Ulta Rath 2025 timing: রথযাত্রার মহাউৎসবের পর আসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব—উল্টো রথ বা বাহুড়া যাত্রা। ২০২৫ সালে এই পবিত্র অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুলাই, শনিবার। হিন্দু ধর্মের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসবটি ভগবান জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার মাসির বাড়ি থেকে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনের প্রতীক। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে পালিত এই উৎসবের রয়েছে গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য।
উল্টো রথের সঠিক তারিখ ও তিথি
২০২৫ সালে উল্টো রথযাত্রা পড়েছে ৫ জুলাই, শনিবার। এটি আষাঢ় মাসের ২০ তারিখে পালিত হবে। মূল রথযাত্রার ঠিক ৮ দিন পর এই পবিত্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেহেতু এ বছর রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৭ জুন, শুক্রবার, সেই হিসাবে উল্টো রথ হবে ৫ জুলাই।
উল্টো রথের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই—এটি সারাদিনব্যাপী পালন করা যেতে পারে। বিভিন্ন মন্দির ও অঞ্চলভেদে এর সময়সূচি ভিন্ন হতে পারে। তবে ঐতিহ্যগতভাবে সকাল থেকেই এই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়।
উল্টো রথের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
উল্টো রথযাত্রার গভীর আধ্যাত্মিক অর্থ রয়েছে। মূল রথযাত্রায় ভগবান জগন্নাথদেব তাঁর ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে নিয়ে মাসির বাড়ি গুন্ডিচা মন্দিরে যান। সেখানে এক সপ্তাহ অবস্থানের পর তাঁরা আবার নিজ গৃহে ফিরে আসেন—এটিই উল্টো রথ বা বাহুড়া যাত্রা।
এই যাত্রা ভক্তদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, যারা উল্টো রথের দড়ি টানেন বা এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা বিশেষ পুণ্য লাভ করেন। এটি পারিবারিক বন্ধন, ঐক্য ও প্রেমের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়।
পুরীর উল্টো রথযাত্রার বিশেষত্ব
ওড়িশার পুরীধামে উল্টো রথযাত্রার মহিমা অন্যরকম। এখানে তিনটি বিশাল রথ—নন্দীঘোষ (জগন্নাথদেবের), তালধ্বজ (বলরামের) ও দর্পদলন বা পদ্মধ্বজ (সুভদ্রার)—গুন্ডিচা মন্দির থেকে জগন্নাথ মন্দিরের দিকে রওনা হয়।
পুরীর উল্টো রথযাত্রায় লাখো ভক্ত অংশগ্রহণ করেন। এই দিনে বিশেষ পূজা-অর্চনা, ভজন-কীর্তন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রথের দড়ি টানার জন্য ভক্তদের মধ্যে প্রবল উৎসাহ দেখা যায়।
বাংলার উল্টো রথ উৎসব
পশ্চিমবঙ্গেও উল্টো রথ অত্যন্ত জনপ্রিয় উৎসব। কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে মাহেশ, দীঘা ও অন্যান্য স্থানে এই উৎসব পালিত হয়। প্রতিটি এলাকার নিজস্ব ঐতিহ্য ও রীতিনীতি রয়েছে।
মাহেশের উল্টো রথ সাধারণত মূল রথযাত্রার ৭-৮ দিন পরে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে স্থানীয় ভক্তরা বিশেষ উৎসাহে অংশগ্রহণ করেন। দীঘায় নতুন জগন্নাথ মন্দির স্থাপনের পর এখানেও উল্টো রথের আয়োজন শুরু হয়েছে।
উৎসবের প্রস্তুতি ও আচার-অনুষ্ঠান
উল্টো রথযাত্রার প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়। রথগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়, নতুন সাজসজ্জা করা হয় এবং বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। এই দিনে জগন্নাথদেবের বিশেষ আরতি ও ভোগ নিবেদন করা হয়।
ভক্তরা এই দিনে উপবাস রাখেন, জগন্নাথদেবের নামে মানত করেন এবং দান-খয়রাত করেন। অনেকে রথের দড়ি টানার জন্য সকাল থেকেই মন্দিরে হাজির হন।
রথযাত্রা থেকে উল্টো রথ: সম্পূর্ণ উৎসবের সূচি
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে নয় দিনব্যাপী এই মহাউৎসব চলে:
- স্নানযাত্রা: ১২ জুন, ২০২৫
- অনবসর কাল: ১৩-২৬ জুন, ২০২৫
- গুন্ডিচা মার্জনা: ২৬ জুন, ২০২৫
- মূল রথযাত্রা: ২৭ জুন, ২০২৫
- হের পঞ্চমী: ১ জুলাই, ২০২৫
- বাহুড়া যাত্রা: ৫ জুলাই, ২০২৫
- সুনা বেসা: ৫ জুলাই, ২০২৫
- নীলাদ্রি বিজয়া: ৫ জুলাই, ২০২৫
উল্টো রথের সামাজিক প্রভাব
উল্টো রথযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক ঐক্যের প্রতীকও। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এটি পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করে।
এই উৎসবের অর্থনৈতিক প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় ব্যবসায়ী, কারিগর, ফুল বিক্রেতা, খাবারের দোকানি—সবার আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পর্যটনের ক্ষেত্রেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
আধুনিক যুগে উল্টো রথ উৎসব
বর্তমান যুগে উল্টো রথ উৎসব নতুন মাত্রা পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এই উৎসবের প্রচার ও প্রসার আরও ব্যাপক হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।
কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব পালনের নতুন রীতি চালু হয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়, যাতে ঘরে বসেও ভক্তরা দর্শন লাভ করতে পারেন।
উল্টো রথের আধ্যাত্মিক বার্তা
উল্টো রথযাত্রার গভীর আধ্যাত্মিক বার্তা রয়েছে। এটি আমাদের শেখায় যে জীবনে যত উচ্চতায়ই পৌঁছান না কেন, নিজের শিকড়ে ফিরে আসা প্রয়োজন। পারিবারিক বন্ধন ও ঐতিহ্যের গুরুত্ব এই উৎসবের মূল বার্তা।
ভগবান জগন্নাথদেবের এই যাত্রা আমাদের জীবনযাত্রার সাথে তুলনা করা যায়। আমরা যখন জাগতিক কর্মব্যস্ততায় মেতে থাকি, তখন মাঝে মাঝে আধ্যাত্মিক জগতে ফিরে আসার প্রয়োজন হয়—এটিই উল্টো রথের প্রকৃত শিক্ষা।
উল্টো রথ ২০২৫ সালে ৫ জুলাই পালিত হবে। এই পবিত্র দিনে ভক্তরা ভগবান জগন্নাথদেবের কৃপা লাভের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করবেন। এই উৎসব আমাদের জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি নিয়ে আসুক—এটিই সকল ভক্তের কামনা। উল্টো রথের এই শুভ অবসরে আসুন আমরা সবাই মিলে পারস্পরিক প্রেম, ভালোবাসা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি।