Total number of lines of latitude on Earth: পৃথিবীর অক্ষরেখা বা latitude lines হল একটি কাল্পনিক রেখা যা পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশকে সমান্তরালভাবে বিভক্ত করে। এই রেখাগুলি পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ অবস্থান নির্ধারণে সাহায্য করে এবং মানচিত্র ও গ্লোবে ব্যবহৃত হয়। অক্ষরেখার মোট সংখ্যা নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হন, তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক এর সঠিক সংখ্যা কত।
অক্ষরেখার মৌলিক ধারণা
অক্ষরেখা হল পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশের চারপাশে পূর্ব-পশ্চিম দিকে বিস্তৃত কাল্পনিক রেখা যা নিরক্ষরেখার সমান্তরালে অবস্থিত। এই রেখাগুলি পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ অবস্থান নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। নিরক্ষরেখা হল ০° অক্ষরেখা, যা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে বিভক্ত করে।
পৃথিবীর নতুন ‘মিনি মুন’ 2024 PT5: কী এটি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
অক্ষরেখার মোট সংখ্যা
পৃথিবীতে মোট ১৭৯টি অক্ষরেখা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- নিরক্ষরেখা (০°): ১টি
- উত্তর গোলার্ধে: ৮৯টি
- দক্ষিণ গোলার্ধে: ৮৯টি
অক্ষরেখাগুলি ০° থেকে ৯০° পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে ৯০°N উত্তর মেরু এবং ৯০°S দক্ষিণ মেরু নির্দেশ করে।
অক্ষরেখার পরিমাপ ও বিভাজন
অক্ষরেখা ডিগ্রি (°), মিনিট (′) এবং সেকেন্ড (″) এ পরিমাপ করা হয়। প্রতিটি ডিগ্রি ৬০ মিনিটে এবং প্রতিটি মিনিট ৬০ সেকেন্ডে বিভক্ত। এক ডিগ্রি অক্ষরেখা পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশে প্রায় ১১১ কিলোমিটার দূরত্ব নির্দেশ করে।
গুরুত্বপূর্ণ অক্ষরেখাসমূহ
কিছু বিশেষ অক্ষরেখা রয়েছে যা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল চিহ্নিত করে:
- নিরক্ষরেখা (০°): পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে বিভক্ত করে।
- কর্কটক্রান্তি (২৩.৫°N): উত্তর গোলার্ধের ক্রান্তীয় অঞ্চলের সীমানা নির্দেশ করে।
- মকরক্রান্তি (২৩.৫°S): দক্ষিণ গোলার্ধের ক্রান্তীয় অঞ্চলের সীমানা নির্দেশ করে।
- আর্কটিক বৃত্ত (৬৬.৫°N): উত্তর মেরু অঞ্চলের সীমানা নির্দেশ করে।
- আন্টার্কটিক বৃত্ত (৬৬.৫°S): দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের সীমানা নির্দেশ করে।
অক্ষরেখার ব্যবহার ও গুরুত্ব
অক্ষরেখা পৃথিবীর যেকোনো স্থানের অবস্থান নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর প্রধান ব্যবহারগুলি হল:
- অবস্থান নির্ধারণ: পৃথিবীর যেকোনো স্থানের সঠিক অবস্থান নির্ধারণে সাহায্য করে।
- দূরত্ব পরিমাপ: দুটি স্থানের মধ্যকার দূরত্ব নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
- তাপ অঞ্চল বিভাজন: পৃথিবীকে বিভিন্ন তাপ অঞ্চলে বিভক্ত করে।
- মানচিত্র ও নেভিগেশন: মানচিত্র তৈরি ও নেভিগেশনে অপরিহার্য।
- জলবায়ু অধ্যয়ন: বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়।
অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার পার্থক্য
অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা উভয়ই পৃথিবীর অবস্থান নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু এদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে:
- দিক: অক্ষরেখা পূর্ব-পশ্চিম দিকে বিস্তৃত, অন্যদিকে দ্রাঘিমারেখা উত্তর-দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত।
- সংখ্যা: মোট ১৭৯টি অক্ষরেখা রয়েছে, কিন্তু ৩৬০টি দ্রাঘিমারেখা রয়েছে।
- প্রধান রেখা: অক্ষরেখার ক্ষেত্রে নিরক্ষরেখা (০°) প্রধান, আর দ্রাঘিমারেখার ক্ষেত্রে গ্রীনউইচ মেরিডিয়ান (০°) প্রধান।
- দূরত্ব: অক্ষরেখাগুলি সর্বত্র সমদূরবর্তী, কিন্তু দ্রাঘিমারেখাগুলি মেরুতে একত্রিত হয়।
লাল শিকারি চাঁদ: ২০২৪-এর সবচেয়ে বড় সুপারমুন, জেনে নিন কবে কোথায়
অক্ষরেখা নির্ধারণের পদ্ধতি
অক্ষরেখা নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়:
- ভৌগোলিক পদ্ধতি: পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে নিরক্ষরেখা ও নির্দিষ্ট স্থানের মধ্যকার কোণ পরিমাপ করে।
- জ্যোতির্বিজ্ঞান পদ্ধতি: মেরু তারকা বা সূর্যের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে।
- জিপিএস প্রযুক্তি: আধুনিক জিপিএস যন্ত্র ব্যবহার করে সঠিক অক্ষরেখা নির্ধারণ করা হয়।
পৃথিবীর ১৭৯টি অক্ষরেখা আমাদের গ্রহের একটি অদৃশ্য কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেখাচিত্র তৈরি করে। এই রেখাগুলি শুধুমাত্র ভৌগোলিক অবস্থান নির্ধারণেই নয়, বরং জলবায়ু, পরিবেশ, এবং মানব সভ্যতার বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অক্ষরেখার জ্ঞান আমাদের পৃথিবীকে আরও ভালভাবে বুঝতে এবং এর বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে।