Vaishno Devi railway station: কাশ্মীর উপত্যকা ও বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের শহর কাটরার মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগের নতুন দিগন্ত খুলে দিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। ৭ জুন ২০২৫ থেকে শুরু হয়েছে এই আধুনিক সেমি-হাই স্পিড ট্রেনের নিয়মিত পরিষেবা, যা সপ্তাহে ছয় দিন চলবে। মাত্র তিন ঘণ্টায় ১৯০ কিমি পথ অতিক্রম করে যাত্রীরা পৌঁছে যেতে পারবেন শ্রীনগর থেকে কাটরা কিংবা কাটরা থেকে শ্রীনগর, আর এই যাত্রাপথে থাকছে বিশ্বের সর্বোচ্চ চেনাব রেল সেতু পার হওয়ার রোমাঞ্চও।
নতুন এই ট্রেন পরিষেবা কাশ্মীর উপত্যকা এবং দেশের বাকি অংশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। এতদিন জম্মু, উধমপুর ও কাটরার মধ্যে ট্রেন চললেও, এবার সরাসরি শ্রীনগর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারিত হল। উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক (USBRL) প্রকল্পের অধীনে নির্মিত এই রুটে চেনাব ও আঞ্জি নদীর উপর নির্মিত দুইটি আইকনিক ব্রিজ পেরিয়ে চলবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, যা পর্যটকদের জন্যও এক নতুন অভিজ্ঞতা।
ট্রেনের সময়সূচি যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে নির্ধারিত হয়েছে। কাটরা থেকে শ্রীনগরগামী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (২৬৪০১) সকাল ৮:১০ টায় ছাড়বে, ৯:৫৮ টায় বানিহাল স্টেশনে দুই মিনিটের জন্য থামবে এবং সকাল ১১:০৮ টায় পৌঁছে যাবে শ্রীনগরে। অপরদিকে, শ্রীনগর থেকে কাটরাগামী ট্রেন (২৬৪০২) দুপুর ২:০০ টায় ছেড়ে, বিকেল ৩:১০ টায় বানিহাল এবং বিকেল ৪:৫৮ টায় পৌঁছাবে কাটরায়। সপ্তাহে ছয় দিন চলবে এই পরিষেবা, শুধুমাত্র বুধবার ট্রেন চলবে না।
এছাড়া, আরও একটি জোড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেসও একই রুটে চালু হয়েছে। কাটরা থেকে শ্রীনগর (২৬৪০৩) সকাল ৮:০০ টায় ছেড়ে, ৯:০২ টায় বানিহাল এবং ১০:৫৮ টায় পৌঁছাবে কাটরায়। শ্রীনগর থেকে কাটরা (২৬৪০৪) বিকেল ২:৫৫ টায় ছেড়ে, ৪:৪০ টায় বানিহাল এবং ৫:৫৩ টায় পৌঁছাবে শ্রীনগরে।
টিকিটের ভাড়াও নির্ধারিত হয়েছে যাত্রীদের বিভিন্ন চাহিদার ভিত্তিতে। কাটরা থেকে শ্রীনগরগামী মর্নিং ট্রেন (২৬৪০১)–এ চেয়ার কার (CC) ভাড়া ৭১৫ টাকা, এক্সিকিউটিভ চেয়ার কার (EC) ভাড়া ১৩২০ টাকা। বিকেলের ট্রেন (২৬৪০৩)-এ চেয়ার কার ৬৬০ টাকা এবং এক্সিকিউটিভ চেয়ার কার ১২৭০ টাকা। শ্রীনগর থেকে কাটরা (২৬৪০২)-এর জন্য চেয়ার কার ৮৮০ টাকা ও এক্সিকিউটিভ চেয়ার কার ১৫১৫ টাকা। অপর ট্রেন (২৬৪০৪)-এ চেয়ার কার ৭১৫ টাকা এবং এক্সিকিউটিভ চেয়ার কার ১৩২০ টাকা।
টিকিট বুকিং সহজেই করা যাবে আইআরসিটিসি-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে। যাত্রীরা ১২০ দিন আগে থেকেই টিকিট কাটতে পারবেন। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও বুকিংয়ের সুযোগ থাকছে।
এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনগুলির অন্যতম আকর্ষণ, এগুলি কাশ্মীরের কঠিন শীতের কথা মাথায় রেখে বিশেষভাবে তৈরি। ট্রেনে রয়েছে সিলিকন হিটিং প্যাড ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত হিটিং কেবল, যাতে বরফে জলের পাইপ বা ট্যাঙ্ক জমে না যায়। প্রতিটি ট্রেনে ৫৩০ জন যাত্রী বসার ব্যবস্থা, একটি এক্সিকিউটিভ ক্লাস ও সাতটি বিলাসবহুল চেয়ার কার কোচ থাকছে। সর্বোচ্চ গতি ১৬০ কিমি/ঘন্টা হলেও, পাহাড়ি রুটে গড় গতি কিছুটা কম।
নতুন এই পরিষেবা শুধু যাত্রীদের সুবিধাই নয়, কাশ্মীর উপত্যকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা সরাসরি বৈষ্ণোদেবী মন্দির দর্শন করতে পারবেন, আবার শ্রীনগর থেকে কাটরায় পৌঁছে সহজেই দেশের অন্যান্য অংশে রেলপথে যাতায়াত করতে পারবেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই উন্নতি ব্যবসা, পর্যটন ও স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ চেনাব রেল সেতুর উপর দিয়ে এই ট্রেন চলার কারণে যাত্রীরা এক অনন্য অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকবেন। চেনাব সেতু ৩৫৯ মিটার উঁচু, যা আইফেল টাওয়ারের থেকেও উঁচু। এই রুটে রয়েছে আরও ৩৭টি ব্রিজ, অসংখ্য টানেল ও মনোরম পাহাড়ি দৃশ্য, যা যাত্রীদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
উল্লেখযোগ্য, এই পরিষেবা চালুর ফলে জম্মু-কাশ্মীরের বহু বছরের স্বপ্ন পূরণ হল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে ৬ জুন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর, ৭ জুন থেকে সাধারণ যাত্রীদের জন্য পরিষেবা চালু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পর্যটক—সবাই এই নতুন ট্রেন পরিষেবার জন্য উচ্ছ্বসিত। অনেকেই মনে করছেন, এই ট্রেন কাশ্মীর উপত্যকার উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
সব মিলিয়ে, বৈষ্ণোদেবী কাটরা-শ্রীনগর বন্দে ভারত এক্সপ্রেস কেবলমাত্র দ্রুত যোগাযোগ নয়, বরং দেশের একতা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হল। এই আধুনিক ট্রেন পরিষেবা কাশ্মীরের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা আগামী দিনে উপত্যকার মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে—এমনটাই আশা করা হচ্ছে।