অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

বিশ্বে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন, আর তার ঠিক পরেই জায়গা করে নিয়েছে ভারত। সুইডেনের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (সিপ্রি)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,…

Avatar

 

বিশ্বে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন, আর তার ঠিক পরেই জায়গা করে নিয়েছে ভারত। সুইডেনের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (সিপ্রি)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট অস্ত্র আমদানির ৮.৯ শতাংশ করেছে ইউক্রেন, আর ভারতের হিস্যা ৮.৩ শতাংশ। এই তথ্য সহজেই বোঝায় যে, যুদ্ধের মুখে ইউক্রেনের অস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে, আর ভারতও নিজের প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়াতে পিছিয়ে নেই।গত চার বছরে বিশ্বের অস্ত্র বাজারে বড় পরিবর্তন এসেছে। সিপ্রির রিপোর্ট বলছে, ২০২০-২০২৪ সময়কালে ইউক্রেন অস্ত্র আমদানিতে শীর্ষে উঠে এসেছে, যা মূলত রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের কারণে। এই সময়ে তাদের আমদানি প্রায় ১০০ শতাংশ বেড়েছে, যার বড় অংশ এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও পোল্যান্ডের মতো দেশ থেকে। অন্যদিকে, ভারত দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও তার আমদানির পরিমাণ আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। ২০১৫-২০১৯ সালে ভারত বিশ্বের অস্ত্র আমদানির ৯.৩ শতাংশ করেছিল, যা এখন ৮.৩ শতাংশে নেমেছে। এর পেছনে ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নীতি এবং দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা কাজ করছে। তবে, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার কারণে ভারত এখনও বিদেশ থেকে অস্ত্র কিনতে বাধ্য।বিষয়টির গভীরে গেলে দেখা যায়, ইউক্রেনের অস্ত্র আমদানি বাড়ার পেছনে রাশিয়ার আগ্রাসনই মূল কারণ। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করেছে। সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে ইউক্রেনের অস্ত্রের প্রায় অর্ধেক এসেছে আমেরিকা থেকে। এছাড়া, ইউরোপীয় দেশগুলোও যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্ক ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। ভারতের ক্ষেত্রে চিত্রটা একটু ভিন্ন। ভারত এখনও তার অস্ত্রের ৩৮ শতাংশ রাশিয়া থেকে কেনে, যদিও এই নির্ভরতা আগের তুলনায় কমেছে। ২০১৫-১৯ সালে রাশিয়ার অংশ ছিল ৫৫ শতাংশ। এখন ইজরায়েল (৩৪ শতাংশ) এবং ফ্রান্স (২৮ শতাংশ) থেকেও ভারত অস্ত্র কিনছে, যা দেশটির প্রতিরক্ষা কৌশলের বৈচিত্র্য দেখায়।এই প্রতিবেদনে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের অস্ত্র আমদানির তালিকায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে কাতার, সৌদি আরব এবং পাকিস্তান। পাকিস্তান গত চার বছরে ৫.৩ শতাংশ অস্ত্র আমদানি করেছে, যা তার অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও অস্ত্রের প্রতি আগ্রহ কমেনি তা বোঝায়। আবার, চীন এই তালিকার প্রথম দশে নেই, কারণ তারা নিজেদের অস্ত্র উৎপাদনে অনেকটাই স্বনির্ভর হয়েছে। অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা (৪৩ শতাংশ), তারপর ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি। রাশিয়ার রপ্তানি কমে ৭.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগে ছিল ২১ শতাংশ। এটি ইউক্রেন যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব।সহজ কথায়, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য অস্ত্র কিনছে, আর ভারত নিজের নিরাপত্তার জন্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতি দেশে অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করলেও, এখনও পুরোপুরি বিদেশি নির্ভরতা কমেনি। তবে, এই পরিসংখ্যান ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ও কৌশলের গুরুত্ব বোঝায়। অন্যদিকে, ইউক্রেনের অবস্থান বিশ্বে যুদ্ধের প্রভাব আরও স্পষ্ট করে।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম