Philanthropists with the largest donations: ভারতের শীর্ষস্থানীয় ধনকুবেরদের মধ্যে মুকেশ আম্বানি, রতন টাটা বা আজিম প্রেমজির নাম সবার আগে মনে আসে। কিন্তু আপনি কি জানেন, এদের সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দানবীর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন আরেক ভারতীয় ব্যবসায়ী?
তিনি হলেন টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি টাটা।২০২১ সালের EdelGive Hurun Philanthropy রিপোর্ট অনুযায়ী, জামশেদজি টাটা গত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দানবীর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁর দানের পরিমাণ ১০২.৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৮,২৯,৭৩৪ কোটি টাকা। এই বিপুল অঙ্কের দান তাঁকে বিল ও মেলিন্দা গেটস, ওয়ারেন বাফেট এবং জর্জ সরোসের মতো বিশ্বখ্যাত দানবীরদের থেকেও এগিয়ে রেখেছে।১৮৩৯ সালের ৩রা মার্চ জন্মগ্রহণ করা জামশেদজি টাটাকে “ভারতীয় শিল্পের জনক” হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
রতন টাটার উত্তরসূরি হিসেবে মায়া টাটা: টাটা সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ নেত্রী?
তিনি ১৮৬৮ সালে টাটা গ্রুপের যাত্রা শুরু করেন। আজ সেই প্রতিষ্ঠানটি ভারতের সবচেয়ে বড় ও সম্মানিত কংগ্লোমারেট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, যার বাজার মূল্য প্রায় ২৪ লক্ষ কোটি টাকা।জামশেদজি টাটার দানের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাত। তিনি ১৮৯২ সালেই দাতব্য কাজ শুরু করেন, যখন এই ধরনের উদ্যোগ খুবই বিরল ছিল। তাঁর এই উদ্যোগ টাটা গ্রুপের মধ্যে দানশীলতার এক সংস্কৃতি গড়ে তোলে, যা আজও অব্যাহত রয়েছে।জামশেদজি টাটার দানের পরিমাণ এত বেশি হওয়ার কারণ হল টাটা সন্সের ৬৬% অংশ দাতব্য ট্রাস্টে দান করা হয়েছিল। এই ট্রাস্টগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কল্যাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ করে। টাটা গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বর্তমান মূল্যের ভিত্তিতে এই দানের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
জামশেদজি টাটার পর তাঁর বংশধররা এই দানশীলতার ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন। তাঁর দুই ছেলে দোরাবজি টাটা ও রাতানজি টাটা শিল্পায়নের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। বর্তমানে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান এমেরিটাস রতন টাটা এই দানশীলতার ধারা অব্যাহত রেখেছেন।জামশেদজি টাটার দানের প্রভাব আজও অনুভূত হয়। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখছে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সম্পদকে সমাজের কল্যাণে ব্যবহার করা, যা আজও টাটা গ্রুপের মূল নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়।জামশেদজি টাটার পরে অন্যান্য ভারতীয় ধনকুবেররাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দান করেছেন।
উইপ্রোর প্রতিষ্ঠাতা আজিম প্রেমজি প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার (১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা) দান করে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দানবীরদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তিনি ২০১০ সালে ‘Giving Pledge’ নামক একটি উদ্যোগে স্বাক্ষর করেন, যেখানে তিনি তাঁর সম্পদের বেশিরভাগ অংশ দান করার প্রতিশ্রুতি দেন।জামশেদজি টাটার দানশীলতা শুধু পরিমাণগত দিক থেকেই নয়, গুণগত দিক থেকেও অনন্য। তিনি যে সময়ে দান শুরু করেছিলেন, তখন ভারতে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার ধারণা ছিল না বললেই চলে। তাঁর এই উদ্যোগ পরবর্তীতে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের অনুপ্রাণিত করেছে।টাটা গ্রুপের দানশীলতার ধারা শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা নানা ধরনের সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সংরক্ষণ, দুর্যোগ মোকাবিলা ইত্যাদি।
জামশেদজি টাটার দানশীলতার প্রভাব শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। একইভাবে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে অবদান রেখেছে।জামশেদজি টাটার দানশীলতার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব। তিনি শুধু তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের জন্য দান করেননি, বরং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছেন।
Ratan Tata Death: শিল্পজগতে যুগাবসান! প্রয়াত রতন টাটা, তাঁর মৃত্যুতে দেশ জুড়ে শোকের ছায়া
এই দৃষ্টিভঙ্গি আজও টাটা গ্রুপের দানশীলতার মূল চালিকাশক্তি।জামশেদজি টাটার দানশীলতা শুধু অর্থের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি তাঁর জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাও সমাজের কল্যাণে ব্যবহার করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গবেষণা কেন্দ্রগুলো ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।বর্তমান সময়ে যখন কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তখন জামশেদজি টাটার দানশীলতার আদর্শ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আজ সমাজের উন্নয়নে কাজ করছে।
সর্বশেষে বলা যায়, জামশেদজি টাটার দানশীলতা শুধু পরিমাণগত দিক থেকে নয়, তার প্রভাব ও দূরদর্শিতার কারণেও অনন্য। তাঁর এই আদর্শ আজও নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে আমরা শিখতে পারি কীভাবে ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা পালন করা যায়।