SAF U-17 Championship: ভুটানের রাজধানী থিম্পুর চ্যাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে আজ সোমবার অনুষ্ঠিত স্যাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারত বাংলাদেশকে ২-০ গোলে পরাজিত করে শিরোপা ধরে রাখলো। প্রথমার্ধে কোনো দলই গোল করতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৮তম মিনিটে মহম্মদ কাইফের গোলে ভারত এগিয়ে যায়। এরপর সংযোজিত সময়ের পঞ্চম মিনিটে মহম্মদ আরবাশ ভারতের জয় নিশ্চিত করেন।
এই জয়ের মাধ্যমে ভারত টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্যাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতলো। গত বছরও ভারত বাংলাদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবারের টুর্নামেন্টে ভারত অপরাজিত থেকে শিরোপা জিতলো। গ্রুপ পর্বে তারা বাংলাদেশকে ১-০ গোলে এবং মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল। সেমিফাইনালে নেপালকে ৪-২ গোলে হারানোর পর ফাইনালেও জয়ী হয়ে অভিযান শেষ করলো।
খেলার শুরু থেকেই ভারত আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছিল। তবে প্রথমার্ধে তারা গোল করতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৮তম মিনিটে মহম্মদ কাইফ ভারতের হয়ে প্রথম গোলটি করেন। এরপর খেলার অতিরিক্ত সময়ে মহম্মদ আরবাশ দ্বিতীয় গোলটি করে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন।
ভারতকে দোষারোপ করা বন্ধ করুন, অতিবৃষ্টিই বাংলাদেশের বন্যার মূল কারণ!
ভারতের কোচ ইশফাক আহমেদ জয়ের পর বলেন, “আমরা জানতাম বাংলাদেশ একটি ভালো দল। তারা সেমিফাইনালে পিছিয়ে থেকেও ফিরে এসেছিল। আমাদের গ্রুপ পর্বের জয়টা অতীত। ফাইনাল একটি ভিন্ন খেলা। প্রতিটি স্যাফ টুর্নামেন্টে ফেভারিট হিসেবে ভারতের উপর কিছুটা চাপ থাকে। আমাদের সাফল্য ধরে রাখতে হয়। আমরা ভালো পারফর্ম করতে চাইলে ধারাবাহিকতা গুরুত্বপূর্ণ।”
বাংলাদেশের কোচ সাইফুল বারী টিটু বলেন, “আমি আমার ছেলেদের পারফরম্যান্স নিয়ে গর্বিত। এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। ভারত প্রতিরক্ষামূলক চ্যাম্পিয়ন এবং নিঃসন্দেহে ফেভারিট। তারা কারিগরি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে। আমরা প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলেছিলাম কিন্তু ইনজুরি টাইমে গোল খেয়েছিলাম। আমাদের সেরাটা দিতে হবে।”
এই টুর্নামেন্টে ভারত ও বাংলাদেশ চতুর্থবারের মতো স্যাফ পুরুষদের বয়স-ভিত্তিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে। এর আগে তিনবার ভারত (২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৮, ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-২০ এবং ২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৬) এবং একবার বাংলাদেশ (২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৬) জয়ী হয়েছিল।
এবারের টুর্নামেন্টে মোট ৭টি দল অংশ নিয়েছিল। দুটি গ্রুপে ভাগ করে প্রথম রাউন্ডের খেলা হয়। গ্রুপ ‘এ’তে ছিল ভারত, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ। গ্রুপ ‘বি’তে ছিল পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকা।
টুর্নামেন্টে মোট ১০টি ম্যাচ খেলা হয়েছে। এতে মোট ৩৮টি গোল হয়েছে। প্রতি ম্যাচে গড়ে ৩.৮টি গোল হয়েছে। নেপালের সুজান দাংগল ৪টি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন।
জার্মানির কাছে হেরে অলিম্পিকে সোনার স্বপ্ন ভেঙে গেল, এবার ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে ভারতীয় হকি দল
এই জয়ের ফলে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৭ দল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান আরও সুদৃঢ় করলো। তারা টানা দুইবার স্যাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলো। এটি ভারতীয় যুব ফুটবলের উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য এটি হতাশাজনক ফলাফল। তবে তারা ফাইনালে পৌঁছানোর মাধ্যমে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করেছে।
ভারতীয় দলের এই সাফল্য দেশের ফুটবল ভক্তদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। এটি আগামী দিনে আরও বেশি তরুণ খেলোয়াড়কে ফুটবলের প্রতি আকৃষ্ট করবে বলে আশা করা যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। তারা এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও ভালো করার চেষ্টা করবে।
ভারতীয় দলের এই জয় শুধু ফুটবল ক্ষেত্রেই নয়, সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করবে। এটি প্রমাণ করে যে ভারত ক্রীড়াক্ষেত্রেও অঞ্চলের নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে।
তবে এই জয়ের পাশাপাশি ভারতীয় ফুটবলের সামনে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তাদের এখন এই সাফল্যকে ধরে রাখতে হবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও উন্নতি করতে হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোকেও নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে হবে যাতে ভবিষ্যতে তারা ভারতকে কড়া টক্কর দিতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, এই টুর্নামেন্ট দক্ষিণ এশিয়ায় যুব ফুটবলের উন্নয়নের একটি ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরেছে। এটি প্রমাণ করে যে এই অঞ্চলে প্রচুর প্রতিভা রয়েছে যা যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সুযোগ পেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করতে পারে।