কল্পনাতীত টাকার অফার! মোদীর বাহন নির্মাতা টয়োটাই কি এবার ভারতীয় ক্রিকেট দলের নতুন স্পনসর?

এশিয়া কাপ ২০২৫ এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি থাকতেই ভারতীয় ক্রিকেট দল নতুন স্পনসরের খোঁজে পড়েছে। ড্রিম১১ অনলাইন গেমিং বিল পাসের পর জার্সি স্পনসরশিপ ছেড়ে দেওয়ার ফলে বিসিসিআই এখন বিকল্প…

Ani Roy

 

এশিয়া কাপ ২০২৫ এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি থাকতেই ভারতীয় ক্রিকেট দল নতুন স্পনসরের খোঁজে পড়েছে। ড্রিম১১ অনলাইন গেমিং বিল পাসের পর জার্সি স্পনসরশিপ ছেড়ে দেওয়ার ফলে বিসিসিআই এখন বিকল্প স্পনসরের তালাশে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অটোমোবাইল কোম্পানি টয়োটা মোটর কর্পোরেশন এবং একটি ফিনটেক কোম্পানি স্পনসরশিপের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে।

টয়োটা মোটর কর্পোরেশনের বাজার মূল্য ২৭.৮ ট্রিলিয়ন টাকার বেশি, যা বাংলায় লেখলে দাঁড়ায় ২২৭৯৭২০৩০০০০০০০০০ টাকা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই একই কোম্পানি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারি যানবাহন টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার তৈরি করে। প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের এই সাঁজোয়া গাড়িতে প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত চলাফেরা করেন।

ড্রিম১১ এর চলে যাওয়ার কারণ

গত সপ্তাহে ভারতের পার্লামেন্টে ‘প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল ২০২৫’ পাস হওয়ার পর ড্রিম১১ তাদের ৩৫৮ কোটি টাকার স্পনসরশিপ চুক্তি বাতিল করে দেয়। এই নতুন আইনে রিয়েল মানি গেমিং প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ হওয়ায় কোম্পানিটি আর এই খাতে বিজ্ঞাপন ও স্পনসরশিপ করতে পারবে না।

বিসিসিআই সেক্রেটারি দেবজিত সাইকিয়া বলেছেন, “এটা যদি অনুমতিযোগ্য না হয়, আমরা কিছুই করব না। বিসিসিআই কেন্দ্রীয় সরকার প্রণীত দেশের প্রতিটি নীতি মেনে চলবে।”

টয়োটা কেন এগিয়ে

টয়োটার আগ্রহ অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোম্পানিটির বার্ষিক আয় ২৮.৫ ট্রিলিয়ন টাকার বেশি এবং বিশ্বব্যাপী এটি অন্যতম বড় অটোমেকার। ভারতে টয়োটার ইতিমধ্যে শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি গাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা টয়োটা ফর্চুনার, ল্যান্ড ক্রুজার ব্যবহার করেন।

এছাড়াও টয়োটার নেট অ্যাসেটস ২১.৫ ট্রিলিয়ন টাকার বেশি, যা এই স্পনসরশিপ ডিল সামলানোর জন্য যথেষ্ট। কোম্পানিটি বিশ্বব্যাপী ৮.৮ মিলিয়ন গাড়ি বিক্রি করে প্রতি বছর।

সময়ের চাপ ও চ্যালেঞ্জ

এশিয়া কাপ ২০২৫ শুরু হবে আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় থাকায় বিসিসিআই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য। ইতিমধ্যে ড্রিম১১ এর লোগো সহ এশিয়া কাপের জার্সি ছাপানো হয়ে গেছে, কিন্তু সেগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না।

বিসিসিআই সূত্রে জানা গেছে, টয়োটা ও ফিনটেক কোম্পানি আগ্রহ দেখালেও এখনো আনুষ্ঠানিক টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। সংস্থাটি এমন একটি চুক্তির আশা করছে যা ড্রিম১১ এর চুক্তির চেয়ে বেশি মূল্যের হবে।

জার্সি স্পনসরশিপের গুরুত্ব

ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি স্পনসরশিপ বিশ্বের অন্যতম লোভনীয় বিজ্ঞাপনী সুযোগ। শুধু এশিয়া কাপ নয়, আগামীকালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ সহ পুরো বছরের ব্যস্ত ক্রিকেট ক্যালেন্ডার রয়েছে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মতো উচ্চ দর্শকসংখ্যার খেলাগুলো ব্র্যান্ডের জন্য অপরিসীম মূল্য বহন করে।

ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন যে কোম্পানি স্পনসর হবে তারা আগামী কয়েক বছরে বিশ্ব ক্রীড়া বিপণনের সবচেয়ে প্রভাবশালী জায়গার একটি দখল করতে পারবে।

অতীতের স্পনসরদের পরিণতি

মজার বিষয় হলো, ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি স্পনসরদের জন্য একটি ‘অভিশাপের’ ইতিহাস রয়েছে। সাহারা ইন্ডিয়া, বাইজুস এবং এখন ড্রিম১১ – সবাই বিভিন্ন আর্থিক বা আইনি সমস্যায় পড়েছে স্পনসরশিপের পর। এই ধারা ভাঙতে পারে কি টয়োটার মতো প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি?

অন্যান্য সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী

টয়োটা ছাড়াও রিলায়েন্স জিও একটি সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কোম্পানিটির ইতিমধ্যে ভারতীয় ক্রিকেটের সাথে সম্প্রচার ও স্পনসরশিপের মাধ্যমে সংযোগ রয়েছে। জেরোধা, অ্যাঞ্জেল ওয়ান, গ্রো এর মতো ফিনটেক কোম্পানিগুলোও সম্ভাব্য প্রার্থী।

ভারতীয় অটোমোবাইল ও এফএমসিজি খাত

ভারতে অটোমোবাইল ও এফএমসিজি খাত সবসময়ই ক্রিকেট স্পনসরশিপে সক্রিয়। টাটা গ্রুপ বর্তমানে আইপিএলের প্রধান স্পনসর। এই প্রেক্ষাপটে টয়োটার আগ্রহ একেবারেই যুক্তিসঙ্গত।

এশিয়া কাপের গুরুত্ব

এশিয়া কাপ ২০২৫ এ ভারতের প্রথম ম্যাচ ১০ই সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। অত্যন্ত প্রত্যাশিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ১৪ই সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে। যদি নতুন স্পনসর না পাওয়া যায়, তাহলে ভারত হয়তো প্রথমবারের মতো দশকের পর কোনো প্রধান স্পনসর ছাড়াই মাঠে নামবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিসিসিআই এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে তারা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কাজ করছেন। তবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংস্থাটি দ্রুত নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধ্য।

টয়োটার মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোম্পানি যদি ভারতীয় ক্রিকেট দলের স্পনসর হয়, তাহলে এটি শুধু ক্রিকেটের জন্যই নয়, ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রচারণার জন্যও একটি বড় সাফল্য হবে। বিশেষ করে যে কোম্পানি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে, তারা ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাথে যুক্ত হওয়া স্বাভাবিক।

এশিয়া কাপের আগেই এই স্পনসরশিপ ইস্যুর সমাধান হবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে টয়োটার আর্থিক সক্ষমতা ও ভারতে তাদের অবস্থান বিবেচনায় তারা এই দৌড়ে এগিয়ে থাকার কথা।

About Author
Ani Roy

অনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশনে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগ এবং আজীবন শেখার প্রতি প্রতিশ্রুতি নিয়ে অনি নতুন শিক্ষামূলক পদ্ধতি ও প্র্যাকটিসগুলি অন্বেষণ করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার একাডেমিক যাত্রা তাকে শিক্ষার তত্ত্ব এবং ব্যবহারিক শিক্ষণ কৌশলগুলিতে দৃঢ় ভিত্তি প্রদান করেছে। অনি অন্তর্দৃষ্টি এবং দক্ষতা তার চিন্তাশীল লেখাগুলিতে প্রতিফলিত হয়, যা শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত ও তথ্যপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে লেখা। তিনি তার আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী কাজের মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে থাকেন।