বিশ্বভারতীর দরজা পর্যটকদের জন্য খুলে গেল: ছয় বছর পর শান্তিনিকেতনে নতুন অধ্যায়

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছয় বছর পর আবারও পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বন্ধ হওয়া এই ঐতিহাসিক স্থানটি সম্প্রতি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই…

Srijita Chattopadhay

 

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছয় বছর পর আবারও পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বন্ধ হওয়া এই ঐতিহাসিক স্থানটি সম্প্রতি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান আবারও বিশ্ববাসীর কাছে উন্মুক্ত হতে চলেছে।

শান্তিনিকেতনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং ইউনেস্কোর স্বীকৃতি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করেন। এটি শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত নিদর্শন। ২০২৩ সালে ইউনেস্কো এটিকে “লিভিং হেরিটেজ ইউনিভার্সিটি” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতি শুধু শান্তিনিকেতনের ঐতিহাসিক গুরুত্বকেই তুলে ধরে না, বরং এটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের দিকেও গুরুত্ব প্রদান করে।

পর্যটকদের জন্য পুনরায় উন্মুক্ত হওয়া
বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে অবস্থিত শান্তিনিকেতন গৃহ, যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬২ সালে ক্রয় করেছিলেন, পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। এই বাড়িটি ঠাকুর পরিবারের ইতিহাস এবং তাদের জীবনধারার একটি চিত্র তুলে ধরে। তবে, ইউনেস্কোর নির্দেশিকা মেনে পর্যটকদের প্রবেশ সীমিত রাখা হবে এবং নির্ধারিত সময়ে গ্রুপ আকারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি, প্রশিক্ষিত গাইডদের মাধ্যমে পর্যটকদের তথ্য প্রদান নিশ্চিত করা হবে।

ক্যাম্পাস রক্ষণাবেক্ষণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিশ্বভারতীর প্রশাসন জানিয়েছে যে ক্যাম্পাসের মূল এলাকা রক্ষা করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নতুন কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হবে না এবং বিদ্যমান কাঠামোগুলির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া, পর্যটকদের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ পথ নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে ক্যাম্পাসের পরিবেশ এবং স্থাপত্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
শান্তিনিকেতনের স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ এবং শিক্ষার পদ্ধতি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। তবে, তারা এটাও মনে করেন যে শান্তিনিকেতনের জীবনধারা এবং তার নান্দনিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বভারতীর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এবং পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার ফলে বিশ্বভারতী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বেশি পরিচিতি লাভ করবে। এটি কেবলমাত্র পর্যটকদের আকর্ষণ করবে না, বরং গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্যও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে, এটি ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও প্রচারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এই সিদ্ধান্ত শান্তিনিকেতনকে নতুনভাবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

About Author
Srijita Chattopadhay

সৃজিতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক। তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি তার লেখা দ্বারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি তুলে ধরতে সদা উদ্যমী। সৃজিতার লেখার ধারা মূলত সাহিত্য, সমাজ এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন দিককে ঘিরে আবর্তিত হয়, যেখানে তিনি তার গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বিশ্লেষণী দক্ষতার পরিচয় দেন। তাঁর নিবন্ধ ও প্রতিবেদনগুলি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যা তার বস্তুনিষ্ঠতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় বহন করে। সৃজিতা তার কর্মজীবনে ক্রমাগত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে বদ্ধপরিকর, যা তাকে বাংলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।