Modi’s financial policies and public debt: ২০২৫ সালের শুরুতেই ভারতের অর্থনৈতিক চিত্র উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝায় জর্জরিত, আর সাধারণ মানুষের হাতে নগদ অর্থের সংকট তীব্র হয়েছে। এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের অর্থনৈতিক সংকটের প্রধান কারণগুলি হল:
১. সরকারি ঋণের ক্রমবর্ধমান বোঝা: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের মোট সরকারি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫০ লক্ষ কোটি রুপি, যা দেশের জিডিপির ৮৫% এর বেশি।
২. মুদ্রাস্ফীতি: গত বছরের তুলনায় মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৮%, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে।
৩. বেকারত্ব: দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৫%, যা গত দশকের সর্বোচ্চ।
৪. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া: ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে পরিবারগুলি তাদের খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছে। বাজারে নগদ অর্থের প্রবাহ কমে যাওয়ায় ছোট ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
BJP Leader: মোদির পর কে? বিজেপির ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে
তাঁরা নিম্নলিখিত সুপারিশগুলি করেছেন:
১. সরকারি ব্যয় কমানো: অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে সরকারি ঋণের বোঝা লাঘব করা।
২. বিনিয়োগ আকর্ষণ: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্য নীতিগত সংস্কার।
৩. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: যুব সম্প্রদায়ের জন্য নতুন কর্মসূচি চালু করা।
৪. মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: কঠোর মুদ্রানীতি অবলম্বন করে মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা।
৫. ডিজিটাল অর্থনীতি: ডিজিটাল লেনদেন বাড়িয়ে নগদ অর্থের চাপ কমানো।
সরকার ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) সুদের হার ৬.৫% এ স্থির রেখেছে, যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া, সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য নতুন নীতি ঘোষণা করেছে।
তবে এই পদক্ষেপগুলি যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিরোধী দলগুলি সরকারের সমালোচনা করে বলছে, তারা পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে।অন্যদিকে, সরকার দাবি করছে যে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, “আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত। আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি শক্তিশালী, এবং আমরা শীঘ্রই এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসব।”কিন্তু বাস্তবতা হল, সাধারণ মানুষ এখনও অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে।
মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পরিস্থিতি বিশেষভাবে কঠিন। তাদের অনেকেই খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন, এমনকি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কিনতে পারছেন না।রাজধানী দিল্লির একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহকর্তা রাজেশ শর্মা বলেন, “গত কয়েক মাসে আমাদের পারিবারিক বাজেট পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এত বেড়ে গেছে যে আমরা অনেক কিছু কেনা বন্ধ করে দিয়েছি।”এই পরিস্থিতি শুধু ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেই প্রভাব ফেলছে না, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এর প্রভাব পড়ছে।
বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা ভারতকে দ্রুত সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছে।বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ভারতের অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।”এই পরিস্থিতিতে, সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হল কীভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একই সঙ্গে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাও জরুরি।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। শুধু তাৎক্ষণিক সমাধান নয়, বরং গভীর কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
অর্থনীতিবিদ ডঃ রঘুরাম রাজন বলেছেন, “আমাদের অর্থনীতির মূল কাঠামোগত সমস্যাগুলি মোকাবেলা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রম আইন সংস্কার, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং ব্যাংকিং খাতের শক্তিশালীকরণ। এগুলি ছাড়া দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন হবে।”সরকার বলছে, তারা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি জাতীয় সম্বোধনে বলেছেন, “আমরা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে আমরা এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করব। আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি শক্তিশালী, এবং আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসব।”
বিনা সুদেই ২০ লক্ষ টাকা লোন দেবে সরকার কিভাবে আবেদন করবেন?
তবে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘব করা। সরকার বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছে, কিন্তু সেগুলি যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।সামাজিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, এর সামাজিক প্রভাবও গভীর। দারিদ্র্য বৃদ্ধি, শিক্ষার সুযোগ কমে যাওয়া, এবং স্বাস্থ্যসেবার মান হ্রাস পাওয়া – এসব সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।