How To Start A Non Profit: যদি মনে করেন সমাজের জন্য কিছু করবেন, তাহলে একটা এনজিও (NGO) খুলতে পারেন। কিন্তু কিভাবে খুলবেন, কি কি কাগজপত্র লাগবে, সেই সব নিয়ে চিন্তা হচ্ছে? চিন্তা নেই, আমি আছি আপনার সাথে! এই “ব্লগ পোষ্ট”-এ আমরা একদম জলের মতো করে বুঝিয়ে দেবো, যাতে আপনার এনজিও খোলার স্বপ্নটা সত্যি হয়।
এনজিও-র পুরো নাম হল নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন (Non-Governmental Organization)। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এটা এমন একটা সংস্থা যা সরকার চালায় না। কিছু মানুষ একসাথে হয়ে সমাজের ভালোর জন্য, মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করার উদ্দেশ্যে এই সংস্থা তৈরি করে। এনজিও সাধারণত সমাজসেবা, উন্নয়নমূলক কাজ, আর জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে।
অনেকে মনে করেন, শুধু গরিবদের সাহায্য করাই এনজিও-র কাজ। কিন্তু আসলে এনজিও আরও অনেক বড় পরিসরে কাজ করে। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করে, সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
ভারতে এনজিও-রা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। আমাদের দেশে এখনো অনেক সমস্যা আছে, যেগুলো সরকার একা সমাধান করতে পারে না। সেখানে এনজিও-রা এগিয়ে এসে সাহায্য করে।
সরকারও এনজিও-দের অনেক সাহায্য করে। বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অনুদান দেয়, কাজের সুযোগ করে দেয়। ভারতে প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন এনজিও আছে, যা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভারতে মূলত তিন ধরনের এনজিও দেখা যায়:
ট্রাস্ট হল এমন একটা সংস্থা, যেখানে কিছু মানুষ সম্পত্তি বা টাকা দান করেন এবং সেই সম্পত্তি বা টাকা সমাজের ভালোর জন্য ব্যবহার করা হয়। ট্রাস্ট তৈরি করতে কমপক্ষে ২ জন সদস্য লাগে। “Indian Trusts Act, 1882” অনুযায়ী ট্রাস্ট পরিচালিত হয়।
সোসাইটি হল এমন একটা সংস্থা, যেখানে কিছু মানুষ একসাথে হয়ে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। সোসাইটি রেজিস্টার করতে কমপক্ষে ৭ জন সদস্য লাগে। “Societies Registration Act, 1860” অনুযায়ী সোসাইটি পরিচালিত হয়।
সেকশন এইট কোম্পানি হল এমন একটা কোম্পানি, যা লাভ করার জন্য নয়, বরং সমাজসেবার জন্য তৈরি করা হয়। “Companies Act, 2013” অনুযায়ী এই কোম্পানি চলে। অন্য কোম্পানির মতো হলেও, এর কিছু বিশেষ নিয়ম আছে। এই কোম্পানি তৈরি করতে ডিজিটাল সিগনেচার সার্টিফিকেট (DSC) ও ডিরেক্টর আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (DIN) লাগে।
এনজিও খুলতে গেলে কিছু জরুরি কাগজপত্র লাগে। নিচে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:
এনজিও-র সদস্যদের কিছু আইডেন্টিটি ডকুমেন্টস (Identity Documents) জমা দিতে হয়। যেমন:
এছাড়াও, সদস্যদের ঠিকানার প্রমাণপত্রও (Address Proof) জমা দিতে হয়। যেমন:
সেকশন এইট কোম্পানির জন্য এই দুটো ডকুমেন্ট খুব জরুরি।
ট্রাস্ট ডিড হল ট্রাস্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। এখানে ট্রাস্টের উদ্দেশ্য, সম্পত্তি, নিয়মকানুন, ট্রাস্টিদের ক্ষমতা – এই সব কিছু বিস্তারিতভাবে লেখা থাকে। ট্রাস্ট ডিড রেজিস্টার করতে হয়।
সোসাইটির জন্য বোর্ড রেজোলিউশন দরকার। এখানে সোসাইটির সদস্যরা একটা মিটিং-এ কিছু সিদ্ধান্ত নেন, যেমন কাকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হবে, কিভাবে কাজ করা হবে, ইত্যাদি। এই সিদ্ধান্তের লিখিত রূপ হল বোর্ড রেজোলিউশন।
এনজিও-র অফিসের ঠিকানা দেওয়ার জন্য কিছু ডকুমেন্ট লাগবে। যেমন:
এখানে একটা টেবিল দেওয়া হল, যেখানে কোন ধরনের এনজিও-র জন্য কী কী ডকুমেন্ট লাগবে, তার একটা তালিকা থাকবে:
ডকুমেন্টের নাম | ট্রাস্ট (Trust) | সোসাইটি (Society) | সেকশন ৮ কোম্পানি (Section 8 Company) |
---|---|---|---|
সদস্যদের পরিচয়পত্র ও ঠিকানার প্রমাণ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ |
মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন (MOA) | না | হ্যাঁ | হ্যাঁ |
আর্টিকেলস অফ অ্যাসোসিয়েশন (AOA) | না | প্রযোজ্য নয় | হ্যাঁ |
ট্রাস্ট ডিড | হ্যাঁ | না | না |
বোর্ড রেজোলিউশন | না | হ্যাঁ | না |
অফিসের ঠিকানার প্রমাণ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ |
এনজিও রেজিস্টার করার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো:
প্রথম কাজ হল একটা ভালো নাম পছন্দ করা। নামটা এমন হওয়া উচিত, যা সহজে মনে রাখা যায় এবং আপনার এনজিও-র উদ্দেশ্য বোঝাতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, একই নামে অন্য কোনো এনজিও যেন আগে থেকে রেজিস্টার করা না থাকে। নাম রেজিস্টার করার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারেন।
এনজিও রেজিস্টার করার জন্য কিছু সদস্যের দরকার হয়। ট্রাস্টের জন্য কমপক্ষে ২ জন, সোসাইটির জন্য ৭ জন এবং সেকশন এইট কোম্পানির জন্য ২ জন সদস্য লাগে। সদস্যদের যোগ্যতা সম্পর্কে বিশেষ কোনো নিয়ম নেই, তবে তাদের সমাজসেবার মানসিকতা থাকা জরুরি।
MOA, AOA অথবা ট্রাস্ট ডিড বানানোর সময় খুব সতর্ক থাকতে হয়। এই ডকুমেন্টগুলোতে আপনার এনজিও-র উদ্দেশ্য, নিয়মকানুন, সদস্যদের অধিকার – সবকিছু স্পষ্টভাবে লিখতে হয়। এই কাজের জন্য একজন আইনজীবীর (Lawyer) সাহায্য নিতে পারেন।
সব কাগজপত্র তৈরি হয়ে গেলে, আপনাকে রেজিস্ট্রেশন অফিসের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন জমা দিতে হবে। অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ থাকলে, সেটা সবচেয়ে ভালো। এছাড়া, আপনি সরাসরি অফিসে গিয়েও আবেদন জমা দিতে পারেন।
আবেদন জমা দেওয়ার পরে, রেজিস্ট্রেশন অফিস আপনার কাগজপত্র ভালো করে দেখবে। যদি কোনো ভুল থাকে, তাহলে আপনাকে সেটা সংশোধন করতে বলা হতে পারে। সব কিছু ঠিক থাকলে, আপনার আবেদন অ্যাপ্রুভ (Approve) করা হবে।
আপনার আবেদন অ্যাপ্রুভ হলে, আপনাকে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এই সার্টিফিকেট পাওয়ার পরে, আপনার এনজিও আইনগতভাবে কাজ শুরু করতে পারবে।
১২এ (12A) ও ৮০জি (80G) সার্টিফিকেট হল ট্যাক্স ছাড় পাওয়ার জন্য জরুরি। ১২এ সার্টিফিকেট পেলে, আপনার এনজিও-র আয়ের উপর ট্যাক্স লাগবে না। আর ৮০জি সার্টিফিকেট থাকলে, যারা আপনার এনজিও-কে দান করবেন, তারাও ট্যাক্স ছাড় পাবেন।
এনজিও রেজিস্টার করতে কত দিন লাগে এবং কত খরচ হয়, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। নিচে এই বিষয়ে আলোচনা করা হলো:
সাধারণত এনজিও রেজিস্টার করতে ১০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে বেশি সময়ও লাগতে পারে। যেমন, যদি আপনার কাগজপত্র ঠিক না থাকে বা রেজিস্ট্রেশন অফিসে বেশি ভিড় থাকে, তাহলে দেরি হতে পারে।
পায়ের নতুন নখ গজাতে কত সময় লাগে? — জানুন প্রয়োজনীয় তথ্য ও যত্নের উপায়
এনজিও রেজিস্টার করতে ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফি, আইনজীবীর ফি, এবং অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত।
এখানে আরও একটা টেবিল দেওয়া হল, যেখানে এনজিও রেজিস্ট্রেশন করতে কত দিন লাগতে পারে এবং আনুমানিক খরচ কেমন হতে পারে তার একটা ধারণা দেওয়া হল:
বিষয় | আনুমানিক সময় | আনুমানিক খরচ |
---|---|---|
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া | ১০-২৫ দিন | ৫,০০০ – ২০,০০০ টাকা |
১২এ ও ৮০জি সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন | ২-৬ মাস | ২,০০০ – ১০,০০০ টাকা |
যদি আপনি সমাজসেবা করতে চান, মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান, তাহলে আর দেরি না করে আজই আপনার এনজিও রেজিস্টার করুন। সমাজের জন্য কিছু করার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। আরও তথ্যের জন্য আপনি স্থানীয় রেজিস্ট্রেশন অফিস বা কোনো অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার একটু চেষ্টা অনেক মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে। আজই আপনার এনজিও রেজিস্টার করুন এবং সমাজের জন্য কাজ শুরু করুন।
মন্তব্য করুন