Turkey Stray Dogs Legislation Details: তুরস্কের সংসদে একটি নতুন আইন পাস হয়েছে যা দেশের রাস্তা থেকে লক্ষ লক্ষ পথকুকুর সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই আইনটি পাস হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। পশু অধিকার কর্মীরা এটিকে “গণহত্যার আইন” হিসেবে অভিহিত করেছেন, অন্যদিকে সরকার বলছে এটি জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়।
আইনের মূল বিষয়বস্তু
নতুন আইনটি অনুযায়ী পৌরসভাগুলোকে পথকুকুর ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখতে হবে। সেখানে তাদের টিকা দেওয়া, বন্ধ্যাকরণ এবং চিকিৎসা করার পর দত্তক দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হবে। তবে যেসব কুকুর মানুষ বা অন্য প্রাণীর জন্য বিপজ্জনক, অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বা অসুস্থ, তাদের ইউথানাইজ করা হবে।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, তুরস্কে প্রায় ৪০ লক্ষ পথকুকুর রয়েছে। এদের অনেকেই নিরীহ হলেও, কিছু কুকুর দলবদ্ধভাবে মানুষকে আক্রমণ করছে। গত দুই বছরে কমপক্ষে ৭৫ জন, যার মধ্যে ৪৪ জন শিশু, কুকুরের আক্রমণে বা কুকুরের কারণে ঘটা দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
অবিশ্বাস্য! ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের জয়ে ভেঙে গেল ৫টি বিশ্ব রেকর্ড – যা জানলে আপনিও হবেন হতবাক!
বিতর্ক ও প্রতিবাদ
আইনটি পাস হওয়ার পর থেকে তুরস্কের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে নেমেছে। ইস্তাম্বুলের শিশানে স্কয়ারে সমবেত প্রতিবাদীরা বলেছেন, “তোমাদের গণহত্যার আইন আমাদের কাছে কাগজের টুকরো মাত্র। আমরা রাস্তায় আইন লিখব। ঘৃণা ও শত্রুতা নয়, জীবন ও সংহতি জয়ী হবে”।
পশু অধিকার কর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় এই আইন বাস্তবায়নের ফলে বড় সংখ্যক কুকুর মারা যেতে পারে। পশু চিকিৎসক তুরকান সেলান বলেছেন, “তুরস্কে আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত জায়গা নেই – খুব কম সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র আছে। এর ফলে কুকুর মারার পথ খোলা হয়েছে। আমরা পশু অধিকার কর্মীরা খুব ভালভাবেই জানি এর অর্থ মৃত্যু”।
সরকারের অবস্থান
সরকার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ন্যায়মন্ত্রী ইলমাজ তুঞ্চ গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছেন, যারা “বিনা কারণে” পথকুকুর মারবে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রী ইব্রাহিম ইউমাকলি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এটি কোনো ‘গণহত্যার’ আইন নয়। এটি একটি ‘দত্তক’ আইন”।
প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়িপ এরদোগান এই আইনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, দেশের “পথকুকুর সমস্যা” সমাধানের জন্য এটি প্রয়োজন।
বিরোধী দলের অবস্থান
প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (CHP) এই আইনের তীব্র বিরোধিতা করেছে। দলের একজন শীর্ষ নেতা মুরাত এমির সংসদে বলেছেন, “আপনারা একটি আইন তৈরি করেছেন যা নৈতিকভাবে, বিবেকের দিক থেকে এবং আইনগতভাবে ভুল। আপনারা রক্তপাতের দায় থেকে মুক্তি পাবেন না”।
CHP নেতা ওজগুর ওজেল বলেছেন, তার দল এই আইন বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে যাবে। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, টিকা দেওয়া কুকুরগুলো বন্যপ্রাণী ও শহুরে জীবনের মধ্যে জীবাণু সংক্রমণের বাধা হিসেবে কাজ করে, তাই এই আইন জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
দুই যুগের দুই নেতা: ইন্দিরা থেকে মোদী – নির্বাচনী ইতিহাসের অদ্ভুত সাদৃশ্য
আইনের সম্ভাব্য প্রভাব
এই আইনের ফলে তুরস্কের পৌরসভাগুলোর উপর বিরাট চাপ পড়বে। তাদের ২০২৮ সালের মধ্যে নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও বিদ্যমান কেন্দ্রগুলো উন্নত করতে হবে। পৌরসভাগুলোকে বার্ষিক বাজেটের কমপক্ষে ০.৩% পশু পুনর্বাসন সেবা ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় করতে হবে।
অনেকে আশঙ্কা করছেন, অর্থের অভাবে পৌরসভাগুলো পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারবে না। এর ফলে অনেক কুকুর অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে অবহেলিত আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বাধ্য হবে বা ইউথানাইজ করা হবে[1]।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে এই আইনের ফলে “অসংখ্য প্রাণীর অপ্রয়োজনীয় কষ্ট ও মৃত্যু” হতে পারে।
ইউরোপের বিভিন্ন শহরেও রাজনৈতিক দল ও পশু কল্যাণ সংগঠনগুলো প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। অনেকে সতর্ক করেছেন যে, এই আইনের কারণে পর্যটকরা তুরস্ক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হতে পারেন।
তুরস্কের নতুন পথকুকুর আইন দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। একদিকে সরকার জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার যুক্তি দিচ্ছে, অন্যদিকে পশু অধিকার কর্মীরা এটিকে নিষ্ঠুর ও অমানবিক বলে আখ্যায়িত করছেন। আইনটি কীভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং এর ফলে পথকুকুর ও মানুষের জীবনে কী প্রভাব পড়ে, তা পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে, নাগরিকরা স্থানীয় পৌরসভার সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন কীভাবে তারা পথকুকুর দত্তক নিতে পারেন বা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্রে সাহায্য করতে পারেন। পশু অধিকার সংগঠনগুলোর সাথেও যোগাযোগ করা যেতে পারে আইন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য।