মার্কিন সেনাবাহিনী সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের একটি সামরিক কেন্দ্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সক্ষম বন্দুকযুক্ত রোবট কুকুর পরীক্ষা করছে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ড্রোন প্রতিরোধে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
মিলিটারি ডট কম-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরবের রেড স্যান্ডস ইন্টিগ্রেটেড এক্সপেরিমেন্টেশন সেন্টারে এই পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ডিফেন্স ভিজ্যুয়াল ইনফরমেশন ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভিস (DVIDS) প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি চার পা বিশিষ্ট রোবট কুকুরের উপর একটি ঘূর্ণায়মান টারেটে AR-15/M16 ধরনের রাইফেল লাগানো রয়েছে।
এই রোবট কুকুরটি Ghost Robotics Vision 60 Quadrupedal-Unmanned Ground Vehicle (Q-UGV) নামে পরিচিত। এটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সক্ষম রাইফেল দিয়ে সজ্জিত, যা অভিনব মানবহীন সক্ষমতা প্রদান করে। মার্কিন সেনাবাহিনী এটিকে চার পা বিশিষ্ট মানবহীন ভূমি যান (UGV) হিসেবে বর্ণনা করেছে।
US Army Central-এর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর মাসে রেড স্যান্ডস-এ পরিচালিত একটি পরীক্ষায় এই সশস্ত্র রোবট কুকুরটি ১৫টি ড্রোন প্রতিরোধী প্ল্যাটফর্মের সাথে পরীক্ষা করা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, এই বন্দুকটি বেশ কয়েকটি স্থির ভূমি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছিল, তবে এর সম্ভাব্য প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
Attack on Kashmir Army Camp: রক্তাক্ত উপত্যকা,কাশ্মীরে সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলা, বাড়ছে উত্তেজনা
এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ তাদের বাহিনীতে রোবট কুকুর এবং অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় ভূমি যান অন্তর্ভুক্ত করছে। পেন্টাগন ক্রমশ রোবট কুকুরের উপর অস্ত্র সিস্টেম লাগানোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়িয়েছে।
বিশেষ করে মেরিন কর্পস Onyx Industries-এর SENTRY রিমোট ওয়েপন সিস্টেম এবং M72 LAW ট্যাংক বিরোধী রকেট লঞ্চার সহ চার পা বিশিষ্ট রোবট পরীক্ষা করেছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী M4 কার্বাইন প্রতিস্থাপনের জন্য সম্প্রতি Next Generation Squad Weapon প্রোগ্রামের অধীনে প্রবর্তিত নতুন ৬.৮ মিমি XM7 রাইফেল দিয়ে যান্ত্রিক কুকুর সজ্জিত করার কথা বিবেচনা করছে।
উল্লেখ্য, শুধুমাত্র মার্কিন সেনাবাহিনীই নয়, অন্যান্য দেশও চার পা বিশিষ্ট যুদ্ধ রোবট তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত মে মাসে কম্বোডিয়ায় একটি প্রশিক্ষণ অনুশীলনের সময় চীনের সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব রোবট কুকুর প্রদর্শন করেছিল, যা একটি অ্যাসল্ট রাইফেল দিয়ে সজ্জিত ছিল।
এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ রয়েছে। গবেষকরা সামরিক উদ্দেশ্যে রোবট কুকুর ব্যবহারের ফলে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সতর্ক করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে খরচ এবং নৈতিক বিষয়।
বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিবাদের পর, গত বছর পেন্টাগন একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল যেখানে বলা হয়েছে যে অস্ত্র ব্যবস্থায় AI ক্ষমতার ব্যবহার প্রতিরক্ষা বিভাগের AI নৈতিক নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র যথাযথ সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা হবে এবং যুদ্ধের আইন, প্রযোজ্য চুক্তি, অস্ত্র ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ম এবং প্রযোজ্য যুদ্ধবিরতি নিয়মের অধীনে ব্যবহৃত হবে।
তবে অধিকার গোষ্ঠীগুলো এই নির্দেশিকাকে ‘অপর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে সমালোচনা করেছে। তারা মনে করে, এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা উচিত।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। ইরানের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রোবট সিস্টেম পরীক্ষার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন সেনাবাহিনী নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখছে যা ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী আরও ৭৩,০০০টি SIG716 রাইফেল কিনছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে
তবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। অনেকে মনে করছেন, এর ফলে যুদ্ধের প্রকৃতি পাল্টে যেতে পারে এবং মানবিক বিবেচনা কমে যেতে পারে। অন্যদিকে, সমর্থকরা বলছেন, এটি সৈন্যদের নিরাপত্তা বাড়াতে এবং আরও দক্ষ অপারেশন পরিচালনা করতে সাহায্য করবে।
যাই হোক, এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আরও গভীর আলোচনা ও বিতর্কের প্রয়োজন রয়েছে। এর ব্যবহার যাতে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের মানদণ্ড মেনে হয় তা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি, এর সম্ভাব্য প্রভাব ও ঝুঁকি সম্পর্কে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।
সামগ্রিকভাবে, AI-সক্ষম রোবট কুকুরের এই পরীক্ষা প্রমাণ করে যে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা ক্রমশ বাড়ছে। এটি যুদ্ধের প্রকৃতিকে পরিবর্তন করতে পারে এবং নতুন নৈতিক প্রশ্ন তুলতে পারে। তাই এর ব্যবহার ও প্রভাব নিয়ে সতর্ক পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন