ভারতকে ঘাঁটাতে এসে নিজেই ফাঁসল ট্রাম্প, বিশ্ব এককাট্টা। নিজ দেশেই জুটছে ‘গালাগাল’

Trump Modi relationship crisis: ভারতের রুশ তেলের কারণে আমেরিকার ৫০% শুল্কবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে সম্প্রতি এক তিক্ত বিরোধের…

Avatar

 

Trump Modi relationship crisis: ভারতের রুশ তেলের কারণে আমেরিকার ৫০% শুল্কবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে সম্প্রতি এক তিক্ত বিরোধের সূত্রপাত হয়েছে যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। জার্মান সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্রাম্প গত কয়েক সপ্তাহে চার বার প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফোন করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু প্রতিবারই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সেই কলগুলি এড়িয়ে গেছেন। আগস্ট ২৭ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়া আমেরিকার ৫০% শুল্কারোপ দুই দেশের মধ্যে এই কূটনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে।ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের এই অবনতির মূল কারণ হলো ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নীতি।

ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে যে ভারতের এই তেল কেনাকাটা পরোক্ষভাবে রাশিয়ার যুদ্ধকে অর্থায়ন করছে। তবে ভারত সরকার এই অভিযোগকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাদের শক্তি নীতিকে “অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অযুক্তিসঙ্গত” বলে আখ্যায়িত করেছে।প্রাথমিকভাবে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছিলেন, কিন্তু আগস্ট মাসে তিনি আরও ২৫% শুল্ক যোগ করে মোট ৫০% শুল্ক নির্ধারণ করেন। এই শুল্কের হার ব্রাজিল ব্যতীত অন্য কোনো দেশের জন্য এত বেশি নয়। ভারতের প্রায় ৪৮.২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি এই শুল্কের আওতায় পড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে।টেক্সটাইল, রত্ন ও জুয়েলারি, চামড়াজাত পণ্য, খাদ্য এবং গাড়ি শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। নতুন দিল্লির গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন, “নতুন শুল্ক ব্যবস্থা একটি কৌশলগত ধাক্কা যা আমেরিকায় ভারতের দীর্ঘদিনের উপস্থিতি নষ্ট করার হুমকি দিচ্ছে এবং রপ্তানিনির্ভর অঞ্চলগুলিতে বেকারত্ব বৃদ্ধি করবে”।

ট্রাম্পের ২৫% শুল্ক ঘোষণায় কাঁপছে ভারত: রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক নিয়ে ক্ষুব্ধ আমেরিকা

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে জাইতুং পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মোদী ট্রাম্পের ফোনকল এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা তার “ক্রোধের গভীরতা এবং সতর্কতার” পরিচায়ক। এই পত্রিকা উল্লেখ করেছে যে মোদী অনুভব করেছেন যে তিনি অপমানিত হয়েছেন এবং ট্রাম্পের চাপ কৌশল তার ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো কার্যকর হচ্ছে না।এই কূটনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থান আরও জটিল হয়ে উঠেছে কারণ দেশটি একদিকে আমেরিকার সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার সাথে তার সম্পর্কও উন্নত করার দিকে এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এ সপ্তাহে চীন সফরে যাবেন শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য, যা ২০১৮ সালের পর তার প্রথম চীন ভ্রমণ।

ট্রাম্পের এই আক্রমণাত্মক নীতির ফলে ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে একটি মৌলিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এখনও আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছেন, “দিনশেষে আমরা একসাথে আসব। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং আমেরিকা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি”।তবে এই সংকটের প্রভাব শুধু দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কোয়াড (Quadrilateral Security Dialogue) জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে ভারত, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া চীনের বিরুদ্ধে কৌশলগত সহযোগিতায় একসাথে কাজ করে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে এই বিরোধ ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে আমেরিকার চীন প্রতিরোধ কৌশলকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন যে তিনি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধ করতে ভূমিকা রেখেছেন এবং বাণিজ্যিক চাপ প্রয়োগ করে এই সংঘাত থামিয়েছেন।

তিনি সম্প্রতি দাবি করেছেন যে এই সংঘাতে সাতটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছিল এবং তার ১০০% শুল্কের হুমকি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি কমিয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার এই সমস্ত দাবি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং স্পষ্ট করেছে যে যুদ্ধবিরতি সরাসরি দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার ফলে হয়েছে।আমেরিকান গণমাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞরাও ট্রাম্পের এই নীতির সমালোচনা করছেন। নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখ করেছে যে ভারত আমেরিকার কাছে “বিভ্রান্ত” এবং বুঝতে পারছে না যে আমেরিকা আসলে কী চায়। অনেক আমেরিকান নীতি বিশ্লেষক মনে করছেন যে এই শুল্ক নীতি আমেরিকার দীর্ঘমেয়াদী ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের বিপরীতে কাজ করছে।চীনের সাথে তুলনায় ভারতের প্রতি ট্রাম্পের এই কঠোর অবস্থান আরও বিস্ময়কর। চীন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা হওয়া সত্ত্বেও সেদেশের উপর মাত্র ৩০% শুল্ক রয়েছে এবং ট্রাম্প চীনা ছাত্রদের জন্য আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দ্বিগুণ করেছেন।

ভারত কি ট্রাম্পকে শিক্ষা দিতে প্রস্তুত? মোদী সরকারের বিশাল শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা!

ভারত সরকার এখন বিকল্প বাজার খোঁজার দিকে মনোনিবেশ করেছে এবং ৪০টি দেশে টেক্সটাইল রপ্তানি বৃদ্ধির কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্প্রতি গুজরাটের এক সভায় বলেছেন যে ভারত তার কৃষক ও উদ্যোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবে না।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এর পূর্বাভাস অনুযায়ী ভারতের অর্থনীতি ২০২৫ সালে ৬.৪% হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছিল, কিন্তু এই শুল্কের কারণে সেই লক্ষ্য অর্জন এখন সন্দেহের মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এই শুল্কের ফলে ভারতের জিডিপি প্রায় ১% হ্রাস পেতে পারে।এই কূটনৈতিক সংকটের প্রভাব বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা কাঠামোতেও পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারত-আমেরিকা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যা গত দুই দশকে অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছিল, এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। উভয় দেশই প্রতিরক্ষা খাতে বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সম্পাদন করেছিল, যার মধ্যে রয়েছে F-35 যুদ্ধবিমান এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তর।বিশ্ব রাজনীতিতে এই সংকটের দূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। যদি ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক আরও অবনতি হয়, তাহলে চীন ও রাশিয়া এই পরিস্থিতির সুবিধা নিয়ে তাদের আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধি করতে পারে। ইতিমধ্যেই ভারত চীনের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে এগিয়ে চলেছে এবং রাশিয়ার সাথে তার কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করার পথে

About Author
Avatar

আন্তর্জাতিক খবরের সর্বশেষ আপডেট, গভীর বিশ্লেষণ এবং বিশ্বের প্রভাবশালী ঘটনাবলীর বিস্তারিত প্রতিবেদন পেতে আমাদের International Desk-এ আসুন। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ, রাজনৈতিক গতিবিধি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাংস্কৃতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে জানতে এই পাতাটি আপনার একমাত্র গন্তব্য।