Online visa check 2025: বিদেশ যাত্রার যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়ার পর সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো – আপনার ভিসার অবস্থা। অনেক সময় আমরা দালাল বা ট্রাভেল এজেন্সির উপর নির্ভর করি এবং ভিসা প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে থাকি। কিন্তু জানেন কি, আপনি নিজেই আপনার পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে বিভিন্ন দেশের ভিসা চেক করতে পারেন? হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন! আধুনিক প্রযুক্তির কারণে এখন ঘরে বসেই, মাত্র কয়েক মিনিটে আপনি আপনার ভিসার সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারেন।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণ করে থাকে। তাদের মধ্যে অনেকেই দালালদের মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করে, যা অনেক সময় নকল ভিসার ঝুঁকি নিয়ে আসে। নকল ভিসা দিয়ে কোনো দেশে গেলে আপনি আইনি জটিলতা ও হয়রানির শিকার হতে পারেন। তাই বিদেশ যাওয়ার আগে আপনার ভিসা সঠিক কিনা তা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা চেক করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ভিসা চেক করার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনার ভিসা আসলেই বৈধ। তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ১০.৩ মিলিয়ন ভিসা আবেদনের মধ্যে মাত্র ৮.৪ মিলিয়ন আবেদন অনুমোদিত হয়। অর্থাৎ, প্রায় ২ মিলিয়ন আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। এই অবস্থায় আপনার ভিসা অনুমোদিত হয়েছে কিনা তা জানা অত্যন্ত জরুরি।
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা চেক করার সুবিধাসমূহ:
- দালালের উপর নির্ভরতা কমায়
- ভিসার বৈধতা নিশ্চিত করে
- অর্থ সাশ্রয় করে (১০০-১০০০ টাকার সেবা মূল্য এড়ানো যায়)
- সময় বাঁচায়
- বিদেশ যাত্রার আগে মানসিক প্রশান্তি দেয়
বিভিন্ন দেশের ভিসা চেক করার পদ্ধতি
আমি প্রবাসী অ্যাপ ব্যবহার করে ভিসা চেক
বর্তমানে সবচেয়ে সহজ উপায় হল ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা। এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে উপলব্ধ এবং এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো দেশের ভিসা যাচাই করতে পারেন।
আমি প্রবাসী অ্যাপ দিয়ে ভিসা চেক করার ধাপসমূহ:
- প্রথমে গুগল প্লে স্টোরে যান এবং ‘আমি প্রবাসী’ লিখে সার্চ করুন
- অ্যাপটি ইনস্টল করে একাউন্ট তৈরি করুন (একাউন্ট তৈরিতে কোন টাকার প্রয়োজন নেই)
- আপনার একাউন্টে লগইন করার পর ‘ভিসা যাচাইকরণ’ অপশনে ক্লিক করুন
- ‘স্টার্ট’ বাটনে ক্লিক করুন
- আপনার জন্ম তারিখ দিন
- ফরেন আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার বা পাসপোর্ট নাম্বার দিন
- সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন
এইভাবে আপনি যেকোনো দেশের ভিসা যাচাই করতে পারবেন। উল্লেখ্য, এই অ্যাপটি দিয়ে শুধু নিজের নয় বরং বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের ভিসাও চেক করা যায়।
মালয়েশিয়া ভিসা চেক করার পদ্ধতি
মালয়েশিয়ায় প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ কাজের উদ্দেশ্যে যায়। মালয়েশিয়া ভিসা মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে – নরমাল বা কলিং ভিসা এবং ই-ভিসা। দুই ধরনের ভিসাই আপনি অনলাইনে যাচাই করতে পারেন।
মালয়েশিয়া নরমাল ভিসা চেক করার ধাপসমূহ:
- প্রথমে eservices.imi.gov.my ওয়েবসাইটে যান
- No Passport ঘরে আপনার পাসপোর্ট নাম্বার দিন
- জাতীয়তা হিসেবে বাংলাদেশী সিলেক্ট করুন
- Carian বাটনে ক্লিক করুন
যদি আপনি আপনার নাম এবং জন্ম তারিখ দেখতে পান, তাহলে বুঝবেন আপনার ভিসাটি বৈধ।
মালয়েশিয়া ই-ভিসা চেক করার ধাপসমূহ:
- Malaysia e-visa Status পেইজ ভিজিট করুন
- আপনার পাসপোর্ট নম্বর দিন
- অনলাইন ভিসা আবেদন কপি থেকে প্রাপ্ত Sticker Number দিন
- ক্যাপচা কোড পূরণ করুন
- Check বাটনে ক্লিক করুন
এর মাধ্যমে আপনি আপনার ই-ভিসার সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন।
ভারতীয় ভিসা চেক করার পদ্ধতি
বাংলাদেশি পাসপোর্ট ধারকদের জন্য ভারতে যাওয়া একটি জনপ্রিয় বিকল্প। ভারতীয় ভিসা চেক করার জন্য আপনি ভারতীয় ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (IVAC) এর ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন।
ভারতীয় ভিসা চেক করার ধাপসমূহ:
- ভারতীয় ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার ওয়েবসাইটে যান
- ভিসা ট্র্যাক অ্যাপ্লিকেশন বিভাগে যান
- আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন পাসপোর্ট নম্বর, পুরো নাম এবং জন্ম তারিখ দিন
- পাসপোর্টের অতিরিক্ত তথ্য যেমন ইস্যু তারিখ, মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ এবং পাসপোর্টের ধরন দিন
- ক্যাপচা কোড সম্পূর্ণ করুন
- সাবমিট বা ভেরিফাই বাটনে ক্লিক করুন
- প্রদর্শিত তথ্য পর্যালোচনা করে আপনার ভিসার অবস্থা নিশ্চিত করুন
সৌদি আরবের ভিসা চেক করার পদ্ধতি
সৌদি আরবে ওমরাহ, হজ্জ বা কাজের জন্য অনেক বাংলাদেশি যান। আপনি আমি প্রবাসী অ্যাপ ব্যবহার করে সৌদি আরবের ভিসা চেক করতে পারেন।
সৌদি ভিসা চেক করার ধাপসমূহ:
- আমি প্রবাসী অ্যাপে লগইন করুন
- ভিসা যাচাইকরণ অপশনে ক্লিক করুন
- সৌদি আরব অপশনে ক্লিক করুন
- ভাষা সেটিং থেকে ইংরেজি নির্বাচন করুন (থ্রি লাইন আইকনে ক্লিক করে)
- ভিসা ইস্যু নাম্বার, স্পন্সর আইডি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিন
- সার্চ বাটনে ক্লিক করুন
বিভিন্ন দেশের ভিসা যাচাইয়ের সময় সতর্কতা
ভিসা যাচাই করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- নির্ভুল তথ্য দিন: পাসপোর্ট নম্বর, জন্ম তারিখ সহ সব তথ্য সতর্কতার সাথে দিন, একটি ভুল অক্ষরও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে
- অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন: শুধুমাত্র সরকারি বা আধা-সরকারি ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন
- স্ক্রিনশট রাখুন: ভিসা যাচাইয়ের পর স্ক্রিনশট বা প্রিন্ট নিয়ে রাখুন, পরবর্তীতে প্রমাণ হিসেবে প্রয়োজন হতে পারে
- নিয়মিত চেক করুন: ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াকালীন সময়ে নিয়মিত স্ট্যাটাস চেক করুন
- সাহায্য নিন: কোনো সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট এম্বাসি বা হাই কমিশনের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন
ভিসা রিজেকশন হলে কী করবেন
যদি আপনার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়, তাহলে:
- প্রত্যাখ্যানের কারণ জানার চেষ্টা করুন
- প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহ করুন
- ভিসা আবেদন পুনরায় জমা দেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
- যদি আপনি মনে করেন আপনার ভিসা অন্যায়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তাহলে আপনি আপিলের জন্য আবেদন করতে পারেন
আমি প্রবাসী অ্যাপের ব্যবহার সম্পর্কে আরও তথ্য
আমি প্রবাসী অ্যাপ শুধুমাত্র ভিসা যাচাইকরণের জন্যই নয়, বরং প্রবাসীদের জন্য আরও বহু সেবা প্রদান করে। এই অ্যাপে একাউন্ট খোলা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, তবে বিএমটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য কিছু ফি প্রযোজ্য হতে পারে।
অ্যাপটি ডাউনলোড করে একাউন্ট করার পর, আপনি কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করে বিশ্বের যেকোনো দেশের ভিসা যাচাই করতে পারেন। এটি আপনাকে দালালদের উপর নির্ভরতা কমাতে এবং পয়সা সাশ্রয় করতে সাহায্য করবে।
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা চেক করা একটি অত্যন্ত সহজ প্রক্রিয়া, যা আপনাকে সময়, অর্থ এবং সম্ভাব্য হয়রানি থেকে বাঁচাতে পারে। বিদেশ যাত্রার আগে আপনার ভিসা যাচাই করা একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া, বিশেষ করে যদি আপনি কোনো দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করে থাকেন। আমি প্রবাসী অ্যাপ, সরকারি ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে আপনি নিজেই খুব সহজেই আপনার ভিসা যাচাই করতে পারেন। নিয়মিত ভিসা স্ট্যাটাস চেক করুন এবং নিশ্চিন্তে বিদেশ ভ্রমণ করুন।
আশা করি এই নির্দেশিকা আপনাকে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা চেক করতে সাহায্য করবে। আপনার ভিসা যাচাই করার সময় কোনো সমস্যা হলে, অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা ভিসা প্রসেসিং সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করুন। সফল বিদেশ ভ্রমণের জন্য শুভকামনা!