Virat Kohli charity Sundarbans: ভারতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি আবারও তাঁর বিশাল হৃদয়ের পরিচয় দিলেন। সুন্দরবনের দরিদ্র ও অসহায় শিশুদের শিক্ষার জন্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নিজের ব্যবহৃত জার্সি ও ক্যাপ দান করলেন তিনি। একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এই জিনিসগুলি নিলামে তোলা হয়েছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে একটি পাঁচতারা হোটেলে বৈঠকের পর বিরাট কোহলি নিজের স্বাক্ষর করা টি-শার্ট ও ক্যাপ তুলে দেন সংস্থার পূর্ব ভারতের প্রধান এবং সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ দেবব্রত মণ্ডলের হাতে। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে মুম্বইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে এই জিনিসগুলির নিলাম শুরু হয়েছে।এই নিলাম থেকে প্রাপ্ত অর্থ শুধু সুন্দরবন নয়, সারা ভারতের বিভিন্ন এলাকার দুঃস্থ ও অসহায় শিশুদের শিক্ষার জন্য ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষার কাজেও এই অর্থ ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তৃপক্ষ।
বিরাট কোহলির ঐতিহাসিক মাইলফলক: টেস্ট সিরিজে ১২,০০০ রান অতিক্রম!
উল্লেখ্য, এটি প্রথম নয়। গত বছরও এমন মহৎ উদ্দেশ্যে নিজের জার্সি দান করেছিলেন বিরাট কোহলি। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা জার্সি তিনি দান করেছিলেন একই সংস্থাকে।দেবব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন, “বিরাট একজন খুব ভালো মনের মানুষ। সারা দেশের পাশাপাশি সুন্দরবনের দুঃস্থ-অসহায় ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য তিনি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি চিন্তিত এখানকার পরিবেশ নিয়েও। তাই বারে বারে সুন্দরবনের মানুষের পাশে দাঁড়াতে এভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। আগামীতে সুন্দরবনে আসার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন বিরাট।” সুন্দরবন হল পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, যা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত। এটি ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও কুমিরসহ বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীরা বাস করে।কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবন বিপন্ন।
ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় এখানকার স্কুল ভেঙে যায়, যা শিশুদের শিক্ষার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিদ্যুৎ ও পরিষ্কার পানির অভাব এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।এছাড়া দারিদ্র্য, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা, কাজের সুযোগের অভাব ইত্যাদি কারণে এখানে শিশুদের স্কুলছুটের হার বেশি। বিশেষ করে ১২-১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এই হার উচ্চ। মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিষ্কার শৌচাগার ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের অভাব একটি বড় সমস্যা।ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার পর ছেলেদের স্কুলছুটের হারও বেড়েছে। লবণাক্ত জলের অনুপ্রবেশে কৃষিজমি নষ্ট হওয়ায় অনেক পুরুষ কাজের সন্ধানে শহরে বা অন্য দেশে চলে যান। এতে পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয় এবং শিশুরা স্কুলছুট হয়।
এই পরিস্থিতিতে বিরাট কোহলির এই উদ্যোগ সুন্দরবনের শিশুদের শিক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাঁর দানকৃত জিনিসের নিলাম থেকে প্রাপ্ত অর্থ এই অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণে সাহায্য করবে।বিরাট কোহলির এই উদ্যোগের ফলে সুন্দরবনের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে দেশের ও বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষিত হবে বলে আশা করা যায়। একজন বিখ্যাত ক্রিকেটারের এই উদ্যোগ অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করতে পারে সুন্দরবনের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে।তবে শুধু দান নয়, সুন্দরবনের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কার্যক্রম প্রয়োজন। সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ব্যবস্থার উন্নতি করা সম্ভব।সুন্দরবন শুধু ভারতের নয়, বিশ্বের একটি অমূল্য সম্পদ।
২০১৯ সালে UNESCO এটিকে World Heritage Site হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর কারণ হল এখানকার অনন্য জৈববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত গুরুত্ব।সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হওয়ার পাশাপাশি একটি অত্যন্ত উৎপাদনশীল প্রাকৃতিক পরিবেশতন্ত্র। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বন ও জলপথ যা বিপন্ন প্রজাতিসহ বিশাল সংখ্যক প্রাণীর আবাসস্থল।সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা অনন্য। তারা জলে-স্থলে উভয় পরিবেশেই বেঁচে থাকতে সক্ষম। এরা দীর্ঘ দূরত্ব সাঁতার কাটতে পারে এবং মাছ, জলের গোসাপ এমনকি কাঁকড়াও খেতে পারে।
এছাড়া সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন স্থানীয় মানুষদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার উৎস। কাঠ ও মধু সংগ্রহ, মাছ ধরা ও চিংড়ি চাষ এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। কিন্তু সুন্দরবনের এই গুরুত্ব ও সৌন্দর্যের কারণে অবৈধ রিয়েল এস্টেট ব্যবসা এখানে বেড়ে চলেছে। এসব অবৈধ নির্মাণ প্রায়ই ম্যানগ্রোভ বনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেক সময় আদালতকে হস্তক্ষেপ করে এসব অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সুন্দরবন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল এলাকা। এর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন শুধু ভারতের নয়, সমগ্র বিশ্বের দায়িত্ব। বিরাট কোহলির মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের উদ্যোগ এই লক্ষ্যে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।তবে এর পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষা, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, টেকসই জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি – এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি।পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন সুন্দরবনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ তারাই এই অঞ্চলের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।বিরাট কোহলির এই উদ্যোগের মতো আরও বেশি সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রম প্রয়োজন। বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান তাদের CSR (Corporate Social Responsibility) তহবিল থেকে সুন্দরবনের উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ করতে পারে।
এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি সম্ভব হবে।সুন্দরবনের জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এখানে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে। এতে স্থানীয় প্রজাতি ও পরিবেশতন্ত্র সম্পর্কে আরও ভালো জ্ঞান অর্জন সম্ভব হবে।পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন সুন্দরবনের অর্থনৈতিক উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি অবশ্যই পরিবেশবান্ধব ও টেকসই হতে হবে। ইকো-টুরিজম প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে যাতে পর্যটকরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানতে পারেন।
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে বিরাট কোহলির উদ্যোগের মতো আরও বেশি প্রচেষ্টা প্রয়োজন। স্কুল ভবন নির্মাণ ও মেরামত, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল শিক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ – এসব কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য বৃত্তি প্রদান করা যেতে পারে।স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের জন্য মোবাইল স্বাস্থ্য ক্লিনিক চালু করা যেতে পারে। এছাড়া টেলিমেডিসিন সেবা চালু করলে দূরবর্তী এলাকার মানুষও ভালো চিকিৎসা পাবেন। মহিলা ও শিশু স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন:
১. উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও শক্তিশালীকরণ