Things Trump will do upon assuming Presidency: ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তার দ্বিতীয় মেয়াদে দেশকে আবার “মহান” করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তার এই প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা বাস্তবসম্মত? আসুন দেখে নেওয়া যাক ট্রাম্পের ১১টি প্রধান প্রতিশ্রুতি:
১. বৃহত্তম অভিবাসী বহিষ্কার কর্মসূচি: ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিবাসী বহিষ্কার কর্মসূচি চালু করবেন। তিনি বলেছেন, প্রথম দিনেই ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। এজন্য তিনি ন্যাশনাল গার্ড ও স্থানীয় পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করার কথা বলেছেন। তবে এত বড় সংখ্যক মানুষকে কীভাবে চিহ্নিত করা হবে বা বহিষ্কার করা হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তিনি দেননি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব এবং এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পাবেন প্রায় ৩.৩৬ কোটি টাকা বেতন!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পাবেন প্রায় ৩.৩৬ কোটি টাকা বেতন!
২. মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ সম্পন্ন করা: ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে দ্বিতীয় মেয়াদে এই কাজ সম্পন্ন করবেন। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান কীভাবে করা হবে তা স্পষ্ট নয়।
৩. আয়কর কমানো: ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কর্পোরেট ট্যাক্স ২১% থেকে কমিয়ে ১৫% করবেন। এছাড়া টিপস, ওভারটাইম ও সোশ্যাল সিকিউরিটি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর কর তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে এর ফলে সরকারি আয় কমে যাবে এবং ঘাটতি বাড়বে।
৪. আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি: ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সব আমদানি পণ্যের ওপর ১০-২০% শুল্ক আরোপ করবেন। চীন থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এই হার হবে ৬০%। তার মতে এতে দেশীয় শিল্প উপকৃত হবে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে এর ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে।
৫. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপ প্রত্যাহার: ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে “জালিয়াতি” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত সব পদক্ষেপ প্রত্যাহার করবেন। এর মধ্যে রয়েছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানো।
৬. ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধান: ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাধান করে দেবেন। তবে কীভাবে এটি সম্ভব হবে তার কোনো বিস্তারিত তিনি দেননি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি অবাস্তব প্রতিশ্রুতি।
৭. চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ: ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চীনের সাথে “বাণিজ্য যুদ্ধ” শুরু করবেন। তিনি চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করবেন এবং চীনা কোম্পানিগুলোকে মার্কিন বাজার থেকে বের করে দেবেন। তবে এর ফলে আমেরিকান ভোক্তাদের ওপর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
Shots Fired At Trump Rally: মৃত্যুর মুখোমুখি ট্রাম্প, রক্তাক্ত মাটিতে আমেরিকার গণতন্ত্র
Shots Fired At Trump Rally: মৃত্যুর মুখোমুখি ট্রাম্প, রক্তাক্ত মাটিতে আমেরিকার গণতন্ত্র
৮. জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল: ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির অধিকার বাতিল করবেন। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবে না। তবে এটি করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে, যা একটি জটিল প্রক্রিয়া।
৯. ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাই: ট্রাম্প বলেছেন, তিনি লক্ষ লক্ষ ফেডারেল কর্মচারীকে ছাঁটাই করবেন। তিনি এদের “ডীপ স্টেট” বলে অভিহিত করেছেন। তবে এর ফলে সরকারি সেবা ব্যাহত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
১০. শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন: ট্রাম্প ফেডারেল শিক্ষা দপ্তর বাতিল করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে “মার্কসবাদী পাগলামি” দূর করবেন। তিনি কলেজগুলোর এনডাউমেন্ট ফান্ড থেকে কর আদায় করে সেই অর্থ দিয়ে একটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবেন বলেও জানিয়েছেন।
১১. জানুয়ারি ৬ দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা: ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় অংশগ্রহণকারী ও দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা করে দেবেন। তিনি এদের “রাজনৈতিক বন্দি” হিসেবে অভিহিত করেছেন।ট্রাম্পের এই প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
অনেকে মনে করছেন, এর বেশিরভাগই বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। তবে ট্রাম্পের সমর্থকরা আশাবাদী যে তিনি এবার তার প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করবেন।ট্রাম্পের এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়িত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। অভিবাসন, বাণিজ্য, পরিবেশ, শিক্ষা – প্রায় সব ক্ষেত্রেই তার প্রস্তাবিত নীতিগুলো বর্তমান অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তবে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে বাধা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। আবার কিছু ক্ষেত্রে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে, যা একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া।অর্থনৈতিক দিক থেকেও এসব প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কর কমানো ও আমদানি শুল্ক বাড়ানোর ফলে সরকারি আয় কমে যেতে পারে। আবার অভিবাসী বহিষ্কারের ফলে শ্রমবাজারে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি অনেকেই অবাস্তব মনে করছেন। আবার চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ত