powerful Rath Yatra puja: আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় রথযাত্রা, যা হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব । ২০২৫ সালে ২৭শে জুন শুক্রবার এই পবিত্র রথযাত্রা পালিত হবে, যেদিন প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা রথে চড়ে মাসির বাড়ি গুণ্ডিচায় যাত্রা করবেন । এই পবিত্র তিথিতে বিশেষ কিছু টোটকা ও উপায় পালন করলে জীবনে আসে অভূতপূর্ব পরিবর্তন, কেটে যায় সমস্ত বিপদ-আপদ এবং ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা । জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, রথযাত্রার দিনক্ষণ এতটাই শুভ যে এই দিন করা প্রতিটি ভাল কাজ অক্ষয় ফল দান করে ।
রথযাত্রার পবিত্র মাহাত্ম্য ও শুভ সময়
রথযাত্রা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ । শাস্ত্রে উল্লেখ আছে ‘রথস্থ বাম নং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে’, অর্থাৎ রথের উপর অধিষ্ঠিত জগন্নাথকে দর্শন করলে পুনর্জন্ম হয় না । ২০২৫ সালে দ্বিতীয়া তিথি শুরু হবে ২৬শে জুন দুপুর ১:২৫ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৭শে জুন সকাল ১১:১৯ মিনিটে ।
প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই রথযাত্রায় অংশ নেন এবং রথের দড়ি স্পর্শ করে মোক্ষ লাভের আশায় থাকেন । জগন্নাথ জগতের নাথ হিসেবে সকল জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের উপর আশীর্বাদ বর্ষণ করেন ।
জীবন পরিবর্তনকারী ১০টি কার্যকরী টোটকা
প্রথম টোটকা: ১১ সংখ্যার পবিত্র নৈবেদ্য
রথযাত্রার দিন যেকোনো জগন্নাথ মন্দিরে হলুদ রঙের নতুন বস্ত্রের উপর ১১ রকমের ফল, ১১ রকমের মিষ্টি এবং ১১টি কয়েন রেখে অর্পণ করুন । এই পবিত্র সংখ্যা ১১ জগন্নাথদেবের অত্যন্ত প্রিয় এবং মনস্কামনা পূরণে অব্যর্থ । নিষ্ঠার সাথে মনের ইচ্ছা জানিয়ে এই নৈবেদ্য অর্পণ করলে কয়েক দিনের মধ্যেই ফল পাওয়া যায় ।
দ্বিতীয় টোটকা: পবিত্র গঙ্গাস্নানের মাহাত্ম্য
রথযাত্রার দিন ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে গঙ্গাস্নান করা অত্যন্ত শুভফলদায়ক । এরপর নতুন শুদ্ধ বস্ত্র পরে মন্দিরে যাওয়ার নিয়ম । যেকোনো পুণ্য তিথিতে গঙ্গাস্নান করলে পুণ্য লাভ হয়, তাই রথযাত্রার দিনেও এই নিয়ম পালন করা উচিত ।
তৃতীয় টোটকা: তুলসী মালার পবিত্র শক্তি
শাস্ত্রীয় মতে তুলসী জগন্নাথদেবের সবচেয়ে প্রিয়। রথযাত্রার দিন ১০৮টি তুলসী পাতা দিয়ে মালা তৈরি করুন, যদি ১০৮টি পাতা না থাকে তাহলে ৫৪টি পাতা দিয়ে মালা তৈরি করতে পারেন । এই মালা জগন্নাথদেবের গলায় পরিয়ে দিলে সারা বছর ভাগ্য ভাল থাকে।
চতুর্থ টোটকা: অর্থ বৃদ্ধির বিশেষ উপায়
অর্থ বৃদ্ধির জন্য রথযাত্রার দিন ঠাকুরের আসনে একটি সুন্দর হলুদ কাপড় রাখতে হবে। ওই কাপড়ের ওপর এগারোটি কড়ি রাখুন এবং কড়িগুলোর ওপর কেশরের টিপ দিন। সারা রাত ওগুলো ঠাকুরের আসনে রেখে দিন এবং পরের দিন কড়িগুলো ওই হলুদ কাপড়ে বেঁধে টাকা-পয়সার জায়গায় রেখে দিন।
পঞ্চম টোটকা: ঘিয়ের প্রদীপের পবিত্র আলো
রথযাত্রার দিন একটা ঘিয়ের প্রদীপের মধ্যে দুটো কর্পুর ও দুটো লবঙ্গ জ্বেলে জগন্নাথদেবের মন্দিরে অর্পণ করুন। এই প্রদীপের আলো সকল অন্ধকার দূর করে জীবনে আনে উজ্জ্বলতা। ধূপকাঠি দিয়ে পূজা করে ভগবানকে স্নান করান এবং ফুল নিবেদন করুন
ষষ্ঠ টোটকা: শিশুদের মাধ্যমে পুণ্য অর্জন
রথযাত্রার দিন পাঁচটি শিশুকে তাদের পছন্দ মতো কিছু জিনিস দান করুন। শিশুরা নিষ্পাপ হওয়ায় তাদের মাধ্যমে দান করলে বিশেষ পুণ্য অর্জিত হয়। এই দানের ফলে জীবনে আসে অপরিসীম কল্যাণ এবং সন্তানদের মঙ্গল হয়।
সপ্তম টোটকা: নেগেটিভ এনার্জি দূরীকরণ
বাড়ি থেকে নেগেটিভ এনার্জি দূর করে পজিটিভ এনার্জি নিয়ে আসতে রথযাত্রার দিন কর্পুর ও লবঙ্গ পুড়িয়ে সেই ছাই বাড়ির এক কোণে রেখে দিন । চামর ও ময়ূর পাখা ব্যবহার করে জগন্নাথদেবের সেবা করলে বিশেষ কৃপা পাওয়া যায়।
অষ্টম টোটকা: বৃক্ষরোপণের মাহাত্ম্য
রথযাত্রার মতো শুভ দিনে বৃক্ষরোপণ করা অত্যন্ত পুণ্যজনক। এই দিনে গাছ পুঁতলে অপরিসীম পুণ্য লাভ হয় এবং পরিবেশের কল্যাণও হয়। শাস্ত্রমতে রথযাত্রার তিথিতে বৃক্ষরোপণ করলে সুখ, সমৃদ্ধি ও সম্পদে পরিপূর্ণ থাকে সংসার।
নবম টোটকা: জগন্নাথ মন্ত্র জপের শক্তি
রথযাত্রার দিন বিশেষ মন্ত্র জপ করা অত্যন্ত ফলদায়ক। “জগন্নাথ স্বামী নয়ন পথগামী ভবতু মে” এই মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করলে মানসিক শান্তি ও আত্মিক উন্নতি হয় । এছাড়া “ওঁ নারায়ণ জগন্নাথায় নমঃ” মন্ত্রটিও অত্যন্ত শক্তিশালী ।
দশম টোটকা: গুরুত্বপূর্ণ কাজের সূচনা
রথযাত্রার দিন গৃহপ্রবেশ ও ভিত্তি পূজার জন্য অত্যন্ত শুভ । এই দিনে যেকোনো নতুন কাজ শুরু করলে সাফল্য নিশ্চিত । কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন বড় বারোয়ারি দুর্গাপূজার খুঁটিপূজাও এই দিন করা হয়।
জগন্নাথদেবের প্রিয় রাশিচক্র
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী চারটি রাশির জাতক-জাতিকারা রথযাত্রায় বিশেষ আশীর্বাদ পান । বৃষ রাশির জাতকরা জগন্নাথদেবের অত্যন্ত প্রিয় এবং তাদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায় । কর্কট রাশির জাতকরা আবেগপ্রবণ হওয়ায় প্রভুর কৃপায় মানসিক প্রশান্তি পান । সিংহ রাশির জাতকরা নেতৃত্বের গুণাবলী নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং সমাজে বিশেষ প্রতিষ্ঠা পান । তুলা রাশির জাতকদের জীবনে ভারসাম্য বজায় থাকে এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আসে।
পূজা পদ্ধতি ও নিয়মাবলী
রথযাত্রার দিন সকালে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরে পূজায় বসতে হয়। প্রথমে ধূপকাঠি জ্বালিয়ে ঘি-এর প্রদীপ জ্বালান। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে পবিত্র জল দিয়ে স্নান করিয়ে গোলাপ ও তুলসী পাতার মালা নিবেদন করুন। এরপর চামর দিয়ে সাতবার হাওয়া করুন এবং ময়ূর পাখা ব্যবহার করুন। পূজা শেষে ঘন্টা বাজিয়ে প্রিয় খাবার নিবেদন করুন।
নিরামিষ আহার ও পবিত্রতা
রথযাত্রার দিন নিরামিষ আহার করা বাধ্যতামূলক। এই দিনে মাংস, মাছ, পেঁয়াজ, রসুন পরিহার করে সাত্ত্বিক খাবার গ্রহণ করতে হয় । পবিত্র প্রসাদ গ্রহণ করে দিনটি অতিবাহিত করলে মনে শান্তি আসে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে।
রথযাত্রায় ঘুরবে ভাগ্যের চাকা – এই বিশ্বাস শুধু কুসংস্কার নয়, বরং সহস্র বছরের ধর্মীয় ঐতিহ্যের ফসল। ২০২৫ সালের ২৭শে জুন এই পবিত্র রথযাত্রায় উল্লিখিত ১০টি কার্যকরী টোটকা নিষ্ঠার সাথে পালন করলে জীবনে আসবে অভূতপূর্ব পরিবর্তন । জগন্নাথদেবের আশীর্বাদে কেটে যাবে সমস্ত বিপদ-আপদ এবং খুলে যাবে ভাগ্যের দরজা । মনে রাখবেন, শুধু টোটকা করলেই হবে না, সাথে থাকতে হবে সৎ কর্ম, বিশ্বাস ও ভক্তিভাব । জয় জগন্নাথ!