পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের সমস্ত টোটো বা ই-রিক্সাকে আইনি কাঠামোর অধীনে আনার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতিটি টোটো গাড়ির মালিককে অবশ্যই ৩০ নভেম্বর, ২০২৫-এর মধ্যে তাদের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। এই তারিখের পর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া কোনও টোটো রাস্তায় চালানো যাবে না। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, অপরাধমূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা এবং রাজ্যের লক্ষাধিক টোটো গাড়ির একটি সঠিক পরিসংখ্যান তৈরি করা[page from tv9bangla]। অনলাইন এবং অফলাইন দুই পদ্ধতিতেই এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাচ্ছে, এবং এর জন্য একটি নির্দিষ্ট পোর্টালও চালু করা হয়েছে।
টোটো রেজিস্ট্রেশন কেন বাধ্যতামূলক করা হলো?
গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে টোটোর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজ্যে প্রায় ১০ লক্ষ টোটো চলাচল করে, যার অধিকাংশই অনিবন্ধিত। এই বিপুল সংখ্যক গাড়ির উপর সরকারের কার্যত কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এর ফলে একাধিক সমস্যা তৈরি হচ্ছিল:
-
যাত্রী সুরক্ষা: দুর্ঘটনা ঘটলে বা কোনও অপরাধমূলক কাজে টোটো ব্যবহৃত হলে, চালক বা মালিককে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ত[page from tv9bangla]।
-
ট্র্যাফিক বিশৃঙ্খলা: নির্দিষ্ট রুটের অভাবে যেখানে-সেখানে টোটো চলাচল করার ফলে যানজট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে[page from indianexpress]।
-
সরকারি তথ্যভান্ডার: সরকারের কাছে রাজ্যে কতগুলি টোটো চলছে, তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান ছিল না[page from tv9bangla]।
এই সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য, পরিবহন দপ্তর টোটোগুলিকে নিবন্ধনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেজিস্ট্রেশনের পর প্রতিটি গাড়িকে একটি অস্থায়ী এনরোলমেন্ট নম্বর (TTEN) এবং একটি QR কোড-সহ নম্বর প্লেট দেওয়া হবে। এই QR কোড স্ক্যান করে গাড়ির মালিক, চালক এবং নির্দিষ্ট রুট সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে।
টোটো রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি
টোটো রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করার জন্য নিম্নলিখিত নথিগুলি প্রস্তুত রাখতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য মালিক এবং গাড়ির তথ্য আলাদাভাবে নিচে দেওয়া হলো:
নথির প্রকার | প্রয়োজনীয় নথি |
---|---|
মালিকের নথি | – আধার কার্ড (মোবাইল নম্বর সংযুক্ত থাকা আবশ্যক) – প্যান কার্ড – ঠিকানার প্রমাণপত্র (যেমন ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড) – ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ (পাসবইয়ের প্রথম পাতা) – পাসপোর্ট সাইজের ছবি |
গাড়ির নথি | – গাড়ি কেনার চালান বা বিল – টোটোর চ্যাসিস নম্বর এবং মোটর/ইঞ্জিন নম্বরের বিবরণ – গাড়ির ছবি (সামনে এবং পাশ থেকে) – ডিলারের তথ্য (নাম ও ঠিকানা) |
অন্যান্য নথি | – একটি বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স – ইলেক্ট্রিক বিলের কপি বা মিটারের নম্বর – একটি সক্রিয় মোবাইল নম্বর (OTP ভেরিফিকেশনের জন্য) |
কীভাবে টোটো রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করবেন?
টোটো রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি মূলত অনলাইনেই সম্পন্ন করা হচ্ছে। এর জন্য রাজ্য সরকার TTEN-WB.in নামে একটি বিশেষ পোর্টাল চালু করেছে। নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করে সহজেই আবেদন করা যেতে পারে:
-
পোর্টাল ভিজিট: প্রথমে আপনাকে
tten-wb.in
পোর্টালে যেতে হবে।
-
মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন: হোমপেজে “Apply for TTEN” অপশনে ক্লিক করার পর আপনার মোবাইল নম্বর দিতে হবে। এরপর একটি OTP আসবে, যা দিয়ে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে।
-
আধার ভেরিফিকেশন: পরবর্তী ধাপে, আপনার ১২ সংখ্যার আধার নম্বর দিতে হবে। আধারের সাথে লিঙ্ক থাকা মোবাইল নম্বরে আরও একটি OTP আসবে। এটি ভেরিফাই করার পরে আপনার নাম, ঠিকানা এবং ছবি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফর্মে চলে আসবে।
-
তথ্য পূরণ: আবেদনপত্রে মালিকের ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংকের বিবরণ, এবং গাড়ির সমস্ত তথ্য (যেমন চ্যাসিস নম্বর, মোটর নম্বর, মডেল, রঙ ইত্যাদি) সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
-
নথি আপলোড: প্রয়োজনীয় সমস্ত নথির স্ক্যান করা কপি নির্দিষ্ট ফর্ম্যাটে (সাধারণত ২০ kb-এর মধ্যে) আপলোড করতে হবে।
-
ফি প্রদান: রেজিস্ট্রেশন ফি অনলাইনে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, নেট ব্যাংকিং বা UPI-এর মাধ্যমে জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার পর একটি অ্যাপ্লিকেশন নম্বর এবং রসিদ পাওয়া যাবে, যা প্রিন্ট করে নিজের কাছে রাখতে হবে।
-
ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন: অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর পরিবহন দপ্তর আপনার আবেদন খতিয়ে দেখবে। সব ঠিক থাকলে একটি নির্দিষ্ট তারিখে আপনার টোটোটিকে নিকটবর্তী RTO বা ARTO অফিসে ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশনের জন্য নিয়ে যেতে হবে[page from tv9bangla]। গাড়ি পরীক্ষায় পাশ করলেই চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হবে।
রেজিস্ট্রেশন ফি এবং অন্যান্য খরচ
টোটো রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রাথমিক ফি হিসাবে ১,০০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে[page from indianexpress]। তবে কিছু সূত্র অনুযায়ী, এক বছরের রিনিউয়াল ফি সহ মোট খরচ প্রায় ১,৭৪০ টাকা হতে পারে[page from aajtak]। রেজিস্ট্রেশনের ছয় মাস পর থেকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে একটি অতিরিক্ত ফি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে[page from tv9bangla][page from indianexpress]। এর পাশাপাশি, প্রতিটি গাড়ির জন্য ফিটনেস সার্টিফিকেট এবং ইন্স্যুরেন্সও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
রেজিস্ট্রেশনের পরিসংখ্যান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রাজ্যে আনুমানিক ১০ লক্ষ টোটোর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ড্রাইভের প্রথম দুই দিনে মাত্র ৭৯০টি টোটো এবং ১৬০টি ই-রিকশা নিবন্ধিত হয়েছে, যা প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ কম। তবে দীপাবলির পর এই সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছে পরিবহন দপ্তর।
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হলে সরকার আরও কিছু নতুন নিয়ম চালু করার পরিকল্পনা করছে:
-
নির্দিষ্ট রুট: প্রতিটি টোটোর জন্য নির্দিষ্ট রুট বেঁধে দেওয়া হবে এবং সেই রুটের বাইরে গাড়ি চালানো যাবে না[page from indianexpress]।
-
-
বীমার আওতা: সমস্ত টোটো চালককে বীমার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে[page from indianexpress]।
-
জোড়-বিজোড় নিয়ম: যানজট কমাতে ভবিষ্যতে জোড়-বিজোড় নম্বর প্লেটের ভিত্তিতে টোটো চালানোর নিয়ম চালু হতে পারে[page from indianexpress]।
এই পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আশা করছে যে রাজ্যের পরিবহন ব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা এবং শৃঙ্খলা আসবে, যা চালক এবং যাত্রী উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক হবে।