কোন ভিটামিনের অভাবে উচ্চতা বাড়ে না – গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ

Vitamins affecting Height growth: ভিটামিন ডি'র অভাবে শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না পেলে শিশুদের স্বাভাবিক উচ্চতা…

Debolina Roy

 

Vitamins affecting Height growth: ভিটামিন ডি’র অভাবে শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না পেলে শিশুদের স্বাভাবিক উচ্চতা বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এটি শুধু খর্বকায় শিশুদের ক্ষেত্রেই নয়, স্বাভাবিক উচ্চতার শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

গবেষণার ফলাফল

জাপানের Environment and Children’s Study (JECS) থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, ৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যাদের রক্তে ভিটামিন ডি’র মাত্রা ১০ ng/mL এর কম, তাদের উচ্চতা বৃদ্ধি বছরে গড়ে ০.৬ সেন্টিমিটার কম হয়। এই গবেষণায় মোট ৩,৬২৪ জন শিশুর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছিল।অন্য একটি বড় আকারের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের রক্তে ২৫-হাইড্রক্সিভিটামিন ডি (25(OH)D) এর মাত্রা বেশি থাকলে তাদের উচ্চতা বৃদ্ধির হার বেশি হয়। এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে:

  • ছেলেদের ক্ষেত্রে উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য অপটিমাম ভিটামিন ডি’র মাত্রা হল প্রায় ৫০ nmol/L
  • মেয়েদের ক্ষেত্রে এই মাত্রা হল প্রায় ৪০ nmol/L

ভিটামিন ডি’র গুরুত্ব

ভিটামিন ডি শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। এটি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। ফলে এটি শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।ভিটামিন ডি’র অভাবে শিশুদের মধ্যে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে:

  • উচ্চতা বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া
  • হাড়ের দুর্বলতা
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
  • চিড়চিড়ে মেজাজ
  • দুর্বলতা ও শক্তির অভাব

ভিটামিন ডি’র উৎস

শরীরে ভিটামিন ডি’র প্রধান উৎস হল সূর্যের আলো। এছাড়া কিছু খাবারেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়:

  • মাছ (যেমন সালমন, টুনা)
  • ডিমের কুসুম
  • দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
  • ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার

অপর্যাপ্ত সূর্যালোকের প্রভাব

গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমাণে বাইরে যায় না বা সূর্যালোক পায় না, তাদের মধ্যে ভিটামিন ডি’র অভাব বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে শীতকালে যখন সূর্যালোকের তীব্রতা কম থাকে, তখন এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি কমানোর ১০টি কার্যকর উপায়

সুপারিশ

গবেষকরা নিম্নলিখিত সুপারিশগুলি করেছেন:

  1. শিশুদের নিয়মিত বাইরে নেওয়া এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক নিশ্চিত করা
  2. ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো
  3. প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দেওয়া

Dr. Toshiaki Tanaka, গবেষণার প্রধান লেখক বলেন, “আমাদের গবেষণার ফলাফল দেখিয়েছে যে, শিশুদের স্বাভাবিক উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য সিরাম ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি যাদের উচ্চতা স্বাভাবিক তাদের ক্ষেত্রেও। আমাদের ফলাফল শিশুদের, এমনকি শীতকালেও, পর্যাপ্ত সূর্যালোক নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।”

অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের প্রভাব

যদিও ভিটামিন ডি’র অভাব উচ্চতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের অভাবও শিশুদের বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন:

  1. আয়রন: তীব্র আয়রনের অভাব উচ্চতা বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে।
  2. জিংক: জিংকের অভাবে বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে, ক্ষুধামান্দ্য দেখা দিতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
  3. ভিটামিন B12: এর অভাবে শিশুদের বিকাশজনিত সমস্যা, চিড়চিড়ে মেজাজ, দুর্বলতা ও শক্তির অভাব দেখা দিতে পারে।
  4. ভিটামিন C: এর তীব্র অভাবে হাড়ের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি

The Lancet Global Health জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী প্রাক-বিদ্যালয় বয়সী শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের মধ্যে পুষ্টি উপাদানের অভাব ব্যাপক। এই গবেষণায় দেখা গেছে:

সমাধানের উপায়

শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ডি সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের অভাব দূর করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:

  1. পুষ্টিকর খাবার: বৈচিত্র্যময় ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো
  2. সূর্যালোক: নিয়মিত সূর্যালোক নিশ্চিত করা
  3. সাপ্লিমেন্ট: প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে পুষ্টি সাপ্লিমেন্ট দেওয়া
  4. সচেতনতা: অভিভাবকদের মধ্যে পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা
  5. নিয়মিত পরীক্ষা: শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো
  6. সরকারি নীতি: খাদ্য fortification সহ বিভিন্ন সরকারি নীতি গ্রহণ করা

ভিটামিন ডি’র অভাব শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি শুধু খর্বকায় শিশুদের ক্ষেত্রেই নয়, স্বাভাবিক উচ্চতার শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পর্যাপ্ত সূর্যালোক, পুষ্টিকর খাবার এবং প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। অভিভাবক, চিকিৎসক এবং নীতি নির্ধারকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করা যেতে পারে।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।