Waqf properties in Uttar Pradesh: ভারতে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে ১.৫ লক্ষেরও বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, যা ভারতের অন্য যেকোনো রাজ্যের তুলনায় বেশি। ওয়াকফ বোর্ড সমগ্র ভারতে ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তির ৯.৪ লক্ষ একর জমি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে, যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। এর ফলে ওয়াকফ বোর্ড ভারতীয় রেল এবং সশস্ত্র বাহিনীর পরে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম জমির মালিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
ওয়াকফ হল একটি ইসলামিক পদ্ধতি যেখানে কোনো ব্যক্তি তার জমি, দোকান বা ভবন চিরকালের জন্য ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজে দান করেন। এই সম্পত্তি বিক্রয় করা যায় না বা উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তর করা যায় না। ওয়াকফ সম্পত্তি মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, কবরস্থান এবং এতিমখানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মুতাওয়াল্লি নামে একজন ব্যক্তি ট্রাস্টির মতো ওয়াকফ সম্পত্তির দেখভাল করেন।
ওয়াকফ সংশোধনী বিল যৌথ সংসদীয় কমিটিতে প্রেরণ করা হবে বিরোধীদের আপত্তির পর
উত্তরপ্রদেশে এত বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি থাকার দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, উত্তরপ্রদেশে বসবাসকারী মুসলিমদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ওয়াকফের জন্য অধিক জমি দান করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক কারণে – অতীতে মুঘল এবং নবাবরা এই অঞ্চলে শাসন করতেন এবং তারা মসজিদ, মাদ্রাসা এবং অন্যান্য ধর্মীয় ব্যবহারের জন্য জমি দান করেছিলেন, যা পরবর্তীতে ওয়াকফ সম্পত্তিতে পরিণত হয়।
উত্তরপ্রদেশ শুধু ওয়াকফ সম্পত্তিতেই নয়, জনসংখ্যার দিক থেকেও ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশের জনসংখ্যা ১৯,৯৮,১২,৩৪১ জন, যা ব্রাজিলের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। আয়তনের দিক থেকে উত্তরপ্রদেশ ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম রাজ্য, যার আয়তন ২৪০,৯২৮ বর্গ কিলোমিটার, যা যুক্তরাজ্যের আয়তনের সমান।
ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সম্প্রতি ভারতে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ওয়াকফ আইনের ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণার অধিকার এত দিন ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই। ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বার বার বহু গরিব মুসলিমের সম্পত্তি এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে, ভারত সরকার ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪ প্রণয়ন করেছে, যা ২০২৫ সালে পাস হয়েছে। এই সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের একচ্ছত্র অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিকের হাতে। এছাড়াও, ওয়াকফ বোর্ডে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং নতুন বিল অনুসারে, একজন অমুসলিমও বোর্ডের শীর্ষপদে বসতে পারবেন।
ওয়াকফ সম্পত্তির পরিমাণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন। উত্তরপ্রদেশের পরে পশ্চিমবঙ্গে ৭৭,০০০-এর বেশি, কর্ণাটকে ৬০,০০০-এর বেশি, মহারাষ্ট্রে ৪৫,০০০-এর বেশি এবং তামিলনাড়ুতে ৩০,০০০-এর বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম রাজ্য, যেখানে ৯১,২৭৬,১১৫ জন বাস করে।
ওয়াকফ সম্পত্তি স্থায়ীভাবে বিক্রি বা লিজ দেওয়া যায় না, যা এই সম্পত্তিগুলিকে অন্যান্য সম্পত্তি থেকে আলাদা করে। এই সম্পত্তিগুলি ধর্মীয়, শিক্ষামূলক বা দাতব্য উদ্দেশ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যক্তিদের দ্বারা দান করা হয়। এগুলি সরকারি তত্ত্বাবধানে বিশেষ বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়।
ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫-এর মাধ্যমে, সরকার ওয়াকফ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। এই বিলে ১৯২৩ সালের মুসলমান ওয়াকফ আইন বাতিল এবং ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলটি আইনটির নাম পরিবর্তন করে ‘একীভূত ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা, ক্ষমতায়ন, দক্ষতা এবং উন্নয়ন আইন, ১৯৯৫’ রাখে।
ভারতে ওয়াকফ জমির পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৮৭০,০০০টি সম্পত্তিতে পৌঁছেছে, যার মোট মূল্য ১,০০,০০০ কোটি টাকা (১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং যা ৯৪০,০০০ একর (৩,৮০৮ বর্গ কিমি) জমি জুড়ে বিস্তৃত। এই বিশাল পরিমাণ জমির মালিকানা এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ ও বিতর্ক থাকা স্বাভাবিক, তবে নতুন আইনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করার প্রয়াস চলছে।