সেলিব্রিটি ফিটনেস ট্রেনার বিনোদ চান্না, যিনি মুকেশ অম্বানির ছেলে অনন্ত অম্বানির ১০৮ কেজি ওজন কমানোর পিছনে প্রধান কাণ্ডারী, সম্প্রতি ওজন কমানোর ৪টি অব্যর্থ উপায় শেয়ার করেছেন। ২২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ফিটনেস বিশেষজ্ঞ শুধু অনন্ত অম্বানিকেই নয়, নীতা অম্বানি, কুমার মঙ্গলম বিড়লা, জন অব্রাহাম এবং শিল্পা শেট্টির মতো অনেক সেলিব্রিটির শারীরিক রূপান্তরের পিছনেও রয়েছেন।
অনন্ত অম্বানির ওজন কমানোর গল্প ভারতের সবচেয়ে প্রেরণাদায়ক স্বাস্থ্য রূপান্তরের কাহিনীগুলির মধ্যে একটি। বাচ্চা বয়স থেকেই হাঁপানির সমস্যায় ভুগছিলেন অনন্ত, যার জন্য তাকে স্টেরয়েড নিতে হতো, যা তার ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল। ২০১৭ সালে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি সাক্ষাৎকারে নীতা অম্বানি জানিয়েছিলেন যে, অনন্তের ওজন প্রায় ২০৮ কেজি (৪৫৮ পাউন্ড) পর্যন্ত পৌঁছেছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্য দৃঢ়তা আর সংকল্পের মাধ্যমে, তিনি মাত্র ১৮ মাসে ১০৮ কেজি ওজন কমিয়ে ১০০ কেজিতে (২২০ পাউন্ড) নেমে আসেন।
বিনোদ চান্না অনন্ত অম্বানির জন্য একটি বিশেষ ডায়েট প্ল্যান ও এক্সারসাইজ রুটিন তৈরি করেছিলেন। তিনি ক্র্যাশ ডায়েটের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছিলেন। অনন্তের ডায়েট প্ল্যানে দৈনিক ১২০০-১৫০০ ক্যালোরি গ্রহণের বিধান ছিল, যেখানে পরিমিত খাওয়া, কম মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট এবং বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
ডায়েটের পাশাপাশি, অনন্তের এক্সারসাইজ রুটিনেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রতিদিন ৫-৬ ঘণ্টা কসরত করতেন, যার মধ্যে যোগব্যায়াম, স্ট্রেংথ ট্রেনিং, ফ্লেক্সিবিলিটি এক্সারসাইজ এবং কার্ডিও অন্তর্ভুক্ত ছিল3। বিশেষ করে, তিনি প্রতিদিন প্রায় ২১ কিলোমিটার হাঁটতেন। এই সামগ্রিক ফিটনেস পরিকল্পনা তাকে প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করেছিল, যেখানে তাঁর লক্ষ্য ছিল লীন মাসল গঠন, ক্যালোরি বার্ন করা এবং সামগ্রিক ফিটনেস উন্নত করা।
অনন্তের ডায়েটে ছিল শূন্য-চিনি, কম-কার্ব সহ পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ফ্যাট। তাঁর খাবারে মূলত সবজি, অঙ্কুরিত শস্য, পনির, ডাল ও সিম জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ফাইবার, ফ্যাট, প্রোটিন এবং ভিটামিন ও মিনারেলের সংমিশ্রণ ছিল। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তিনি জাঙ্ক ফুড থেকে একেবারেই দূরে থাকতেন এবং তাঁর ডায়েটে কোনো চিট মিল ছিল না।
সম্প্রতি, বিনোদ চান্না ভিসি ফিটনেস ওয়েবসাইটে কার্যকরী ওজন কমানোর ৪টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস শেয়ার করেছেন:
প্রথমত, তিনি অন্যের ডায়েট ও এক্সারসাইজ প্ল্যান অন্ধভাবে অনুসরণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। “ইন্টারনেট বা অন্য কোনো উৎস থেকে এমন ডায়েট ও এক্সারসাইজ প্ল্যান অনুসরণ করা বন্ধ করুন যা আপনার প্রয়োজন ও জীবনযাত্রার সাথে মানানসই নয় এবং আপনার ফিটনেস লেভেল অনুযায়ী উপযুক্ত নাও হতে পারে।” তিনি বলেন।
দ্বিতীয়ত, তিনি একজন ভালো ট্রেনারে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। “একজন ভালো ট্রেনারে বিনিয়োগ করুন, যদিও এটি ব্যয়বহুল হতে পারে। তিনি সঠিক ফর্ম, টেকনিক, মোশনের পরিধি, ওয়ার্কআউটের তীব্রতা বুঝতে সাহায্য করবেন এবং আপনাকে উচ্চতর ফিটনেস স্তরে নিয়ে যাবেন যাতে পেশী ক্ষয় না হয়, আপনার শরীরের ধরন বুঝেন, চ্যালেঞ্জিং মুভমেন্টে আপনাকে বিশ্বাস করতে সাহায্য করবেন এবং সঠিক গাইডেন্সের মাধ্যমে আপনার সম্ভাবনাকে কার্যকরভাবে বের করে আনবেন এবং আপনার মূল্যবান সময় বাঁচাবেন।”
তৃতীয়ত, চিট মিল সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলেছেন তিনি। “অনেক লোক আছে যারা ৪-৫ দিন ডায়েট অনুসরণ করে এবং মনে করে যে ১ দিনের চিট মিল অনুমোদিত। যাইহোক, এটি আসলে তাদের সারা সপ্তাহের কঠোর পরিশ্রম নষ্ট করে দেয়। আপনার শরীরের ফ্যাট শতাংশের উপর নির্ভর করে আপনার সপ্তাহে বা প্রতি ১৫ দিনে একবার চিট করা উচিত কিনা।” তিনি বলেন, “আদর্শভাবে, ওজন কমানোর প্রথম পর্যায়ে আপনি শুধুমাত্র ১৫ দিনে একবার আপনার ডায়েট ভাঙা উচিত।”
চতুর্থত, বিনোদ চান্না নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। “কিছু লোক ওয়ার্কআউট করার সময় নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জ করে না এবং কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসে না, যা তাদের প্রয়োজনীয় তীব্রতা অনুসারে তাদের ওয়ার্কআউটকে অকার্যকর করে তোলে। এটি মূল কারণ যে তারা অগ্রগতি করে না এবং কোনো ফ্যাট লস হয় না,” তিনি ব্যাখ্যা করেন।
বিনোদ চান্না জোর দিয়ে বলেন, ওজন কমানোর জন্য ‘ধারাবাহিকতা, ধৈর্য এবং ব্যক্তিগতকৃত পদ্ধতি অপরিহার্য’। অনন্ত অম্বানির অভূতপূর্ব রূপান্তর এবং বিনোদ চান্নার এই টিপসগুলি প্রমাণ করে যে দৃঢ় সংকল্প, নিয়মিত অনুশীলন এবং সঠিক মার্গদর্শন দিয়ে, যে কেউ তাদের ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।
অনন্ত অম্বানি এখন একটি সম্পূর্ণ নতুন জীবন উপভোগ করছেন, এবং তাঁর রূপান্তর শুধু বাহ্যিক চেহারাতেই নয়, তাঁর শক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং সামগ্রিক সুস্থতায়ও প্রতিফলিত হয়েছে1। তাঁর কথায়, “আমি একজন নতুন ব্যক্তি বোধ করছি। এটা শুধু ওজন কমানো নয়, এটি জীবন সম্পর্কে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ পাওয়া। আমার বেশি শক্তি আছে, আমি স্বাস্থ্যকর বোধ করি, এবং আমি এমন জিনিস করতে পারি যা আমি আগে কল্পনাও করতে পারতাম না।”