বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এখনও কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই বলে জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট ২০২৪) এক সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর…

Ishita Ganguly

 

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এখনও কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই বলে জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট ২০২৪) এক সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “আমাদের কাছে তাঁর (শেখ হাসিনার) পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই।”
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে চাকরির কোটা নিয়ে ছাত্র আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নেওয়ার পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাঁকে ৪৫ মিনিটের আল্টিমেটাম দেওয়ার পর তিনি নিরাপত্তার জন্য তাঁর বোনসহ ভারতে পালিয়ে আসেন।
শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তবে তিনি কতদিন ভারতে থাকবেন বা কোথায় যাবেন সে বিষয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানান, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও বিবর্তনশীল। বাংলাদেশের জনগণের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক যাতে স্বাভাবিক জীবন শুরু হতে পারে।”

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, তাঁর মা এখনও কোনো দেশে আশ্রয় চাননি। তিনি বলেন, “আশ্রয় চাওয়ার খবরগুলো সঠিক নয়। তিনি কোথাও আশ্রয় চাননি। তাই যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্র এখনও সাড়া দেয়নি এমন প্রশ্ন অবান্তর।”
সজীব ওয়াজেদ জয় আরও জানান, তাঁর মা রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ভাবছেন। তিনি বলেন, “তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে সরে এসেছেন… আমার মা যাই হোক অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন, এটাই তাঁর শেষ মেয়াদ হতে যাচ্ছিল।” বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর মঙ্গলবার সংসদে বলেন, “খুব অল্প সময়ের নোটিশে” শেখ হাসিনার ভারতে আসার অনুরোধ পেয়েছিল সরকার।
তিনি আরও জানান, ভারত ঢাকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।বাংলাদেশে বিক্ষোভের সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার খবরও পাওয়া গেছে। ইসলামপন্থী চরমপন্থীরা হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে, আগুন লাগিয়েছে এবং নারীদের অপহরণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন মঙ্গলবার সংসদ ভেঙে দিয়েছেন এবং নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নিযুক্ত করেছেন।  নতুন সরকার তিন মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে।
শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আশ্রয় চাইতে হলে প্রথম নিরাপদ দেশেই তা করতে হবে।যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম, কারণ শেখ হাসিনার শাসনকালে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক অবনতি হয়েছিল।
এ বছরের শুরুতে যখন তাঁর দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করে, তখন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, “হাজার হাজার বিরোধী দলীয় সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।” শেখ হাসিনার মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
ভারতে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়েও কূটনৈতিক জটিলতা রয়েছে। ভারত শেখ হাসিনাকে সমর্থন করছে বলে মনে হলে তা একটি কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক অংশীদারের সঙ্গে আগামী সরকারের সম্পর্ককে জটিল করে তুলতে পারে। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সম্পর্কও বিবেচনায় নিতে হবে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে অশান্তির সময় তাঁর পুরো পরিবার নিহত হওয়ার পর ইন্দিরা গান্ধীর সরকার তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিল।
বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে একটি “নিরাপদ আবাসে” রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁর ভবিষ্যৎ গন্তব্য নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। এদিকে, বুধবার সকালে একটি বিশেষ এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটে ঢাকা থেকে ২০৫ জন যাত্রী (৬ জন শিশুসহ) নয়াদিল্লিতে এসেছেন বলে জানা গেছে।
সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত। শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্ট নয়। ভারত সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতির কী মোড় নেয় তা লক্ষ্য করার বিষয়।
About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন