ভারতীয় বিদেশ সেবা (আইএফএস) কর্মকর্তা নিধি তিওয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। কর্মী মন্ত্রণালয়ের এক আদেশ অনুযায়ী, ২০১৪ ব্যাচের এই আইএফএস অফিসার বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত ছিলেন1। মন্ত্রিপরিষদের নিয়োগ কমিটি ২৯ মার্চ তারিখে জারি করা একটি আদেশে তাঁর নিয়োগ অনুমোদন করেছে এবং এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
নিধি তিওয়ারি উত্তর প্রদেশের বারাণসীর মেহমুরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা, যা ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র। তিনি ২০১৩ সালের সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় ৯৬তম র্যাঙ্ক অর্জন করেন3। সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষা পাস করার আগে, তিনি বারাণসীতে সহকারী কমিশনার (বাণিজ্য কর) হিসেবে কাজ করতেন এবং চাকরির পাশাপাশি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
তিওয়ারির কর্মজীবন অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ২০২২ সালে তিনি পিএমওতে আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে, তিনি বিদেশ মন্ত্রকে নিরস্ত্রীকরণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক বিভাগে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনি ‘বিদেশ ও নিরাপত্তা’ বিভাগে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের অধীনে কাজ করেছেন।
পিএমওতে থাকাকালীন, তিওয়ারি বিদেশ বিষয়ক, পারমাণবিক শক্তি এবং নিরাপত্তা বিষয়ক এলাকাগুলি দেখাশোনা করতেন, সেই সাথে রাজস্থান রাজ্য সম্পর্কিত দায়িত্বও পালন করতেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা ভারতের জি২০ সভাপতিত্বকালে বিশেষভাবে প্রকাশ পেয়েছিল।
নিধি তিওয়ারির এই নিয়োগ সরকারি প্রশাসনের উচ্চপদে মহিলা কর্মকর্তাদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকাকে প্রতিফলিত করে7। তিনি এই পদে নিযুক্ত হওয়া সম্ভবত সবচেয়ে কম বয়সী কর্মকর্তাদের একজন। ভারতীয় প্রশাসনে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যুবা প্রশাসকদের নিয়োগ একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
তিওয়ারির নিয়োগ পে-ম্যাট্রিক্সের লেভেল ১২-এ হয়েছে এবং এটি কো-টার্মিনাস ভিত্তিতে অথবা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে, যেটি আগে ঘটবে। পিএমওতে তাঁর বর্তমান পদের সাথে এটি সম্পর্কিত থাকবে। এর অর্থ তাঁর কার্যকাল বর্তমান প্রশাসনের মেয়াদের সাথে সংযুক্ত থাকবে অথবা পরবর্তী নির্দেশনা জারি না হওয়া পর্যন্ত চলবে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদে থেকে নিধি তিওয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে সহায়তা করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা, গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সমন্বয় এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জন্য বিশেষ মূল্যবান হবে। বিদেশ মন্ত্রকে নিরস্ত্রীকরণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিভাগে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের অধীনে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁকে এই চ্যালেঞ্জিং পদের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে।
উল্লেখযোগ্য যে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর এর আগে দুজন ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন – বিবেক কুমার এবং হার্দিক সতীশচন্দ্র শাহ। নিধি তিওয়ারি এই তালিকায় তৃতীয় নাম হিসেবে যুক্ত হলেন।
বারাণসী থেকে আসা এই প্রতিভাবান প্রশাসকের যাত্রা অনেক তরুণ সিভিল সার্ভেন্টদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠবে। তাঁর এই নিয়োগ দেশের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মহিলাদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা ও সক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। নিধি তিওয়ারির উজ্জ্বল কর্মজীবন দেশের তরুণ প্রজন্মকে সরকারি চাকরির মাধ্যমে দেশসেবার প্রেরণা যোগাবে।
পিএমওতে গত তিন বছর ধরে কাজ করা তিওয়ারি এখন প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন6। যেহেতু তিনি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত, তাই তিনি নতুন দায়িত্বে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তাঁর এই নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলি পরিচালনায় সমন্বয় সুনিশ্চিত করবে।