Views of young generation on West Bengal politics: পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই তরুণ প্রজন্ম কি আদৌ ভাবছে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে? নাকি তারা উদাসীন হয়ে পড়েছে? এই প্রতিবেদনটি পশ্চিমবঙ্গের তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনা ও অংশগ্রহণের উপর আলোকপাত করবে।
পশ্চিমবঙ্গের তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় যে, তাদের মধ্যে একাংশ রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। বিশেষ করে, সিপিআই(এম) এবং তৃণমূল কংগ্রেসের তরুণ প্রার্থীরা নতুন কৌশল ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ, সিপিআই(এম) প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য্য এবং তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সায়নী ঘোষ তাদের প্রচারে মেমে, কার্টুন এবং ছোট ভিডিও ব্যবহার করছেন, যা তরুণ ভোটারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।
তবে, তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ রাজনীতির প্রতি উদাসীন। অনেকেই মনে করেন যে বর্তমান রাজনৈতিক নেতারা তাদের সমস্যাগুলি সমাধান করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে অনেক তরুণ ভোটার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন যে রাজনৈতিক নেতারা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যাগুলি সমাধান করতে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ ‘নোটা’ (None of the Above) ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন।
তরুণ প্রজন্মের চাহিদা ও প্রত্যাশা অনেকটাই ভিন্ন। তারা চায় একটি স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ। ২০২৩ সালের এসএসসি নিয়োগ কেলেঙ্কারি এবং তার পরবর্তী সময়ে ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের ঘটনা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গভীর হতাশা সৃষ্টি করেছে। এই ধরনের ঘটনা তাদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি অবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলেছে।
রাজনৈতিক দলগুলি তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করছে। উদাহরণস্বরূপ, তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপূজা ক্লাবগুলিকে অনুদান দিয়ে তরুণদের সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, বিজেপি এবং সিপিআই(এম) তরুণ প্রার্থীদের সামনে এনে তাদের সমর্থন পেতে চাইছে।
তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনা ও অংশগ্রহণ পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তারা যদি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের মতামত প্রকাশ করে, তবে তা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষ করে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
চাকরি প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকে পশ্চিমবঙ্গ: অপেক্ষায় বেকার যুবসমাজ
১. বেকারত্ব সমস্যা: পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার ক্রমশ বাড়ছে, যা তরুণদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে। অনেক তরুণ মনে করছেন যে সরকার তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
২. দুর্নীতি: এসএসসি নিয়োগ কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তরুণদের মধ্যে সরকারের প্রতি অবিশ্বাস বাড়িয়েছে। ২৬,০০০ জনের চাকরি বাতিলের ঘটনা তাদের মধ্যে গভীর হতাশা সৃষ্টি করেছে।
৩. রাজনৈতিক সহিংসতা: রাজ্যে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অনেক তরুণকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
৪. স্বজনপ্রীতি: দলে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে, যা অনেক তরুণকে হতাশ করছে।
৫. গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাব: সরকারের কঠোর মনোভাব ও বিরোধী মতের প্রতি অসহিষ্ণুতা অনেক তরুণকে উদ্বিগ্ন করছে।
তবে, এর পাশাপাশি কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে:
১. কল্যাণমূলক প্রকল্প: লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পগুলি অনেক তরুণের সমর্থন পেয়েছে।
২. বাংলা পরিচয়: মমতা ব্যানার্জী বাঙালি পরিচয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন, যা অনেক তরুণের কাছে আকর্ষণীয়।
৩. বিরোধী দলের দুর্বলতা: বিজেপি ও বামফ্রন্টের দুর্বলতা অনেক তরুণকে তৃণমূলের প্রতি আকৃষ্ট করছে।সামগ্রিকভাবে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে অসন্তোষ বাড়ছে, অন্যদিকে কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। তবে, বেকারত্ব ও দুর্নীতির মতো সমস্যাগুলি সমাধান না হলে ভবিষ্যতে তরুণদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে।
১. শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারি: এসএসসি নিয়োগ কেলেঙ্কারির ফলে প্রায় ২৬,০০০ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। এটি তরুণদের মধ্যে গভীর হতাশা সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন যে সরকার তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট করেছে।
২. দুর্নীতির অভিযোগ: পার্থ চ্যাটার্জি, অনুব্রত মণ্ডল প্রমুখ নেতাদের গ্রেপ্তার এবং কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনা তরুণদের মধ্যে সরকারের প্রতি অবিশ্বাস বাড়িয়েছে।
৩. সান্ডেশখালি কাণ্ড: সান্ডেশখালিতে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, যা দলের ভাবমূর্তিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
৪. বেকারত্ব সমস্যা: রাজ্যে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হার তরুণদের মধ্যে হতাশা বাড়িয়েছে। অনেকে মনে করছেন সরকার তাদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না।
৫. স্বজনপ্রীতি: দলীয় নেতৃত্বে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে, যা অনেক তরুণকে হতাশ করছে।
তবে, এর পাশাপাশি কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে:
– লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি অনেক তরুণের সমর্থন পেয়েছে।
– বাঙালি পরিচয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা অনেক তরুণের কাছে আকর্ষণীয়।
– বিরোধী দলগুলির দুর্বলতা অনেক তরুণকে তৃণমূলের প্রতি আকৃষ্ট করছে।
সামগ্রিকভাবে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে অসন্তোষ বাড়ছে, অন্যদিকে কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। তবে, বেকারত্ব ও দুর্নীতির মতো সমস্যাগুলি সমাধান না হলে ভবিষ্যতে তরুণদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে। এটি আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চাকরি প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকে পশ্চিমবঙ্গ: অপেক্ষায় বেকার যুবসমাজ
১. চাকরির সুযোগ কমেছে: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল হয়েছে, যা তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে।
২. বেকারত্ব বৃদ্ধি: রাজ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছে, যা তরুণদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে।
৩. অবিশ্বাস বৃদ্ধি: দুর্নীতির অভিযোগ তরুণদের মধ্যে সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতি অবিশ্বাস বাড়িয়েছে।
৪. মেধাবীদের প্রতি অবিচার: অনেক মেধাবী প্রার্থী যোগ্যতা সত্ত্বেও চাকরি পাননি, যা তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
৫. ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা: নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের কারণে অনেক তরুণের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
৬. রাজনৈতিক প্রভাব: এই পরিস্থিতি তরুণদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকেও প্রভাবিত করছে, অনেকে সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।
৭. প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অনাস্থা: সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রতি তরুণদের আস্থা কমেছে।
৮. মানসিক চাপ: চাকরি হারানো বা না পাওয়ার কারণে অনেক তরুণ মানসিক চাপে ভুগছেন।
৯. অর্থনৈতিক সমস্যা: চাকরি না থাকায় অনেক তরুণ ও তাদের পরিবার আর্থিক সংকটে পড়েছে।
১০. প্রতিভা পলায়ন: এই পরিস্থিতিতে অনেক মেধাবী তরুণ রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের কাছে দাবি উঠছে যে তারা যেন স্বচ্ছ ও ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে এবং তরুণদের জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
পশ্চিমবঙ্গের তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনা ও অংশগ্রহণ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। একদিকে তারা নতুন কৌশল ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে, অন্যদিকে অনেকেই বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট ও উদাসীন। তবে, তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণই রাজ্যের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তরুণ প্রজন্মের চেতনা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসতে পারে।
মন্তব্য করুন