেথামিনের বৈশিষ্ট্য
এই ওষুধের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর দ্রুত কার্যকারিতা। অন্যান্য ব্যথানাশক ওষুধের তুলনায় টোরাক্স 10 দ্রুততার সাথে ব্যথা উপশম করতে সক্ষম, বিশেষত অপারেশন পরবর্তী তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে। এটি মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত প্রেরণ প্রক্রিয়া রোধ করে এবং প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা উপশম করে।
Torax 10 এর প্রধান ব্যবহার ক্ষেত্র
টোরাক্স 10 মূলত নিম্নলিখিত অবস্থাগুলোতে ব্যবহৃত হয়:
-
অপারেশন পরবর্তী ব্যথা নিয়ন্ত্রণে
-
মাঝারি থেকে তীব্র আকারের তীব্র ব্যথা ব্যবস্থাপনায়
-
অন্যান্য উৎসের তীব্র ব্যথা যা অপিওইড স্তরের ব্যথানাশক প্রয়োজন করে
এটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয়, কারণ ওষুধটির নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। টোরাক্স 10 ট্যাবলেটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ 7 দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন? কারন এবং ১০০% উপশমের কৌশল
Torax 10 এর নির্দেশিত ডোজ এবং সেবন পদ্ধতি
টোরাক্স 10 ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় এবং এর নির্দেশিত মাত্রা হল প্রয়োজন অনুসারে প্রতি 6 ঘন্টায় 10 মিলিগ্রাম, সর্বোচ্চ 7 দিন পর্যন্ত। বয়স এবং রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে ডোজ পরিবর্তন হতে পারে:
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য (65 বছরের কম):
-
মৌখিক: প্রতি 4-6 ঘন্টায় 10 মিলিগ্রাম; প্রতিদিন সর্বোচ্চ 40 মিলিগ্রাম অতিক্রম করা উচিত নয়
বয়স্ক রোগীদের জন্য (65 বছরের বেশি):
-
কম ডোজে শুরু করা প্রয়োজন, কারণ বয়স্ক ব্যক্তিদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি
টোরাক্স ইঞ্জেকশন আকারেও পাওয়া যায় (টোরাক্স 30 এবং টোরাক্স 60), যা সাধারণত হাসপাতালে অধিক তীব্র ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়। ইঞ্জেকশনের ক্ষেত্রে, চিকিৎসা সময়কাল দুই দিনের বেশি হওয়া উচিত নয়।
Torax 10 সেবনে সতর্কতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যেকোনো শক্তিশালী ওষুধের মতোই, টোরাক্স 10 কিছু সতর্কতা এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ আসে:
গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত সতর্কতা:
-
গর্ভাবস্থায় প্রেগনেন্সি ক্যাটেগরি: C; তৃতীয় ত্রৈমাসিকে D (ডাক্টাস আর্টেরিওসাসের অকাল বন্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে)
-
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, এই ওষুধ ব্যবহার এড়ানো উচিত
রেনাল (কিডনি) সম্পর্কিত সতর্কতা:
-
মাঝারি থেকে তীব্র কিডনি সমস্যা থাকলে এই ওষুধ ব্যবহারে বিপরীত প্রভাব পড়তে পারে2
সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
-
পাকস্থলীর সমস্যা (গ্যাস্ট্রিক আলসার, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাত)
-
মাথাব্যথা
-
চক্কর অনুভূতি
-
অনিদ্রা
-
এডিমা (ফোলাভাব)
-
দুর্বলতা
Torax 10 এর ওষুধ-ওষুধ ইন্টারাকশন
টোরাক্স 10 অন্যান্য ওষুধের সাথে বিভিন্ন ধরনের ইন্টারাকশন দেখাতে পারে:
-
অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধের সাথে: ACE ইনহিবিটর বা অ্যাঞ্জিওটেনসিন II রিসেপ্টর অ্যান্টাগোনিস্ট (AIIA) জাতীয় ওষুধের প্রভাব কমাতে পারে
-
অন্যান্য NSAID এবং অ্যাসপিরিনের সাথে: একসাথে ব্যবহার করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেড়ে যেতে পারে2
-
ওয়ারফারিনের সাথে: গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে
-
মেথোট্রেক্সেট এবং লিথিয়ামের সাথে: এদের টক্সিসিটি বাড়াতে পারে
-
প্রোবেনেসিডের সাথে: প্লাজমা কনসেনট্রেশন বাড়াতে পারে
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধের সাথে টোরাক্স 10 গ্রহণ করা উচিত নয়।
Torax 10 বনাম অন্যান্য ব্যথানাশক ওষুধ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ রয়েছে। টোরাক্স 10 (কেটোরোলাক ট্রোমেথামিন) অন্যান্য সাধারণ ব্যথানাশকদের থেকে কিছু দিক থেকে আলাদা:
ব্যবহারিক দিক | টোরাক্স 10 (কেটোরোলাক) | প্যারাসিটামল | আইবুপ্রোফেন |
---|---|---|---|
কার্যকারিতা | খুব শক্তিশালী (অপিওয়েড-লেভেল) | মাঝারি | মাঝারি |
ব্যবহারের সময়সীমা | সর্বোচ্চ 7 দিন | দীর্ঘমেয়াদী | মাঝারি-দীর্ঘ |
প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা | খুব কার্যকর | কম কার্যকর | কার্যকর |
ব্যবহারের ক্ষেত্র | তীব্র ব্যথা, পোস্ট-সার্জিক্যাল | হালকা-মাঝারি ব্যথা, জ্বর | হালকা-মাঝারি ব্যথা, প্রদাহ |
টোরাক্স 10 বিশেষ করে অপারেশন পরবর্তী তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে অতি কার্যকর। এটি অপিওয়েড ব্যথানাশকের মত শক্তিশালী, কিন্তু অপিওয়েডের মত নেশা সৃষ্টি করে না। তবে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রোফাইল এবং স্বল্পমেয়াদী ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা এর ব্যবহারকে কেবল তীব্র ব্যথার স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসায় সীমাবদ্ধ করে।
বিশেষ গ্রুপের রোগীদের জন্য টোরাক্স 10
বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য:
বয়স্ক রোগীদের (65 বছরের বেশি) ক্ষেত্রে, ডোজ কমানো উচিত। IV এবং IM সংস্করণে সর্বোচ্চ দৈনিক ডোজ 60 মিলিগ্রাম অতিক্রম করা উচিত নয়।
কিডনি সমস্যা থাকা রোগীদের জন্য:
মাঝারি থেকে তীব্র কিডনি সমস্যা থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে টোরাক্স 10 ব্যবহার সতর্কতার সাথে করা উচিত, কারণ এটি কিডনির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
লিভার সমস্যা থাকা রোগীদের জন্য:
লিভার সমস্যা থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে টোরাক্স 10 ব্যবহার সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
টোরাক্স 10 এর প্রস্তুতি ও বাজারে পাওয়া
টোরাক্স 10 ট্যাবলেট স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি দ্বারা উৎপাদিত এবং প্রতিটি বাক্সে আলু-আলু প্যাকে 50টি ট্যাবলেট থাকে। এছাড়াও, টোরাক্স 30 ইঞ্জেকশন এবং টোরাক্স 60 ইঞ্জেকশন আকারেও বাজারে পাওয়া যায়, যেগুলো বিশেষ করে হাসপাতালে ব্যবহৃত হয়।
ট্যাবলেট ফর্মে অন্যান্য কোম্পানির সমতুল্য প্রোডাক্টও বাজারে পাওয়া যায়, যেমন: জাইডোলাক 10, টোরামাক্স 10, রোলাক এমডিটি, টোডোল 10, পেয়ার 10, ইত্যাদি।
Torax 10 (কেটোরোলাক ট্রোমেথামিন) একটি শক্তিশালী নন-ওপিওয়েড ব্যথানাশক যা মূলত মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথার স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষ করে অপারেশন পরবর্তী ব্যথা নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকর। তবে, এর ব্যবহার স্বল্পমেয়াদী (5-7 দিন) হওয়া উচিত এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ওষুধ-ওষুধ ইন্টারাকশন সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন2।
যেহেতু এটি একটি প্রেসক্রিপশন ওষুধ, ডাক্তারের পরামর্শ এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজে থেকে ডোজ পরিবর্তন বা চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া এই ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। টোরাক্স 10 এর ব্যবহার, ডোজিং, এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে সবসময় আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।