সরকার লোকসভায় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪ পেশ করার পর বিরোধী দলগুলি এটিকে “মুসলিম বিরোধী” ও “সংবিধান বিরোধী” আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ফলস্বরূপ, সরকার বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বৃহস্পতিবার লোকসভায় বিলটি পেশ করেন। বিলটির উদ্দেশ্য হলো ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন সংশোধন করা এবং ওয়াকফ বোর্ডগুলির ক্ষমতা সীমিত করে সরকারি নজরদারি বাড়ানো। প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলির মধ্যে রয়েছে:
বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করে যে এই সংশোধনীগুলি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করবে এবং সংঘীয় কাঠামোর ওপর আঘাত হানবে। কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল বলেন, “এই বিল সংবিধানের ওপর মৌলিক আক্রমণ। এর মাধ্যমে তারা অমুসলিমদেরও ওয়াকফ পরিচালন পরিষদের সদস্য করার ব্যবস্থা রাখছে। এটা ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আক্রমণ।”ডিএমকে সাংসদ কনিমোঝি বলেন, “এই বিল সংখ্যালঘুদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার সংক্রান্ত ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে। এটি একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে।”
এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি অভিযোগ করেন, “আপনারা আমাকে নামাজ পড়তে বাধা দিচ্ছেন। একজন হিন্দু তার সম্পূর্ণ সম্পত্তি দান করতে পারেন, কিন্তু আমি আল্লাহর নামে দিতে পারব না।” সরকারের পক্ষ থেকে কিরেন রিজিজু জবাব দেন, “এই বিল মুসলিম বিরোধী নয়, এর উদ্দেশ্য স্বচ্ছতা আনা। আমরা কোনো ধর্মীয় সংস্থার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছি না।”তিনি আরও বলেন, “ওয়াকফ বোর্ড মাফিয়াদের দখলে চলে গিয়েছিল। আমরা সাধারণ মুসলিমদের ন্যায্য অধিকার দিতে চাই।”
বিলটি নিয়ে তীব্র বিতর্কের পর সরকার এটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। রিজিজু বলেন, “আমরা কোনো আলোচনা এড়াতে চাই না। প্রয়োজনে একটি যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে এবং বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য এই বিলটি সেখানে পাঠানো যেতে পারে।” ভারতে ওয়াকফ বোর্ড রেলওয়ে ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরে তৃতীয় বৃহত্তম জমির মালিক। ৩২টি ওয়াকফ বোর্ড দেশজুড়ে ৯.৪ লক্ষ একর জমি নিয়ন্ত্রণ করে, যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলি ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনতে পারে। তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে।সামাজিক বিশ্লেষক ড. রেহান খান বলেন, “ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে দুর্নীতি ও অপব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।”
যৌথ সংসদীয় কমিটিতে বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। কমিটি সুপারিশ করলে বিলটিতে আরও পরিবর্তন আসতে পারে। সরকার আশা করছে এর মাধ্যমে বিরোধীদের আপত্তি দূর হবে এবং একটি সর্বসম্মত বিল পাস করা যাবে।
তবে বিরোধীরা এখনও সন্দিহান। কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, “আমরা চাই যৌথ কমিটিতে সব দলের প্রতিনিধিত্ব থাকুক। বিলটির মৌলিক সমস্যাগুলি দূর না হলে আমরা এর বিরোধিতা অব্যাহত রাখব।”সামগ্রিকভাবে, ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও তীব্র হতে পারে। সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সমঝোতা হয় কিনা তা দেখার বিষয়।