পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পরিদৃশ্যে একটি বিস্ময়কর বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে বামপন্থী দলগুলো বড় বড় সমাবেশ ও মিছিল করতে সক্ষম হচ্ছে, অন্যদিকে নির্বাচনে তাদের ফলাফল হতাশাজনক। এই বিরোধাভাস বামপন্থী রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে।
বামপন্থী দলগুলো এখনও বড় সমাবেশ আয়োজন করতে সক্ষম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের আয়োজিত বিভিন্ন সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ব্রিগেডে বাম ছাত্র যুব সংগঠন সমাবেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল। এই ধরনের সমাবেশগুলো বামপন্থী দলগুলোর সংগঠন ক্ষমতা এবং জনগণের মধ্যে তাদের আবেদনের প্রমাণ দেয়।
জনগণের এই সমাবেশে যোগদানের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
যদিও বামপন্থী দলগুলো বড় সমাবেশ করতে পারে, কিন্তু এই জনসমর্থন ভোটে রূপান্তরিত হচ্ছে না। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দিন এগোনোর সাথে সাথে রক্তক্ষরণ বেড়েছে। ইস্যু ভিত্তিক সমর্থন পেলেও অন্যান্য দলের প্রার্থী তুলনায় ভোটবাক্স গড়ের মাঠে পরিণত হয়েছে।। এই ফলাফল বামপন্থী দলগুলোর জন্য উদ্বেগজনক, কারণ এটি তাদের রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রাসঙ্গিকতার অবনতি নির্দেশ করে।
ভোটারদের মনোভাব পরিবর্তনের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:
বামপন্থী দলগুলো বর্তমানে তাদের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গভীর সংকটে রয়েছে। সমকালীন ইস্যুগুলোতে তাদের অবস্থান প্রায়শই স্পষ্ট নয় বা জনগণের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উদাহরণস্বরূপ, ডিজিটাল অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, বা বৈশ্বিক বাণিজ্যের মতো বিষয়গুলোতে তাদের অবস্থান প্রায়শই অস্পষ্ট বা পুরনো ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
বিশেষ করে যুব সমাজের কাছে বামপন্থী আদর্শের আবেদন কমে যাচ্ছে। কিছুদিন আগের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৮-৩৫ বছর বয়সী মাত্র ৩০% ভোটার বামপন্থী দলগুলোর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে। এটি একটি উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান, কারণ যুব সমাজই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
বর্তমান সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বামপন্থী আদর্শের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। যদিও সামাজিক ন্যায়বিচার, শ্রমিকের অধিকার, ও সমতার মতো মূল আদর্শগুলো এখনও প্রাসঙ্গিক, কিন্তু এগুলোকে আধুনিক প্রেক্ষাপটে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।
উদাহরণস্বরূপ, শ্রমিকের অধিকারের ধারণাকে গিগ ইকোনমি ও রিমোট ওয়ার্কের যুগে কীভাবে প্রয়োগ করা যায়, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। একইভাবে, পরিবেশ সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য নতুন কৌশল প্রয়োজন।
বামপন্থী দলগুলোর জন্য ভবিষ্যতে টিকে থাকতে হলে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:
বামপন্থী রাজনীতি এখন সন্ধিক্ষণে। মিটিং-মিছিলে জনসমর্থন থাকলেও ভোটবাক্সে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে হলে বামপন্থী দলগুলোকে নিজেদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং সময়োপযোগী পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই তারা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিদৃশ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
মন্তব্য করুন