“বিশ্বের মুসলিম দেশগুলি: সংখ্যা, জনসংখ্যা ও বৈচিত্র্য”

Total number of Muslim countries in the world: বিশ্বে মোট ৫০টির মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রয়েছে। তবে এই সংখ্যা নির্ভর করে কোন সূত্র ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর। কিছু সূত্র…

Ishita Ganguly

 

Total number of Muslim countries in the world: বিশ্বে মোট ৫০টির মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রয়েছে। তবে এই সংখ্যা নির্ভর করে কোন সূত্র ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর। কিছু সূত্র অনুযায়ী এই সংখ্যা ৪৯ থেকে ৫১-এর মধ্যে ওঠানামা করে।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সংজ্ঞা

একটি দেশকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে গণ্য করা হয় যদি সেখানকার জনসংখ্যার ৫০% এর বেশি মুসলিম হয়। বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, যদিও এই সংখ্যা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর:

বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশগুলি

মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ ১০টি দেশ হল:

  1. ইন্দোনেশিয়া: ২৪২.৭ মিলিয়ন (৮৮.২৫%)
  2. পাকিস্তান: ২৪০.৭৬ মিলিয়ন (৯৬.৪৬%)
  3. ভারত: ২০০ মিলিয়ন (১৪.৬%)
  4. বাংলাদেশ: ১৫০.৮ মিলিয়ন (৯১.২৮%)
  5. নাইজেরিয়া: ৯৭ মিলিয়ন (৪৮.৫%)
  6. মিশর: ৯০ মিলিয়ন (৯৪.৭৪%)
  7. তুরস্ক: ৮৪.৪ মিলিয়ন (৯৮.১৪%)
  8. ইরান: ৮০.৯ মিলিয়ন (৯৯.৪%)
  9. আলজেরিয়া: ৩৯.৪ মিলিয়ন (৯৯%)
  10. সুদান: ৩৯ মিলিয়ন (৯০.৭%)

শতকরা হারে সর্বোচ্চ মুসলিম জনসংখ্যার দেশগুলি

জনসংখ্যার শতকরা হারের দিক থেকে শীর্ষ ১০টি মুসলিম দেশ হল:

  1. মালদ্বীপ: ১০০%
  2. মৌরিতানিয়া: ৯৯.৮৯%
  3. সোমালিয়া: ৯৯.৮%
  4. আফগানিস্তান: ৯৯.৭%
  5. ইরান: ৯৯.৪%
  6. পশ্চিম সাহারা: ৯৯.৪%
  7. ইয়েমেন: ৯৯.০৭%
  8. আলজেরিয়া: ৯৯%
  9. মরক্কো: ৯৯%
  10. মায়োত্তে: ৯৮.৮%

মুসলিম দেশগুলির ভৌগোলিক বিস্তার

মুসলিম দেশগুলি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে:

  • মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা: এই অঞ্চলে মুসলিমদের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৯৩% জনসংখ্যা মুসলিম।
  • দক্ষিণ এশিয়া: ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম জনগোষ্ঠী বাস করে।
  • দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া: ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
  • মধ্য এশিয়া: এই অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশেই মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
  • সাব-সাহারান আফ্রিকা: অনেক দেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বা উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু।

মুসলিম দেশগুলির রাষ্ট্রীয় ধর্ম

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের ভিত্তিতে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. ইসলামিক রাষ্ট্র: ৮টি দেশ ইসলামকে রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে।
  2. রাষ্ট্রীয় ধর্ম: ১৯টি দেশ ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তবে নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে।
  3. ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র: ২২টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে পৃথকীকরণ ঘোষণা করেছে।
    India current population 2024: জনসংখ্যার নিরিখে চীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে ভারতের যে ৫টি কা

মুসলিম দেশগুলির সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য

মুসলিম দেশগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য রয়েছে:

  • সুন্নি-শিয়া বিভাজন: বেশিরভাগ মুসলিম দেশে সুন্নিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তবে ইরান, ইরাক ও বাহরাইনে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
  • ইসলামের বিভিন্ন মাজহাব: হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি, হাম্বলি প্রভৃতি বিভিন্ন মাজহাব অনুসৃত হয়।
  • সুফিবাদের প্রভাব: বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় সুফিবাদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
  • স্থানীয় ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ: বিভিন্ন দেশে ইসলামের সাথে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ ঘটেছে।

মুসলিম দেশগুলির সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা

মুসলিম দেশগুলির মধ্যে সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে:

  • উচ্চ আয়ের দেশ: সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার প্রভৃতি তেলসমৃদ্ধ দেশগুলি।
  • মধ্যম আয়ের দেশ: তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি।
  • নিম্ন আয়ের দেশ: আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, সোমালিয়া প্রভৃতি।

বিশ্বের মুসলিম দেশগুলি তাদের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির কারণে বৈচিত্র্যময়। এই দেশগুলি ইসলামের মূল বিশ্বাসে ঐক্যবদ্ধ হলেও, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪% মুসলিম, যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ২.৭৬ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বিশ্ব জনসংখ্যার ২৯.৭% হবে। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে মুসলিম দেশগুলির গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলবে।

About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।