Vitamins health benefits food sources: আমাদের শরীরের সুস্থতা ও সঠিক কার্যক্ষমতার জন্য ১৩টি অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন প্রয়োজন। এই ভিটামিনগুলি আমাদের দৈনন্দিন খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়। প্রতিটি ভিটামিনের আলাদা কাজ রয়েছে এবং এগুলি বিভিন্ন খাবারে পাওয়া যায়। আসুন জেনে নেই কোন ভিটামিন কী কাজ করে এবং কোন খাবারে পাওয়া যায়।ভিটামিন A: এটি আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি, ত্বক ও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া, পালং শাক, কাঁঠাল ইত্যাদি সবজি ও ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A পাওয়া যায়। এছাড়া মাছ, ডিম ও দুধজাতীয় খাবারেও এই ভিটামিন রয়েছে।
ভিটামিন B কমপ্লেক্স:
B1, B2, B3, B5, B6, B7, B9 ও B12 – এই ৮টি ভিটামিন মিলে B কমপ্লেক্স গঠিত হয়। এগুলি আমাদের শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া, স্নায়ুতন্ত্র ও রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, সবুজ শাকসবজি, ডাল ইত্যাদিতে B কমপ্লেক্স ভিটামিন পাওয়া যায়।
শুষ্ক ত্বকের জন্য দায়ী ৫টি ভিটামিনের অভাব – আপনার ত্বক কি শুকনো ও নিষ্প্রভ?
ভিটামিন C:
এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। লেবু, কমলা, আমলকী, পেঁপে, টমেটো, ব্রকলি ইত্যাদি ফল ও সবজিতে প্রচুর ভিটামিন C থাকে।
ভিটামিন D:
এটি আমাদের হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে আমাদের ত্বকে ভিটামিন D তৈরি হয়। এছাড়া ডিমের কুসুম, মাছ ও দুধেও এই ভিটামিন পাওয়া যায়।
ভিটামিন E:
এটিও একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষ ক্ষতি রোধ করে। বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, পালং শাক, ব্রকলি ইত্যাদিতে ভিটামিন E পাওয়া যায়।
ভিটামিন K:
এটি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। পালং শাক, ব্রকলি, শিম, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজিতে প্রচুর ভিটামিন K থাকে।
এই ১৩টি ভিটামিনের প্রত্যেকটিরই শরীরে নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। যেমন ভিটামিন A আমাদের দৃষ্টিশক্তি ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, ভিটামিন C রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ভিটামিন D হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, ভিটামিন E কোষ ক্ষতি রোধ করে, ভিটামিন K রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।B কমপ্লেক্স ভিটামিনগুলি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে। যেমন ভিটামিন B1 স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে, B2 শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে, B3 কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, B5 হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে, B6 প্রোটিন বিপাকে সাহায্য করে, B7 চুল ও নখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, B9 শিশুর জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে এবং B12 রক্ত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
প্রতিদিনের খাবারে বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করলে এই সব ভিটামিন সহজেই পাওয়া যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের ফলিক অ্যাসিড (ভিটামিন B9) সাপ্লিমেন্ট নেওয়া প্রয়োজন।ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ভিটামিন A এর অভাবে রাতকানা হতে পারে, ভিটামিন C এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হতে পারে, ভিটামিন D এর অভাবে রিকেটস হতে পারে, ভিটামিন B12 এর অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুষম খাবার খেলে সাধারণত ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে যেমন গর্ভাবস্থায়, বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বা কিছু রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।সুস্থ থাকতে হলে শুধু ভিটামিন নয়, অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, খনিজ লবণ ইত্যাদিও প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। ফল, সবজি, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ – এই সব খাবার নিয়মিত খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
শীতে সকালের রোদে ভিটামিন ডি: জেনে নিন সেরা সময়
উপসংহারে বলা যায়, সুস্থ ও সবল শরীরের জন্য ১৩টি ভিটামিনের যথাযথ সেবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে। সুষম খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা এই ভিটামিনগুলি সহজেই পেতে পারি। তবে কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।