Vasant Panchami from Shashti to Dashami: চলতি বছর ২০২৫-এ বাসন্তী দুর্গা পুজো এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই বছর বাসন্তী পুজোর ষষ্ঠী তিথি ৪ এপ্রিল, শুক্রবার থেকে শুরু হবে এবং দশমী তিথি ৭ এপ্রিল, সোমবার পর্যন্ত চলবে। বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বাসন্তী পুজো, যা চৈত্র মাসে অনুষ্ঠিত হয় বলে ‘চৈত্র দুর্গা পুজো’ নামেও পরিচিত, এই বছর বিশেষ উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হবে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, বাসন্তী দেবী দুর্গা পুজোর অধিবাস ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে।
বাসন্তী পুজো ২০২৫-এর বিস্তারিত নির্ঘণ্ট পঞ্জিকা অনুযায়ী নিম্নরূপ:
কিছু বিশেষ উৎসে, তারিখগুলির সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। যেমন একটি উৎস অনুযায়ী সপ্তমী তিথি ৫ এপ্রিল, অষ্টমী ৬ এপ্রিল এবং নবমী ৭ এপ্রিল। তবে প্রথাগত পঞ্জিকা গণনা অনুসারে উপরে উল্লিখিত তারিখগুলি সঠিক বলে বেশিরভাগ উৎস নির্দেশ করছে।
রাম নবমী ২০২৫: ৫০টি শুভেচ্ছা বার্তা যা আপনার হৃদয় জয় করবে!
বাসন্তী পুজো বাংলার জনসমাজে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় উৎসব। এটি শরৎকালীন দুর্গাপুজার আগে থেকেই চলে আসছে এবং এটিকে আসলে আদি দুর্গা পুজো বলা হয়।
বাসন্তী পুজোর প্রাচীন ঐতিহ্য
ঐতিহাসিকভাবে, বাসন্তী পুজো হল দুর্গাপুজার আদি রূপ যা রাজা সুরথ প্রবর্তন করেছিলেন। প্রাচীন কালে, দুর্গাপুজা বসন্তকালে অনুষ্ঠিত হতো। শাস্ত্রমতে, ভগবান রাম রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাওয়ার আগে দুর্গার কৃপা লাভের জন্য আশ্বিন মাসে দেবীর অকালবোধন করেছিলেন। এই কারণে বর্তমানে আশ্বিন মাসে অনুষ্ঠিত দুর্গাপুজাকে ‘অকালবোধন’ বা ‘অসময়ে দেবীর আহ্বান’ নামেও অভিহিত করা হয়
বাসন্তী পুজো বসন্ত নবরাত্রির সময় পালিত হয় এবং এর প্রধান উদ্দেশ্য হল বসন্তের আগমনকে স্বাগত জানানো এবং প্রকৃতির পুনর্জন্মকে উদযাপন করা।
বাসন্তী পুজোর অনুষ্ঠানগুলি শারদীয় দুর্গাপুজার অনুষ্ঠানের সাথে মিল থাকলেও কিছু বিশেষ পার্থক্য আছে। এই পুজোয় নিম্নলিখিত অনুষ্ঠানগুলি অনুসরণ করা হয়:
বাসন্তী পুজো বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও শারদীয় দুর্গাপুজার মতো বড় আকারে এটি উদযাপিত হয় না, তবুও এর ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অতুলনীয়।
বাসন্তী পুজোর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
শরতের প্রচলিত দুর্গাপুজার বিপরীতে, বাসন্তী পুজো পারম্পরিক বিশ্বাস ও অনুশীলনে গভীরভাবে প্রোথিত থাকে। এটি দেবী দুর্গার মূল উপাসনা পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বসন্তকালে তাঁর দিব্য উপস্থিতিকে তুলে ধরে। এই উৎসব নবীকরণ, শক্তি ও ভক্তির প্রতীক, যা ভক্ত ও দেবীর মধ্যে আধ্যাত্মিক সংযোগকে শক্তিশালী করে।
বসন্ত ঋতুতে প্রকৃতির পুনর্জাগরণের সাথে সাথে বাসন্তী পুজো দেবী দুর্গার শক্তি ও সৌন্দর্যকে উদযাপন করে। এই সময়ে ফুলের সমারোহ, পাখির কলকাকলি এবং প্রকৃতির নবরূপ দেবীর স্বরূপের প্রতিফলন হিসাবে দেখা হয়।
যদিও বাসন্তী পুজো মূলত বাংলা সংস্কৃতির সাথে জড়িত, এর পালন বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।
পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত
বাংলা ছাড়াও, বাসন্তী পুজো আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং অরুণাচল প্রদেশে পালিত হয়, যেখানে শক্তি উপাসনা ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত ছিল। এই অঞ্চলগুলি বাংলার সাথে সাংস্কৃতিক বন্ধনে আবদ্ধ এবং তারা নিজেদের ঐতিহ্যে বাসন্তী পুজোকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
অরুণাচল প্রদেশের বিখ্যাত মালিনী মন্দিরে, যা দেবী দুর্গাকে সমর্পিত, বাসন্তী পুজোর সময় একটি বড় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সমতল ও পাহাড়ি উভয় অঞ্চলের ভক্তরা এই সময়ে দেবীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এই মেলা ‘মালিনী মেলা’ নামে পরিচিত।
উত্তর ও পশ্চিম ভারত: চৈত্র নবরাত্রির সংযোগ
উত্তর এবং পশ্চিম ভারতে, একই সময়ে চৈত্র শুক্ল পক্ষ প্রতিপদা থেকে শুরু করে নয় দিন ধরে মা দুর্গার পুজো করা হয়। এটি ‘চৈত্র নবরাত্রি’ নামে পরিচিত এবং এর সাথে বাসন্তী পুজোর আধ্যাত্মিক সংযোগ রয়েছে।
২০২৫ সালের বাসন্তী পুজোতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য নিম্নলিখিত অনুষ্ঠানসূচি গুরুত্বপূর্ণ:
৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার:
৪ এপ্রিল, শুক্রবার:
৫ এপ্রিল, শনিবার:
৬ এপ্রিল, রবিবার:
৭ এপ্রিল, সোমবার:
শরৎকালীন আধুনিক ও বাণিজ্যিক দুর্গাপুজার বিপরীতে, বাসন্তী পুজো পারম্পরিক বৈদিক রীতিনীতি অনুসরণ করে। অনেক বাঙালি পরিবার ও মন্দির কঠোর নিয়ম অনুসরণ করে, শুদ্ধতা, সরলতা ও ভক্তির উপর জোর দেয়। এই দিকটি প্রাচীন অভ্যাসের সাংস্কৃতিক সংরক্ষণকে তুলে ধরে।
বাসন্তী পুজোর রীতিনীতি দুর্গাপুজোর অনুরূপ হলেও, এই উৎসবে কলশ স্থাপনা, কুমারী পুজা, সুহাসিনী পুজা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। এই রীতিনীতিগুলি প্রাচীন কাল থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে, যা এই উৎসবের ঐতিহাসিক গুরুত্ব প্রমাণ করে।
বাঙালি ধর্মীয় অনুশীলনে প্রায়ই শক্তি উপাসনার (দৈবী নারী শক্তির উপাসনা) উপর জোর দেওয়া হয়। বাসন্তী পুজো এই বিশ্বাস ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ভক্ত ও শক্তির (দেবী দুর্গার দৈবী শক্তি) মধ্যে সংযোগকে শক্তিশালী করে। এই উৎসব স্থিতিস্থাপকতা, শক্তি ও নবীকরণের আধ্যাত্মিক স্মারক হিসাবে কাজ করে – যে মূল্যবোধগুলি বাঙালি চিন্তাধারা ও দর্শনে গভীরভাবে প্রোথিত।
হাসি-ঠাট্টার দিন: এপ্রিল ফুল-এর রহস্যময় ইতিহাস ও বিশ্বব্যাপী উদযাপন
বাসন্তী পুজো ২০২৫-এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:
বাসন্তী পুজো ২০২৫ বাংলার সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ক্যালেন্ডারে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসব ষষ্ঠী তিথি ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে দশমী তিথি ৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, অধিবাস ৩ এপ্রিল, সপ্তমী পুজা ৪ এপ্রিল, অষ্টমী ও সন্ধিপূজা ৫ এপ্রিল, নবমী পুজা ৬ এপ্রিল এবং দশমী বিসর্জন ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে।
বাসন্তী পুজো দেবী দুর্গার আদি উপাসনা পদ্ধতি হিসাবে বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি অমূল্য স্থান দখল করে আছে। এই উৎসব বসন্তকালে প্রকৃতির পুনর্জন্ম, নবীকরণ এবং আধ্যাত্মিক জাগরণের প্রতীক হিসাবে পালিত হয়। যদিও আধুনিক যুগে শরৎকালীন দুর্গাপুজা বেশি জনপ্রিয়, তবুও বাসন্তী পুজো তার ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব বজায় রেখেছে, বিশেষ করে তাদের মধ্যে যারা পারম্পরিক রীতিনীতি মেনে চলেন।