Trump presidential salary amount in crore taka: ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সহ বেশ কয়েকজন প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই মনে আসে – মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কত টাকা বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়?বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নেতা হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পান বিপুল পরিমাণ আর্থিক সুবিধা।
বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বার্ষিক বেতন ৪০০,০০০ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩.৩৬ কোটি টাকা। এই বেতন ২০০১ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং তারপর থেকে এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে।বেতনের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট পান আরও নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা। তিনি বছরে অতিরিক্ত ৫০,০০০ ডলার (প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা) পান দাপ্তরিক খরচ বাবদ। এছাড়া বিনোদন খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১৯,০০০ ডলার (প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা)। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি একবারের জন্য পান ১০০,০০০ ডলার (প্রায় ৮৪ লক্ষ টাকা), যা দিয়ে হোয়াইট হাউস সাজানোর খরচ মেটানো যায়।এসব আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট পান আরও অনেক অর্থমূল্যহীন সুযোগ-সুবিধা।
তিনি বিনা ভাড়ায় থাকেন হোয়াইট হাউসে, যা ১৮ একর জমির উপর অবস্থিত একটি বিশাল প্রাসাদ। এখানে রয়েছে বিলাসবহুল কক্ষ, বাগান এবং বিস্তৃত অফিস স্পেস। হোয়াইট হাউসের পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য রয়েছে ক্যাম্প ডেভিড নামে মেরিল্যান্ডের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত একটি নির্জন আবাসস্থল।যাতায়াতের জন্য প্রেসিডেন্টের ব্যবহারে রয়েছে এয়ার ফোর্স ওয়ান বিমান, মেরিন ওয়ান হেলিকপ্টার এবং বুলেটপ্রুফ লিমোজিন। এগুলো সবই অত্যাধুনিক মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সজ্জিত। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা। তিনি ও তার পরিবার বিনামূল্যে পান বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা।ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন বছরে মাত্র ২,০০০ ডলার বেতন পেতেন, যা তখনকার সময়ে যথেষ্ট বেশি ছিল।
সময়ের সাথে সাথে প্রেসিডেন্টের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৭৮৯ সালে তা ছিল ২৫,০০০ ডলার, ১৮৭৩ সালে ৫০,০০০ ডলার, ১৯০৯ সালে ৭৫,০০০ ডলার, ১৯৪৯ সালে ১০০,০০০ ডলার, ১৯৬৯ সালে ২০০,০০০ ডলার এবং ২০০১ সালে সর্বশেষ বৃদ্ধি করে ৪০০,০০০ ডলার করা হয়।উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতাদের সাথে তুলনা করলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেতন খুব বেশি নয়। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী বছরে প্রায় ১.৬১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৩.৪৪ কোটি টাকা) পান, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। হংকংয়ের চিফ এক্সিকিউটিভের বার্ষিক বেতনও ৫.৫ কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে ভারতের রাষ্ট্রপতি মাসে মাত্র ৫ লক্ষ টাকা বা বছরে ৬০ লক্ষ টাকা পান, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের তুলনায় অনেক কম।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের মোট বার্ষিক প্যাকেজ দাঁড়ায় প্রায় ৫৬৯,০০০ ডলার বা ৪.৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ৪০০,০০০ ডলার মূল বেতন, ৫০,০০০ ডলার ব্যয় ভাতা, ১০০,০০০ ডলার ভ্রমণ ভাতা এবং ১৯,০০০ ডলার বিনোদন ভাতা। তবে এই আর্থিক সুবিধার চেয়েও বেশি মূল্যবান হলো অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যেমন বিনামূল্যে বাসস্থান, যানবাহন, নিরাপত্তা ইত্যাদি।প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরেও সাবেক প্রেসিডেন্টরা পান বেশ কিছু সুবিধা। তারা বছরে প্রায় ২৩০,০০০ ডলার (১.৯৩ কোটি টাকা) পেনশন পান। এছাড়াও তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে অফিস স্পেস, কর্মী এবং দাপ্তরিক ভ্রমণের খরচ।
বিশ্বনেতাদের চোখে বাইডেনের পদত্যাগ: আমেরিকার রাজনীতিতে নতুন মোড়
অনেক সাবেক প্রেসিডেন্ট বই লিখে, বক্তৃতা দিয়ে বা অন্যান্য উপায়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন।তবে উল্লেখ্য যে, কয়েকজন প্রেসিডেন্ট তাদের বেতন দান করে দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, জন এফ কেনেডি এবং হারবার্ট হুভার। তারা তাদের বেতন বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান বা ট্রাস্টে দান করেছিলেন।বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জিডিপির সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেতন দেশের মাথাপিছু জিডিপির প্রায় ৬০৬%। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর বেতন সেদেশের মাথাপিছু জিডিপির ১,৩২০%, কেনিয়ার প্রেসিডেন্টের বেতন ২,৩৬০% এবং তানজানিয়ার প্রেসিডেন্টের বেতন ১,২৮৫%।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ। তবে এর বিনিময়ে তাকে পালন করতে হয় বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি নির্বাচিত হন, তাহলে তিনিও পাবেন এই বিপুল পরিমাণ আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।
মন্তব্য করুন